(পূর্বে প্রকাশের পর)
হযরত শাহ জালাল এর নিষ্কর জায়গা নিয়ে প্রথমে মিটিং হয় জিন্না হলে। বর্তমানে এখন শহীদ সুলেমান হল নামে পরিচিত। এই মিটিংয়ে শহরের সব গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। তখন মদরিস সাহেব কনভেনার হন। কিছুদিন পর মদরিস সাহেব সাধু বাবুকে কনভেনার বানিয়ে দেন। তখন একমাত্র হাজী বারী মিয়া তার সঙ্গে সব সময় ছিলেন এবং সব সময় প্রেরণা দিতেন। তারপর সাধু বাবু কসবা নিষ্কর থাকার জন্য হাজী জালালের সঙ্গে দেখা করেন। জেনারেল অথরাও খান, মুনায়েম খান গভর্নর ইস্ট পাকিস্তান এর সঙ্গে সাধু বাবু দেখা করেন,। উনার মেয়ের জামাই সিলেটের ডি.সি। তাঁকে নিয়ে সাধু বাবু সিলেটের রেলওয়ে স্টেশন সেলুনে গভর্নর সাহেবের কাছে যান সিলেটের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি নিয়ে। তাদের নাম হলো- আজমল আলি চৌধুরী, তৈমুর রাজা, সইফুল আলম খান, হাজী বারি মিয়া, হারুন হোসেন আলি চৌধুরী, হাজী তাহির আলি, নির্মল কুমার চৌধুরী, রণেন্দ্র কৃষ্ণ মজুমদার (বকুল বাবু), হিমাংশু শেখর ধর ও মো: ইউসুফ (তারু মিয়া)। এই সব ব্যক্তিসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা করেন তিনি এবং প্রস্তাব করেন হযরত শাহ জালাল এর জায়গা কসবে নিষ্কর রাখার জন্য। তারপর জেনারেল জিয়া সিলেটে আসেন। সাধু বাবু উনার কাছে এই প্রস্তাব করেন। তারপর প্রেসিডেন্ট জেনারেল এরশাদ সাহেবের কাছে প্রস্তাব করেন শাহ জালাল এর জায়গা নিষ্কর রাখার জন্য। তখন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী এম.পি ভোটে দাঁড়ান। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর সঙ্গে সাধু বাবু দেখা করেন। তিনি সাধু বাবুর সামনে প্রেসিডেন্ট এরশাদ সাহেবকে ফোন করেন এবং বলেন তিনি তার কাজ করবেন না, যদি হযরত শাহ জালাল এর কসবা নিষ্কর না হয়। তখন এরশাদ সাহেব বলেন, আমি গেজেট নিয়ে ৭ দিনের জন্য সিলেট আসছি। এই কথা শুনে সাধু বাবু মামুনুর রশীদকে নিয়ে শেখঘাটে প্রথম মিটিং করেন হুমায়ুন রশীদ সাহেবের এম.পি ভোটের জন্য। তারপর এরশাদ সাহেব ৭ দিনের মাথায় গেজেট নিয়ে হযরত শাহ জালাল মাজারে আসেন এবং গেজেট কপি নিষ্কর কমিটির কাছে হস্তান্তর করেন। তারপর আগের যা বাকি ছিলো এবং বর্তমানের সব খাজনা মাফ হল। প্রেসিডেন্ট জিয়া যখন ভূমি উন্নয়ন কর বসান তখন তার বিপক্ষে নিষ্কর কমিটির সদস্যরা জজকোর্টে কেইস করেন। মো: মকন মিয়ার নাতি আফছর উদ্দিন এই কেইসের খরচ চালাতেন। পংকী কমিশনারের বড় ভাই রাজা এই কেইসের তদবির করেন। তিনি কসবা কমিটিতে আছেন এবং আবুল মিয়াও ছিলেন। আবুল মিয়ার সঙ্গে আরও অনেকে কসবা কমিটিতে ছিলেন যা সাধু বাবুর মনে না থাকার কারণে তথ্যসূত্রে পাওয়া যায়নি।
সাধু বাবু ১৯৪৮ সালে ভারতের করিমগঞ্জে বিয়ে করেন। তিনি যাকে বিয়ে করেন তিনি রায় বাহাদুর রমণী মোহন দাস, রায় বাহাদুর নবকুমার এই দু’জনের নাতনি। তারা করিমগঞ্জের নামী-দামী মানুষ ছিলেন এবং সমাজের উন্নয়নের জন্য অনেক কিছু দান করেছেন। যেমন রমণী মোহন নীলমণি হাইস্কুল, নীলমণি মেমোরিয়েল ইনস্টিটিউশন। এই ইনস্টিটিউট উদ্বোধন করেন ভারতের মন্ত্রী হুমায়ুন কবির। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পালা হয়। এই পালা অনুষ্ঠানে গুরুদাস, রাণী দাস মণি এবং মলিনা দেবী উপস্থিত ছিলেন। পরে তারা থাকেন সাধু বাবুর শ্বশুর বাড়িতে। তিনি যথন সিলেট থেকে বড় সাইজের কইমাছ নিয়ে তাদের আপ্যায়নের জন্য করিমগঞ্জে যান, তখন কইমাছের সাইজ দেখে খুব মুগ্ধ হন তারা। সেই সময় সিলেটের ডি.সি ছিলেন আই.এইচ ওসমানী। মলিনা দেবী সিলেট আসতে চাইলে তখন সাধু বাবু ডি.সির সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেন।
ডি.সি বলেন, আপনি উনাদের নিয়ে আসেন। তিনি এস.ডিকে বর্ডারে পাঠান তাদের বিনা ভিসা ও পাসপোর্ট ছাড়া নিয়ে আসার জন্য। তারপর কলকাতা থেকে ফোন আসে মলিনা দেবীর কাছে কলকাতা ফিরতে হবে সুটিং এর জন্য। এরপর তাদের আর সিলেটে আসা হয়নি। সাধু বাবুর খুড়া শ্বশুর আর.এম দাস (দুলু বাবু) ছিলেন আসামের এম.এল.এ এবং করিমগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান, পাবলিক সার্ভিস কমিশন ও কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট।
সাধু বাবুর বড় মেয়ের বিয়ে হয় দানবীর আর.পি সাহার ছেলের সঙ্গে এবং ছোট মেয়ের বিয়ে হয় মির্জাপুর জামুর্কির স্বনামধন্য পরিবারের ছেলে ডা: দুলাল চন্দ্র পোদ্দার এর সঙ্গে। তার বাবার নাম উদ্ধারণ পোদ্দার। বর্তমানে তার ছোট মেয়ের জামাই কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ডাইরেক্টর। তার নাতি রাজীব প্রসাদ সাহা কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর। রাজীব প্রসাদ সাহা মহিলা মেডিকেল কলেজসহ আরো অনেক কিছুর উন্নতি করেন। সাধু বাবুর বড় মেয়ে হ্যান্ডিক্রাফটসের ডাইরেক্টর এবং আরও অনেক কিছুর দায়িত্বে রয়েছেন। ব্যারিস্টার শওকত আলি খান, বিজয়া খান, ডা: মসিউর রহমান এবং তিনি নিজেও ডাইরেক্টর। জয়া যিনি আগে ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ছিলেন, বর্তমানে তিনি ডাইরেক্টর। চিন্তাহরণ সাহা ডাইরেক্টর ছিলেন, তার মৃত্যুতে ট্রাস্টের অনেক ক্ষতি হয়। প্রতিভা মুৎসুদ্দি ও ডাইরেক্টর ছিলেন।
শ্রী বিমলেন্দু দাস (সাধু বাবু) সিলেট নগরীর গোপালটিলা আখড়া, কালীঘাট কালিবাড়ী, ভোলা ভুলাগিরী আশ্রম, ভাঙ্গাটিকর আখড়া, গোবিন্দ জিউ আখড়া, মাছুরদিঘীরপার আখড়া, লামাবাজার মঙ্গলচন্ডীর বাড়ি, বিশ্বম্ভর গোপীনাথ ও বন্দরবাজার মহাপ্রভুর মন্দিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এমনকি সিলেট নগরীর কুদরত উল্লা জামে মসজিদ, বন্দরবাজার জামে মসজিদ, লালদিঘীরপার জামে মসজিদ ও কাজলহাওর জামে মসজিদের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে জড়িত ছিলেন সাধু বাবু। (চলমান)