মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা গুরুতর। নানা কারণে ঘটে মনোবিকলন। মাদক গ্রহণে অভ্যস্ত হওয়ার কারণে কিংবা দীর্ঘকাল ধরে মাদকের নেশার জালে আটকে থাকলেও ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতিসাধন হয়। এমনকি শারীরিক সীমাবদ্ধতারও শিকার হয়ে থাকে। যার ফলে তার সুস্থ জীবন বলে কিছু থাকে না। এমন হতভাগাদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার ও সামাজিক সংগঠনসমূহ নানা আঙ্গিকে কাজ করে চলেছে। এক্ষেত্রে সবকিছুর আগে প্রয়োজন বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসার মধ্য দিয়ে তাদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা। মাদকাসক্তদের চিকিৎসা একটি জটিল ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। একইসঙ্গে ব্যয় সাপেক্ষও বটে। এক্ষেত্রে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা যেমন কাম্য নয়, তেমনি প্রত্যাশিত নয় মাদকাসক্তি থেকে মুক্তিলাভের স্বপ্ন ভেঙ্গে ভিন্ন কোন অসুস্থতার মধ্যে ভুক্তভোগীর নিপতিত হওয়া। শুধু অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা নয়, চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা এবং মাদকাসক্তদের যৌন নির্যাতনের চিত্রও, যা অনভিপ্রেত এবং আশঙ্কাজনক।
মাদকাসক্তদের যথাযথ চিকিৎসা দানের জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া এবং কাঠামোগত প্রস্তুতির বিষয়টি। প্রকৃতপক্ষে চিকিৎসাসেবার অঙ্গীকার করে অনুমোদন নিলেও তা মানা হচ্ছে না প্রায় কোথাও। অধিকাংশ নিরাময় কেন্দ্রেই নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। নেই মাদকাসক্তি শনাক্তে ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা। মাদকাসক্ত ও মানসিক রোগীকে একই ধরনের চিকিৎসা দিতে গিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করা হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তদন্তেই দেখা গেছে, ১০৫টি কেন্দ্রের বেশিরভাগই স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) মেনে চলার কোন লক্ষণ নেই। রাজধানীতে প্রায় দু’শ’ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র থাকলেও মাত্র ১০-১৫টি ছাড়া বাকিগুলো নির্ধারিত মানদন্ডে উন্নীত হতে পারেনি। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং সর্বক্ষণিক চিকিৎসকের কথা কাগজে-কলমে দেখানো হলেও বাস্তবে নেই ছিটেফোঁটাও। অধিকাংশ কেন্দ্রেই অস্বাস্থ্যকর এবং নোংরা পরিবেশ। সেখানে চিকিৎসার পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে না, নিয়মকানুন মানা হয় না, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা আশা করব সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মাদকাসক্তদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। একইসঙ্গে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসারত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক।