করোনা নিয়ন্ত্রণে গত নবেম্বরে স্বাস্থ্য অধিদফতর ১৫ দফা এবং ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ১৬ দফা নির্দেশনা দিয়েছিল। এর পরও বছরের শুরু থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। আগের দুই দফা বিধিনিষেধ কার্যকরে খুব একটা তৎপরতা দেখা যায়নি। এমন পরিস্থিতি সামনে রেখে ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে প্রয়োজনে আইন প্রয়োগ করে শাস্তি নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে। এজন্য সারাদেশে পরিচালনা করা হবে মোবাইল কোর্ট। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক কর্মকা- সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এসব বিধিনিষেধ বহাল থাকবে।
১১ দফা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও চলমান স্থানীয় সরকার নির্বাচন। নির্বাচনে স্বাস্থ্যবিধি কিভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞ কমিটি অবশ্য আর কোন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। খোলা রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, স্কুল কলেজ বন্ধ হচ্ছে না। টিকার ওপর জোর দেয়া হবে। হিসাব অনুযায়ী এখনও অর্ধেক ছাত্র-ছাত্রীকে টিকার আওতায় আনা যায়নি। যারা টিকা দিতে পারেনি তাদের শিক্ষাক্রম কিভাবে চলবে তাও স্পষ্ট নয়। টিকা দেয়ার পরও সংক্রমণ হচ্ছে, এই তথ্যটিও বিবেচনায় নেয়া দরকার।
বাণিজ্যমেলা চলছে। মেলায় ভিড়ও রয়েছে যথেষ্ট। হাট-বাজার-মার্কেট খোলা রয়েছে স্বাভাবিক সময়ের মতো। বিধিনিষেধে ক্রেতা-বিক্রেতাকে মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একই সঙ্গে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে। বিয়েসহ সামাজিক অনুষ্ঠানাদি চলছে। আগে থেকে তারিখ নির্ধারিত থাকায় কেউই এগুলো বাতিল করছে না। অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজনৈতিক সমাবেশ। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে মানুষের ভিড়। এসব স্থানেও বিধিনিষেধ কার্যকরের খুব একটা লক্ষণ নেই। চলছে গণপরিবহন। নির্দেশনা অনুযায়ী অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহন করা যাবে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকরে এখন পর্যন্ত তেমন উদ্যোগ নেই। প্রশ্ন উঠেছে, এমন পরিস্থিতিতে বিধিনিষেধ কতটুকু কার্যকর করা যাবে? বিধিনিষেধ কার্যকর না হলে পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে?
বিশে^র অনেক দেশে করোনা সংক্রমণ ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সকল রেকর্ড। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অনেক দেশ লকডাউনের মতো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সর্বোচ্চ জোর দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্যবিধির ওপর। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মার্কেটগুলোতে লাইন দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিনতে হচ্ছে পণ্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে করোনা বিস্তার যে পর্যায়ে রয়েছে তাতে বিধিনিষেধের বিকল্প নেই। ১১ দফা বাস্তবায়নে প্রশাসনকে হতে হবে কঠোর। প্রয়োজনে এসব বিধিনিষেধ আরও কঠোর করতে হবে। একইসঙ্গে আন্তরিক হতে হবে সকল নাগরিককে। ঢিলেঢালা ভাব ও সমন্বয়হীনতা ডেকে আনতে পারে ভয়ঙ্কর বিপদ। বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের ওপরই নির্ভর করছে দেশের করোনা পরিস্থিতি ও অর্থনীতির ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে।