স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানু ও তার পরিবারের মালিকানাধিন একটি বাসা কিনে সে বাসার দখল সমঝে না পাওয়া ও হামলার অভিযোগ করেছেন এক শিক্ষানবীশ আইনজীবী। সোমবার দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন কওে এ অভিযোগ করেন গোলাপগঞ্জের লক্ষীপাশা গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে ও শিক্ষানবীশ আইনজীবী মোঃ লোকমান হোসেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি ও আমার আপন বড় ভাই ফটিক মিয়া (কাজির বাজারের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী) সিলেট নগরীতে আমাদের নিজেদের থাকার জন্য একটি বাসা কেনার চেষ্টা করছিলাম। আমরা জানতে পারি, নগরীর খুলিয়াটুলায় নীলিমা আবাসিক এলাকায় ৫২/৫ নং বাসাটি বিক্রি হবে। ৪ শতকের ওই বাসার মালিক ও দখলকার, মৃত মুকিত মিয়ার ছেলে নুরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করি। তিনি জানন তারা মাঠপরচা নিয়ে বাসাটির মালিক ও দখলকার হিসেবে ভোগ দখল করছেন। তবে, জায়গার এসএ রেকর্ডীয় মালিক জনৈক গোলাম সরোয়ার চৌধুরীর উত্তরাধিকারীরা। জায়াগার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে আমরা নুরুল ইসলামকে বলি, তারা যদি সকল পক্ষকে নিয়ে এক সাথে আমাদের দলিল করে দেন তাহলে আমরা বাসাটি কিনতে পারি। ওই বাসার দোতলায় নুরুল ইসলামের ছোট ভাই মৃত তাজুল ইসলামের স্ত্রী, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১৩, ১৪ ও ১৫ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানু ও তার ছেলেরা বসবাস করেন।
তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে নুরুল ইসলাম, তার ভ্রাতৃবধু কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানু, দখলকার রাকিব আহমদ ও এসএ রেকর্ডীয় মালিকদের পক্ষে এহসানুল হক চৌধুরী আমাদের সাথে বৈঠক করে ও বৈঠকে সকলে তাদের নিজ নিজ প্রাপ্য টাকা প্রাপ্তি সাপেক্ষে উক্ত ৪ শতক জায়গাসহ বাসাটি মোট ৬৫ লক্ষ টাকায় আমাদের কাছে বিক্রয় করতে সম্মত হন।
এ সময় যাযার প্রাপ্য অনুযায়ী টাকা পরিশোধ করে গত বছরের ১৮ মে এস.এ রেকর্ডীয় মালিকদের কাছ থেকে সাফকবালা দলিল সম্পাদন করে বাসাটি ক্রয় করা হয় বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, এছাড়াও কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানুকে ২৪ লক্ষ টাকা পরিশোধ করে তার সাথে বিগত গতবছেরের ১৯ জুলাই এবং মো. রকিবের সাথে ৪ আগস্ট এক চুক্তিপত্র সম্পাদন করে তাকে ১২ লক্ষ টাকা পরিশোধ করি। এভাবে, আমি মোট ৭৪ লক্ষ টাকা সকল পক্ষকে পরিশোধ করি। বাসার দামের অতিরিক্ত ৯ লক্ষ টাকা নুরুল ইসলাম আমার কাছ থেকে ঋণ হিসেবে গ্রহণ করেন এবং সেই বাবত আমাকে ৯ লক্ষ টাকার ৩ টি চেক প্রদান করেন।
কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানুকে টাকা প্রদানকালে সিলেট সিটি সিটি কর্পোরেশনের ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান ও সিলেট জেলা পরিষদ সদস্য সহুল আল রাজি চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন এবং তারা কাউন্সিলর শানুর সাথে সম্পাদিত বিক্রয় চুক্তিতে সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্ল্যেখ করেন মোঃ লোকমান হোসেন।
সম্প্রতি স্ত্রী ও আত্মীয়স্বজন নিয়ে বাসাটি দেখতে গেলে তাদেও সাথে উগ্র আটরণ ও হামলা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, আকষ্মিকভাবে কাউন্সিলর শানু, তার ছেলে রায়হান ও রেদওয়ান আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। কাউন্সিলর শানু আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে, আমরা তোকে এখনো বাসা বাসা সমঝাইয়া দেই নাই। তুই কোন সাহসে বাসায় ঢুকলি? এখনি তুই বাসা থেকে বেরিয়ে যা। কাউন্সিলর শানুর উগ্র রূপ দেখে আমি তাকে শান্ত করার চেষ্টা করি এবং বলি যে, আমরা বাসাটি দেখতে এসেছি মাত্র। এ সময় শানুর ছেলে রায়হান চায়নিজ কুড়াল নিয়ে ও অপর ছেলে রেদোয়ান দা নিয়ে আমাকে আক্রমণ করে। আমি তাদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলে শানু ও তার ছেলে বাইরে থেকে ঘরের গ্রিল বন্ধ করে দেয়।
তিনি বলেন, অবরুদ্ধ হয়ে পড়লে আত্মীয় স্বজনকে জানাই। কিছুক্ষণের মধ্যে কাজির বাজার থেকে আমার পরিচিত জামাল, আনোয়ার ও ইয়াকুবকে নিয়ে আমার ভগ্নিপতি হালিম মিয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এরপর আমার চাচী মনিকা বেগম, ভাতিজি পারভীনও ঘটনাস্থলে আসেন। কাউন্সিলর শানু ও তার সহযোগীরা এ সময় তাদের দোতলার বাসায় অবস্থান নিয়ে আমাদেরকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। তাদের পেট্রোল বোমার আঘাতে আমার ভগ্নিপতি হালিম মিয়া, আমার চাচী মনিকা বেগম ও ভাতিজি পারভীন বেগম গুরুতর আহত হন।
পুলিশ এসে তাদেরকে উদ্ধার কওে জানিয়ে তিনি বলেন, আমার বড় ভাই বিষয়টি কতোয়ালী থানাকে অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আমাদেরকে উদ্ধার করে ও আহতদেরকে ওসমানী হাসপাতালে পাঠায়। আহতদের মধ্যে হালিম মিয়া, মনিকা বেগম ও পারভীন বেগমের শরীর পেট্রোল বোমার আগুণে ঝলসে যাওয়ায় তাদেরকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা এখনো হাসপাতালে চিকিৎসধীন। আমাদের উপর হামলার ঘটনায় আমি নিজে বাদী হয়ে ইতোমধ্যে কতোয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছি।
অসহায় কন্ঠে মোঃ লোকমান হোসেন বলেন, আমার বড় ভাই একজন ব্যবসায়ী এবং গুরুতর অসুস্থ লোক। তার জীবনের সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে বাসাটি কিনেছেন। বাসার মূল্য আমরা সম্পূর্ণ পরিশোধ করে দিয়েছি। কাউন্সিলর শানুসহ বাসার মালিক দাবীদার সবাই তাদের প্রাপ্য টাকা পেয়ে গেছেন। অথচ, আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কাউন্সিলর শানু ও তার ভাসুর নুরুল ইসলাম এখন আমাদেরকে বাসাটি দখল হস্তান্তর না করায় আমরা চোখে অন্ধকার দেখছি। আমরা বাসাটি দেখতে গিয়ে নির্মম হামলার শিকার হয়েছি। তাদের হামলায় আহত হয়ে আমার পরিবারের ৩ জন লোক এখন ওসমানী হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।
এ সময় তিনি কাউন্সিল শানু, তার ছেলে রায়হান ও রেদোয়ান এবং শানুর ভাসুর নুরুল ইসলামসহ তাদের সকল সহযোগীদেরকে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানান। একই সাথে আত্মসাৎকৃত টাকা উদ্ধারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।