করোনার থাবায় ব্যাপক প্রাণহানির পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতিরও আজ লণ্ডভণ্ড অবস্থা। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। রপ্তানি বাণিজ্যে রীতিমতো ধস নেমেছে। কমে গেছে রেমিট্যান্সের প্রবাহ। প্রায় দুই মাস ধরে চলা লকডাউনের কারণে বন্ধ রয়েছে অনেক শিল্প-কারখানার উৎপাদন। দেশি-বিদেশি অনেক সংস্থাই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, বাংলাদেশের জিডিপি উল্লেখযোগ্য হারে কমে যেতে পারে। এমন বাস্তবতার মধ্যে শেষ হতে চলেছে চলতি অর্থবছর (২০১৯-২০)। আসন্ন নতুন অর্থবছরের (২০২০-২১) বাজেট প্রণয়নে শেষ মুহূর্তের কাজ এগিয়ে চলেছে। আগামী ১১ জুন জাতীয় সংসদে এই বাজেট উপস্থাপিত হবে বলে জানা গেছে। করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতির কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার এক লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকার বিশাল ঘাটতি বাজেট উপস্থাপনের পরিকল্পনা করছে। সাধারণত বাজেটের ঘাটতি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশের মধ্যে রাখা হলেও আসন্ন বাজেটের ঘাটতি তাকে ছাড়িয়ে যাবে। ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ অনেক বেড়ে যেতে পারে, যা আবার বেসরকারি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন অনেক অর্থনীতি বিশ্লেষক। আবার অনেকে মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ঘাটতি বাজেট অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাঁরা বরং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে বাজেটের দক্ষ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন।
করোনা সংক্রমণের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ক্রমেই তীব্র হচ্ছে এই সত্যটি বিবেচনায় রেখেই আমাদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সাজাতে হবে। চলতি অর্থবছরের শেষার্ধে আমাদের রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রণোদনা দেওয়াসহ দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষকে রক্ষায় সরকারকে অনেক অপ্রত্যাশিত ব্যয় করতে হয়েছে। ধারণা করা যায়, করোনায় বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক অবস্থা শিগগিরই কেটে যাবে না। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতা ২০২১ সালেও বিরাজমান থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে বড় বাজেটের প্রয়োজনে রাজস্ব আদায়ের বড় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলে তা বাস্তবায়নযোগ্য হবে না বলেই মনে করছেন বাজেট বিশ্লেষকরা। আবার করোনার কারণে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান সবারই সামর্থ্য হ্রাস পেয়েছে। এই অবস্থায় করের বোঝা বাড়ানো হলে তা অনেকটা মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে উঠতে পারে। আমরা মনে করি, সরকারের নীতিনির্ধারকরা সব দিক চিন্তাভাবনা করেই ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে এগিয়ে যাবেন এবং জাতিকে বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম ও বাস্তবায়নযোগ্য সুন্দর একটি বাজেট উপহার দেবেন।