ওসমানীনগর থেকে সংবাদদাতা :
ওসমানীনগরে জায়গা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সংঘর্ষে আহতদের তাৎক্ষণিক বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও একাধিক ব্যক্তির অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের পৃথক পৃথক অভিযোগ পেয়ে প্রাথমিক তদন্ত শেষে সোমবার দিবাগত রাতে থানায় পাল্টা পাল্টি মামলা রুজু করে থানা পুলিশ। শনিবার উপজেলার গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের জহিরপুর এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের নিজ করনসী জহিরপুর গ্রামের সৈয়দ আনছার আলী ও সৈয়দ ওয়াকিল আলীর মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে জায়গা সয়ক্রান্ত বিরোধ চলমান রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার স্থানীয় ভাবে শালিশ বৈঠক হওয়ার পর একটি শালিশ বৈঠকের সিদ্ধান্ত মতে উভয় পক্ষ আইনি জটিলতার অবসান না হওয়া পর্যন্ত বিরোধপূর্ণ ভূমি উভয় পক্ষদ্বয় ব্যবহার না করার জন্য নির্দেশ দেন এলাকার শালিশ ব্যক্তিবর্গরা। প্রাথমিক ভাবে বিষয়টি উভয় পক্ষ মেনে নিলেও শনিবার বিরোধপূর্ণ ওই জায়গায় ওয়াকিল আলী ও তার লোকজন চাষবাদ করার চেষ্টা করায় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষে আনছার আলী পক্ষের ৬ জন মারাত্মকভাবে আহতসহ ওয়াকিল আলীর পক্ষের আরও ৫ জন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন নিজ করনসী গ্রামের মৃত সিকন্দর আলীর পুত্র কওছর আলী, সৈয়দ আনছার আলী ও তার পুত্র সৈয়দ টিটু আলী, রাজ্জাক আলী ও দিলদার আলী, সৈয়দ তানবির আলী, সৈয়দ হুমাউন আলী, হেলাল মিয়া ছাড়া অন্যান্য আহতদের নাম পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় চিকিৎসাকেন্দ্রসহ সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। আহতদের মধ্যে সৈয়দ আনছার আলীর পক্ষের কওছর আলীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকের বরাত দিয়ে তারা পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় সৈয়দ আনছার আলী বাদি হয়ে নিজ করনসি জহির পুর গ্রামের সৈয়দ ওয়াকিল আলী, সৈয়দ তানভীর আলী, সৈয়দ হুমাউন আলীর নাম উল্লেখ করে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এর পূর্বে ওয়াকিল আলীর পক্ষে সৈয়দ হুমাউন আলী বাদি হয়ে ৬/৭ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পর সোমবার রাতে থানা পুলিশ পৃথক পৃথক মামলা রুজু করে।
এ বিষয়ে সৈয়দ আনছার আলী বলেন, গত তিন বছর থেকে জোরপূর্বক ওয়াকিল আলী আমার জায়গা দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জায়গা দখলের পাঁয়তারায় তারা আমাদের ওপর হামলা-মামলা অব্যাহত রেখেছে। এরই জের ধরে শনিবার ওয়াকিল আলী আমার জায়গায় জোরপূর্বক চাষবাদ শুরু করলে আমি বাধা দেয়ায় সৈয়দ ওয়াকিল আলীসহ পক্ষের লোকজন সংঘবদ্ধভাবে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। এ সময় ওয়াকিল আলীর হাতে থাকা বন্দুক দিয়ে বার বার গুলি করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে পরবর্তীতে ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করে। তাদের পরিকল্পিত হামলায় আমার ভাই গুরুতর আহত হয়ে এখনও হাসপাতালে কাতরাচ্ছে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
তবে এ ব্যাপারে সৈয়দ ওয়াকিল আলী বলেন, বিরোধপূর্ণ জায়গা নয়, আমি আমাদের অন্য জায়গায় চাষাবাদ করতে গেলে আনছার আলীর লোকজন বাধা দেয়। শালিশ বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে আমরা বিরোধপূর্ণ জায়গায় কোনো কিছু না করার পরও তারা আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে এতে আমাদের ৫ জন আহত হয়েছেন। ইতিপূর্বে তারা হুমাউন আলীর দোকানে লুটপাট চালিয়েছিল যার মামলা আদালতে চলমান আছে।
উভয় পক্ষের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসমানীনগর থানার এস আই স্বাধীন তালুকদার বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পক্ষের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে থানা পৃথক পৃথক মামলা রুজু হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের অব্যাহত চেষ্টাসহ তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।