শিপন আহমদ ওসমানীনগর থেকে :
আগামী ৩১ জানুয়ারি ৬ষ্ঠ ধাপে ওসমানীনগরের ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে ঘিরে প্রতীক বরাদ্দের আগে আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
নির্বাচন কমিশনের সূত্রমতে কোনো রাজনৈতিক দল মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান, প্রতীক বরাদ্দের পূর্বে কোনো প্রকার প্রচারণা করার বিধান না থাকলেও উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সদস্য পদের প্রার্থীরা আচরণ বিধির কোনো তোয়াক্কা করছেন না। নিজ নিজ পক্ষে জনসমর্থন আদায় করতে নির্বাচন কমিশনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সভা সমাবেশ, গণসংযোগ, পোস্টার, ক্যাম্প স্থাপনসহ সবকিছুই চালিয়ে যাচ্ছেন অনেকটা ফ্রি স্টাইলে।
নির্বাচন কমিশিনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১৪ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দের তারিখ ঘোষণা থাকলে গত এক মাস ধরেই উপজেলার সবকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা স্বাস্থ্য বিধি ও আচরণ বিধি লঙ্গণ করে দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাইক বাজিয়ে অথবা টিভির নাম সম্বেলিত অখ্যাত, কুখ্যাত ফেইসবুক লাইভের মাধ্যমে সভা ও সমাবেশসহ হাজার হাজার লোকজন জমায়েত করে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেন অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টরাসহ স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে সম্পূর্ণরূপে নিরব থাকায় নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত উপজেলার তাজপুর, উমরপুর, উসমানপুর, দয়ামীর, সাদীপুর, গোয়ালাবাজার, বুরুঙ্গা বাজার ও পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা আচরণ বিধি ভঙ্গ করে নিজ নিজ প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব বিষয়ে জানতে গিয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিস বলেছে, আচরণ বিধির লঙ্গনের বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন দেখার কথা। আবার উপজেলা প্রশাসন সূত্র বলছে প্রতীক বরাদ্ধের আগ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্টরা প্রার্থী কর্তৃক আচরণ বিধি লঙ্গনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্টারা যদি উপজেলা প্রশাসনের সহায়তা চান তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহায়তা অব্যাহত রাখা হবে। প্রশাসনের এমন কৌশলী নিরবতায় এভাবে চলতে থাকলে ওসমানীনগরে সামনে নির্বাচনী পরিবেশ আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়ে সংঘাতসহ নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ উপজেলার শতশত লোকজন করোনা আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের এসব আচরণ বিধি লঙ্গন দেখে একাধিক ইউনিয়নের সাধারণ সদস্য প্রার্থীরা প্রতীক সম্মেলিত প্রচারণা চালাতে দ্বিধা করছেন না। নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার মোটরযান ব্যবহার করে মিছিল বা শোডাউন করে প্রচারণা না চালানোর নিষেধ থাকলেও মনোনয়ন জমা দেয়া থেকে শুরু করে বিশাল শোডাউন ও গাড়ি বহর নিয়ে মনোনয়ন দাখিলসহ প্রতীক সম্মেলিত প্রচার প্রচারণাসহ বিশাল-বিশাল জনসমাবেশ করে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। এসব বিষয়ে একধিক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা অপর প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন অফিস ও ইউএনও কে মৌখিক ভাবে অভিযোগ দিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না বলে একাধিক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন। পথসভা ও ঘরোয়া সভার অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে সভার স্থান ও সময় জানানোয় কথা থাকলেও এসবের যেন কিছ্ইু বাস্তবায়ন হচ্ছে না এই উপজেলায়।
নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে উপজেলার সাদীপুর, উসমানপুর, বুরুঙ্গা বাজার, তাজপুর, দয়ামীর, পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ বিএনপির সমর্থিতরাসহ স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে শুধু আচরণ বিধিই লঙ্গন করে ক্লান্ত হচ্ছেন না এসব ইউনিয়নে এক প্রার্থী অপর প্রার্থী সমর্থক ও সংখ্যালঘু ভোটারদের নানা ভাবে হুমকি ধামকিসহ কালো টাকার প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে। আচরণ বিধি লঙ্গনের বিষয়ে উপজেলা ৮ ইউনিয়নের একাধিক চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সাথে যোগাযোগ করে বক্তব্য নিতে চাইলে অনিহা প্রকাশ করে এক প্রার্থী অপর প্রার্থীদের দোষারোপ করে নানা অযুহাতে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
উপজেলার বুরুঙ্গা বাজার ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী সমুজুল হক আলকাছ অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনী আচরণ বিধি মেনে নির্বাচন পরিচালনা করে গেলে এ ইউনিয়নে মনোনয়ন জমা দেয়ার পূর্ব থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা সভা সমাবেশ, মিছিলসহ অহরহ আচরণ বিধি লঙ্গন করে যাচ্ছেন। এছাড়া আমার কর্মী সমর্থকসহ সংখ্যালঘু ভোটারদের নানা ভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। এতে নিবার্চনকে ঘিরে বুরুঙ্গা বাজার ইউনিয়নে সংঘাত ও মারামারি আশংকা বিরাজ করছে। সার্বিক বিষয়ে তিনি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
উমরপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো: গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমি যথাসাধ্য আচরণ বিধি মেনে প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে গেলেও আমার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আচরণ বিধির তোয়াক্কা না করে কালো টাকার প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
উমরপুর ইউনিয়নের বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হেকিম বলেন, আমি আচরণ বিধি লঙ্গন করছি না। এ ব্যাপারে আমি এখন বক্তব্যও দিতে পারব না। দুই আড়াইশত লোকজন নিয়ে আমি এখন গণসংযোগ করছি।
সাদীপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া অভিযোগ করে বলেন, প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্বাচনী সভা সমাবেশ করার বিধান না থাকলেও আমার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থীসহ তাদের সমর্থকরা তা মানছেন না। এ বিষয়ে আমি ইউএনওসহ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী প্রতীক সম্মেলিত ব্যানার, পোষ্টারসহ তোরণ নির্মাণ করে দেদাড়ছে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন যা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার পরিপন্থি।
সাদীপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী শাহেদ আহদ বলেন, আমি আচরণ বিধি করে কোনো প্রচার প্রচারণা করছি না। দলীয় ভাবে কর্মী সমাবেশ করা হয়েছে। প্রতীক সম্মেলিত কোনো পোষ্টার বা লিফলেট বের করিনি।
উসমানপুর ইউনিয়নের বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল্লাহ মিসবাহ বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীদের পক্ষ থেকে উসমানপুর ইউনিয়নে সভা সমাবেশ হচ্ছে। তবে এখানে আমরা এক প্রার্থী অপর প্রার্থীর সাথে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। আচরণ বিধি যাহাতে লঙ্ঘন না হয় সে দিকে সজাগ থেকে নির্বাচনী প্রচার প্রচারনা করার চেষ্টা করছি।
দয়ামীর ইউনিয়নের বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান এসটিএম ফখর উদ্দিন বলেন, মনোনয়ন দেয়ার পূর্বে ঘরোয়া পরিবেশে আমি কর্মী সভা ও মতবিনিময় করলেও মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর থেকে আচরণ বিধি মেনেই নিরবে সাধারণ ভোটারদের সমর্থক আদায়ের চেষ্টা করছি। কিন্তু অন্যান্য প্রার্থীরা বিশাল বিশাল গণসমাবেশ মিছিল মিটিংসহ গণ সংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রশাসনও লিখিত অভিযোগ ছাড়া এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম মাইন উদ্দিন বলেন, আচরন বিধি লঙ্ঘন করে সভা সমাবেশ করার বিষয়ে কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে এখনও থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে এবং কোনো প্রার্থী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে থাকলে খোঁজ নিয়ে অভিযোক্ত প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু লায়েশ দুলাল বলেন, প্রতীক বরাদ্দের আগ মুহূর্তে পর্যন্ত প্রতীক সম্মেলিত ব্যানার পোষ্টার ব্যবহার করে নির্বাচনী সভা সমাবেশ গণসংযোগসহ নির্বাচন কমিশনের নিদের্শনার বাহিরে গিয়ে প্রচারণা না করার জন্য প্রার্থীদের সমর্থক করে দেয়া হয়েছে। কোনো প্রার্থী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করলে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলিমা রায়হানা বলেন আচরণ বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে আমরা এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। নির্বাচনী আচরণ বিধির ব্যাপারে উপজেলা নির্বাচন অফিসের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ প্রার্থীদের সমর্থক থাকার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এরপরও যদি কোনো প্রার্থী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে থাকেন তাহলে খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।