স্টাফ রিপোর্টার :
রোমানিয়া পাঠানোর নামে টাকা আত্মাসাতের অভিযোগে নগরীর জিন্দাবাজারের আমিন রহমান ট্র্যাভেলসের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় ট্র্যাভেলস মালিক আমিনুর রহমান এবং তার দুই ভাই ছিদ্দিকুর রহমান ও জিয়াউর রহমানকে আসামি করা হয়েছে। দক্ষিণ সুরমার বলদি এলাকার ফখরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি গতকাল রবিবার কোতোয়ালি মডেল থানায় এই মামলা দায়ের করেন।
আমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, রোমানিয়া পাঠানোর নাম করে অন্তত ৩০০ জনের কাছ থেকে ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন তিনি।
ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন আমিন রহমান। টাকা নিলেও কাউকে ভিসা দেননি তিনি। উলটো অনেকের পাসপোর্টে জাল ভিসা লাগিয়ে প্রতারণা করেছেন তিনি।
এদিকে, রবিবার জিন্দবাজার এলাকার হক সুপার মার্কেটের আমিন ট্র্যাোভেলসের কার্যালয়ে গিয়েও প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ পাওয়া যায়। শনিবার পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি খোলা ছিলো। শনিবার এই ট্র্যাভেলসে এসে বিক্ষোভও করেন ভূক্তভোগীরা। তবে গতকাল সকাল থেকে এটি তালাবদ্ধ রয়েছে। গতকাল অনেক ভূক্তভোগি হক সুপার মার্কেটে এসে ট্র্যাভেলস বন্ধ পেয়ে ফিরে যান। প্রতিষ্ঠানটির সত্ত্বাধিকারী আমিন রহমানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।
ওই ট্র্যেভেলস এজেন্সির কাছে টাকা জমা দেয়া কয়েকজন যুবক জানান, প্রায় ৩ মাস আগে ৯০ দিনের মধ্যে রোমানিয়ায় পাঠানোর কথা বলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় ‘আমিন রহমান ট্রাভেলস’।
বিজ্ঞাপনে লেখা হয়, রোমানিয়ায় যেতে হলে ছয় লাখ টাকা লাগবে। প্রথমে বুকিং মানি হিসেবে ৫০ হাজার টাকা ও ওয়ার্ক পারমিট আসার পর দিতে হবে আরও ৫০ হাজার টাকা। বাকি পাঁচ লাখ দিতে হবে ভিসা হওয়ার পর।
এই বিজ্ঞাপন দেখে রোমানিয়ায় যেতে আগ্রহীরা লিখিত চুক্তি করে আমিন ট্র্যবভেলসকে টাকা দেন। চুক্তি অনুাযায়ী প্রথমে ৫০ হাজার ও ওয়ার্ক পারমিট আসার কথা বলে আরও ৫০ হাজার টাকা নিয়ে নেয় ট্রাভেল প্রতিষ্ঠানটি। পরবর্তী সময়ে ভিসা হয়ে যাওয়ার কথা বলে পুরো টাকাও নেওয়া হয়েছে আরও শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে।
ট্র্যাপভেলস এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলার বাদি দক্ষিন সুরমার বলদি এলাকার ফখরুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহে আমিন আমাকে জানান, আমার ভিসা হয়ে গেছে। এরপর আমি তাকে চুক্তির সব টাকা দেই। মোট ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছি তাকে। কিন্তু টাকা নেয়ার পর থেকেই তিনি লাপাত্তা হয়ে গেছেন। আমার পাসপোর্টও ফেরত দিচ্ছেন না।
ভুক্তভোগি আরেকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে রোমানিয়ায় ফ্লাইট দেওয়া শুরুর কথা বলেছিলেন ট্রাভেলসের মালিক আমিন রহমান। কিন্তু ওই দিন তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে কারও ফোন ধরেননি তিনি। বিকেল থেকে মুঠোফোন বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। এরপর তার আর খোঁজ মিলছে না। যাদের পাসপোর্টে ভিসা লাগানো হয়েছিলো সেগুলোও জাল।
জয়া হাসান নামের এক ভুক্তভোগি বলেন, আমরা দুজন মিলে তাকে ৬ লাখ টাকা দিয়েছিলেম। ২৪ তারিখে আমার ফ্লাইট হওয়ার কথা ছিলো। ফ্লাইটের কথা বলে আমাদের ঢাকায়ও নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি কিন্তু ঢাকা যাওয়ার পর থেকে আর তার খোঁজ নেই। আমার পাসপোর্টও ফেরত পাইনি। জয়া বলেন, আমিন রহমান একবার একটা হোয়াটস এপ নাম্বারে জানিয়েছেন, রিক্রুটিং এজেন্সির সাথে কিছুটা ঝামেলা হচ্ছে। ওই ঝামেলা মিটমাট করতে তিনি দুবাই গেছেন। তবে কালকে থেকে হোয়াটস অ্যাপেও পাওয়া যাচ্ছে না তাকে।
রোমানিয়া যাওয়ার জন্য এই ট্র্যাভেল এজেন্সির সাথে চুক্তি করেছিলেন সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা রুহুল আমিন। ওই এজেন্সিকে চুক্তি অনুযায়ী ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা প্রদানও করেছিলেন তিনি। ট্রাভেল এজেন্সিও চুক্তি অনুযায়ী রুহুলের পাসপোর্টে রোমানিয়ার ভিসা লাগিয়ে দেয়। এ পর্যন্ত ঠিকঠাকই ছিলো। কিন্তু বিপত্তি বাধে যখন রুহুল আমিন পরিচিত একজনের মাধ্যমে ভারতে রোমানিয়া দূতাবাসে ভিসার কপি যাছাই করতে পাঠান। দূতাবাস থেকে জানানো হয়, রুহেলের পাসপোর্টে লাগানো ভিসাটি জাল। এরপর শনিবার সিলেটে এসে ট্রাভেলস মালিক আমিন রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন রুহুল। কিন্তু তাকে আর পাচ্ছেন না।
কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, বিদেশ পাঠানোর নামে প্রতারনার অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।