শাবি ভিসির পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত ॥ জাবি শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ফরিদ উদ্দিনের

5
ভিসিকে বাইরে থেকে যাতে কোন ধরনের খাবার দেওয়া না যায় সে ব্যাপারে অনড় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। ছবি-মামুন হোসেন

কাজিরবাজার ডেস্ক :
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। নিজ বাসভবনে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে আছেন উপাচার্য। এই ইস্যুতে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের প্রথম দফা আলোচনায় সফলতা না আসায় বিষয়টি ঝুলে রয়েছে। অনশনে অনড় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করছেন। রবিবার সন্ধ্যায় উপাচার্য ভবনে বিদ্যুত ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তবে রাতে বিদ্যুতবিহীন থাকতে হয়নি উপাচার্যকে। জেনারেটরের সাহায্যে আলো ও পানির ব্যবস্থা চালু ছিল। উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সরকারের উচ্চমহলের সঙ্গে আলোচনার অপেক্ষায় আছেন, তবে তারা অনশন ভাঙবেন না। সোমবার দুপুর ১টায় প্রেস ব্রিফিং করে এমনটাই জানালেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা বলেন, আমরা শিক্ষামন্ত্রী বা তার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। কিন্তু আমাদের সঙ্গে

ধারাবাহিক অনশনে ক্রমাগত শারীরিক অসুস্থতার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

কেউ যোগাযোগ করেননি। আমাদের বলা হয়েছিল অনশন ভেঙ্গে আলোচনায় বসতে, কিন্তু আমরা অনশন ভাঙব না। এই অবস্থায় আলোচনা করতে চাই। গভীর রাত পর্যন্ত উপাচার্য ভবনে ছিলেন শাবির কর্মকর্তা এ্যাসোসিয়েশনের এক শীর্ষ নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সকালে তিনি জানান, রবিবার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরই উপাচার্য ভবনে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে পানিরও ব্যবস্থা হয়েছে। ফলে রবিবার রাতে তাকে বিদ্যুতহীন থাকতে হয়নি। ওই কর্মকর্তা বলেন, উনার বাসার জেনারেটরে তেলের মজুদ পর্যাপ্ত নয়, যা আছে তা দিয়ে আজকের দিন পর্যন্ত চলতে পারে। এই অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে সমস্যায় পড়তে হবে। তাছাড়া আন্দোলনকারীরা বাইরে থেকে কাউকে ভেতরে ঢুকতেও দিচ্ছে না। ফলে তেল শেষ হলে বাইরে থেকে নিয়ে যাওয়া যাবে না। উপাচার্য সুস্থ আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিছুটা দুশ্চিন্তায় তো আছেনই। তাছাড়া তার হার্টের অসুখও আছে।’ পদত্যাগ দাবির বিষয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এ বিষয়ে সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন।’ এদিকে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, পদত্যাগ না করা পর্যন্ত এভাবেই উপাচার্যকে অবরুদ্ধ রাখা হবে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রবিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের জরুরী পরিষেবাগুলো বিচ্ছিন্ন করে দেয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সরকারের উচ্চমহলের সঙ্গে আলোচনার অপেক্ষায় আছেন, তবে তারা ভাঙবেন না অনশন। সোমবার দুপুর ১টায় প্রেস ব্রিফিং করে সাংবাদিকদের এমনটাই জানালেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা বলেন, আমরা শিক্ষামন্ত্রী বা তাঁর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি। আমাদের বলা হয়েছিল অনশন ভেঙ্গে আলোচনায় বসতে, কিন্তু আমরা অনশন ভাঙব না। এই অবস্থায় আলোচনা করতে চাই। প্রেস ব্রিফিংকালে আন্দোলনকারীরা আরও জানান, অনশনকারীদের শারীরিক অবস্থা সময় সময় খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে। হাসপাতালে মোট ১৯ জন ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে ৪ জনের শারীরিক অবস্থা একটু ভাল হয়ে যাওয়ায় হাসপাতাল থেকে আবার ক্যাম্পাসে ফিরে অনশনে যোগ দিয়েছেন। হাসপাতালে যারা আছেন তারাও কিন্তু অনশন পালন করছেন। এখন অনশনে আছেন মোট ২৩ জন আর সোমবার দুপুর ১টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অনশন করছেন ১৩ জন। প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, অনেক পত্রিকায় লেখা হচ্ছে- আমরা ভিসি বাসভবনের পানি, গ্যাস ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি। আসলে তথ্যটি ঠিক নয়, আমরা শুধু বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি। শাবিপ্রবির উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা গত বুধবার থেকে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রথমে ২৪ জন শিক্ষার্থী অনশনে বসলেও একজনের বাবার অসুস্থতাজনিত কারণে তিনি বাড়ি চলে যান। পরে শনিবার ও রবিবার আগের ২৩ জনের সঙ্গে আরও ৫ শিক্ষার্থী অনশনে যোগ দেন। শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরু হয় ১৩ জানুয়ারি দিনগত মধ্যরাতে। ওই রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু

আন্দোলনকারীদের মশাল মিছিল।

করেন হলের কয়েক শ’ ছাত্রী। এদিকে শাবি শিক্ষার্থীদের কাছে বারবার আওয়ামী লীগে শীর্ষ ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ শিক্ষামন্ত্রীর বার্তা নিয়ে বারবার গেলেও তারা ভাঙ্গেননি অনশন। গতকাল রবিবার শাবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রেস ব্রিফিং করে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির উদ্দেশে বলেন, তাদের মূল দাবি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ। এই দাবি না মানা পর্যন্ত তারা আন্দোলন থেকে সরবেন না। তবে শিক্ষামন্ত্রীর ভার্চুয়ালি আলোচনা করতে আগ্রহী তার। উপাচার্য ইস্যুতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শনিবার গভীর রাতে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী। বৈঠকে উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না এলেও দাবিগুলো লিখিতভাবে জমা দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। দীপু মনি আশ্বস্ত করেন, লিখিত দাবি পেলে সেগুলো সমাধানে উদ্যোগ নেবে সরকার। এর আগে শনিবার রাতে ঢাকায় নিজ বাসভবনে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষামন্ত্রী। এ সময় তিনি জানান, প্রয়োজনে তার প্রতিনিধিদল শাবিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। শিক্ষার্থীরা যখন কথা বলতে রাজি হবে, তখনই প্রতিনিধি যেতে পারবে। পারিবারিক কারণে এখন তিনি সিলেটে যেতে পারছেন না।