কীর্তিমান পুরুষ বিমলেন্দু দাস সাধু বাবু

17

(পূর্বে প্রকাশের পর)
গোপালটিলা আখড়া: সাধু বাবু এই গোপালটিলা আশ্রমের সভাপতি ছিলেন। সভাপতি থাকা কালীন সময়ে তিনি আশ্রমের উন্নতির লক্ষ্যে অনেক কাজ করেছেন। পরবর্তী পর্যায়ে তা আর সম্ভব না হওয়ায় তিনি সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
কালীঘাট কালীবাড়ী: সাধু বাবু কালীঘাট কালীবাড়ির সভাপতি ছিলেন এবং এই আশ্রমের সেবাইত মানিক চক্রবর্তী বর্তমানে আশ্রমের সব কাজকর্ম পরিচালনা করছেন।
ভুলাগিরি আশ্রম: প্রথমে এই ভুলাগিরি আশ্রমের অবস্থা খুব খারাপ ছিল এবং কোন আয় উন্নতি ছিল না। এমনকি এই আশ্রমের জায়গার উপরে ডিসপুট ছিল। তখন স্বর্গীয় তরণীনাথ দত্ত সভাপতি ছিলেন। তিনি সাধু বাবুকে বলেন, তুমি যদি আশ্রমের সভাপতি না হও, তাহলে আশ্রম রক্ষা করা যাবে না। তখন ডা: রণেন্দ্র কৃষ্ণ মজুমদার (বকুল মজুমদার) তিনি আশ্রমের জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন এবং তিনি তার ফার্মেসি থেকে প্রতিদিন ১০ টাকা করে মাসে ৩০০ টাকা আশ্রমের জন্য জমা রাখতেন। উনার এই টাকায় তখন আশ্রম চলত। সাধু বাবু ও হিমাংশু শেখর ধর (ঝরণা বাবু) পৌর কমিশনার এবং সাধু বাবুর বড় ভাই বিজন বিহারী দাস আশ্রমের নানা অনুষ্ঠানের জন্য টাকা দিতেন এবং আরও অনেকেই দিত। বর্তমানে ভুলাগিরি আশ্রমের অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন এই আশ্রমের নামে ব্যাংকে টাকা জমা আছে এবং আশ্রমের জায়গার উপর ৩৪টি দোকান কোঠা রয়েছে। এই দোকানকোঠা থেকে প্রতি মাসে ১৮ হাজার টাকা আয় হয় যা আশ্রমের নামে প্রতিমাসে ব্যাংকে জমা রাখা হয়।
ভাংগাটিকর আখড়া: আগে এই আখড়া ছিল কানিশাইল। এই আশ্রমের সেবাইত ছিলেন মধুসূধন দাস বৈষ্ণব মহোন্ত। সাধু বাবু যখন লামাবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, তখন তিনি তার কাছে আসেন। এই আখড়ার অনেক সম্পত্তি ছিল বিধায় তিনি আশ্রমে দিনের বেলায় থাকতেন কিন্তু রাতে থাকতেন না, অন্য জায়গায় থাকতেন। তিনি সাধু বাবুকে বলেন, এই আশ্রম কানিশাইল থেকে তুলে ভাংগাটিকরে স্থাপন করার জন্য। যখন তিনি তাকে বলেন, তখন ভাংগাটিকরে কোন মন্দির বা কোন দেবতা ছিলো না। দুইশ’ বছর আগে যিনি এই কানিশাইল আখড়া দান করেন, তখন উনার উইল মোতাবেক কাগজে লেখা ছিল- যখন এই আশ্রমের আশেপাশে কোন হিন্দু লোক থাকবে না, তখন আপনারা এই আশ্রমের জায়গা বিক্রি করে অন্য জায়গায় যেতে পারবেন। সাধু বাবু এই সুযোগে আশ্রম কমিটি গঠন করেন। তিনি স্বর্গীয় তরণীনাথ দত্তকে সভাপতি ও তিনি নিজে সাধারণ সম্পাদক এবং বিচারপতি রণধীর সেন, ঝরণা বাবু, শিশির কুমার গুপ্ত, রণেন্দ্র কৃষ্ণ মজুমদার এরা সবাই সদস্য হলেন এই আখড়ার। সাধু বাবু ও আশ্রম কমিটি মিলে আর.ডি.সি রাজ্জাক সাহেবের কাছে যান কানিশাইল আখড়া বিক্রির অনুমতি আনার জন্য। তখন এই আর.ডি.সি অফিস ছিল বর্তমানে যেখানে টেলিফোন এক্্রচেঞ্জ। ডি.সি তখন এই দুইশ’ বছরের আগের জায়গার উইল পড়ে অভিভূত হন এবং আশ্রম কমিটিকে এই কানিশাইল আখড়া বিক্রির অনুমতি দেন। তখন আশ্রমের সেবাইত মধুসূধন দাস এই কানিশাইল মন্দিরের দেবতাকে এনে ভাংগাটিকর আশ্রমে স্থাপন করেন। আশ্রম বিক্রির বাকী যে টাকা ছিল তা দিয়ে আশ্রমের সেবাইত মধুসূধন দাস সালুটিকরে জায়গা কিনেন। তার কিছুদিন পর স্বর্গীয় তরণীনাথ দত্ত সভাপতি থেকে পদত্যাগ করেন। তখন আশ্রম কমিটি সাধু বাবুকে সভাপতি বানান। সাধু বাবু সভাপতি হওয়ার পর নতুন কমিটি গঠন করেন। বর্তমানে ভাংগাটিকর আখড়াতে এই কমিটিই আছে।
মঙ্গলচন্ডী: সাধু বাবুর পারিবারিক এই আশ্রম মঙ্গলচন্ডীর বাড়ি। তাদের পরিবারের সবাই এই মন্দিরের যাবতীয় পূজা অর্চনা করে থাকেন।
বন্দরবাজার ব্রহ্ম মন্দির: সাধু বাবুর ঠাকুর দা বঙ্গবিহারী দাস এই ব্রহ্ম মন্দির দান করে গেছেন। দুর্গাকুমার পাঠশালা ও হাসান মার্কেটের জায়গা এবং রাজা জি.সি হাই স্কুলের জায়গা তিনি দান করে গেছেন।
মাছুদিঘীরপার আখড়া: এই মাছুদিঘীরপার আখড়া সাধু বাবুদের দান করা। বর্তমানে এই আখড়াতে ভালোভাবে পূজা অর্চনা চলছে। (চলমান)