কাজিরবাজার ডেস্ক :
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সবচেয়ে প্রবীণ আইনবিদ ও দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব বিচারপতি তাফাজ্জাল হোসেন (টি এইচ) খান ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
রবিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেল ৫টায় রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টে তার জানাযা অনুষ্ঠিত হবে।
১০২ বছরে পা দেওয়া খ্যাতিম্যান এই প্রবীণ আইনজীবীকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রোববার ভোরে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তার ছেলে সিনিয়র সাংবাদিক ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী আফজাল এইচ খান জানান, বিকেল ৫টায় আব্বা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রবিবার ভোরে তাকে রাজধানীর কল্যাণপুরে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি বার্ধক্যজনিত জটিলতাসহ নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন।
দেশ বরেণ্য ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই আইনবিদ ১৯২০ সালের ২১ অক্টোবর এই দিনে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলাধীন ঔটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এর আগে তিনি নিয়মিত সুপ্রিম কোর্টে নিয়মিত প্র্যাকটিস করলেও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে দুই বছর ধরে আদালত প্রাঙ্গণে আসতেন না।
১৯৪৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ. অনার্স এবং ১৯৪৬ সালে এমএ পাস করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি আইন পেশায় যোগ দেন।
১৯৫১ সালে হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৬৮ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
দেশ স্বাধীনের পর তিনি আর বিচার বিভাগে যোগ দেননি। এরপর ১৯৭৩ সালে পুনরায় আইনজীবী পেশায় ফিরে আসেন। ১৯৭৪ সালে তিনি প্রথম বারের মতো সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন।
এরপর ১৯৭৯ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর আইন, শিক্ষা, ধর্ম, ভূমি ও রাজস্ব এবং ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এরপর ১৯৮২ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সামরিক আইন জারি করলে তিনি আবার আইন পেশায় ফিরে যান। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ১৯৮৬ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
১৯৯২ সালে টি এইচ খান জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস কমিশনের সদস্য এবং একই বছর জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৪ সালে তিনি দ্বিতীয় বারের মতো সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৯৫ সালে তিনি এশিয়া জোন থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল পদে বিচার কাজ পরিচালনা করেন। এরপর দেশে ফিরে আবার আইন পেশা শুরু করেন।
বিচারপতি টি এইচ খান ১৯৯২ সালে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন এবং এ পদে ২০১১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বর্তমানে বিএনপির প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান।
১৯৪৭ সালে তিনি আইন পেশায় যোগ দেওয়ার বছর ২৭ নভেম্বর সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রে প্রধান বিচারপতি সালেহ আকরামের নেতৃত্বে পাঁচজন বিচারপতি নিয়ে যে দিন ঢাকা হাইকোর্টের যাত্রা শুরু হয়, সে দিন থেকে বিচারপতি টি এইচ খান একজন আইনজীবী হিসেবে সেই আদালতে (বর্তমান সুপ্রিম কোর্ট) পদচারণা শুরু করেন।
১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর আইন, শিক্ষা, ধর্ম, ভূমি ও রাজস্ব এবং ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এরপর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদের নেতৃত্বে নতুন সামরিক আইন জারি করা হয়। তখন তিনি আইন পেশায় ফিরে যান। ১৯৮৬ সালে এরশাদের নির্বাচনে বিরোধিতা করার জন্য গ্রেফতার হন তিনি।
আইন পেশা ছাড়াও প্রথম জীবনে পাবনা অ্যাডওয়ার্ড কলেজ, ঢাকার জগন্নাথ কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন ও আইন বিষয়ে অধ্যাপনা করেছিলেন টিএইচ খান।