তাহিরপুরে সার সংকট, অতিরিক্ত দাম দিয়ে সার বিক্রি করছেন ডিলার

16

বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
তাহিরপুরে বোরো রোপণ মৌসুমের শুরুতেই এম ও পি সারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষক বোরো জমি রোপণ করছেন কিন্তু ডিলারদের ঘরে সার পাচ্ছেন না। খুচরা দু’একজন ডিলার ও বিভিন্ন গ্রামে বেশ কয়েকজন দোকানদার এম ও পি সার বিক্রি করছেন। কৃষকদের কাছ থেকে ৫০ কেজি (১ বস্তা) সারের দাম নিচ্ছেন ক্ষেত্র ভেদে ৮ শ ৮০ থেকে ৯ শ ৫০ টাকা পর্যন্ত।
জানা যায়, বর্তমানে এম ও পি সারের বাজার দর রয়েছে ১ বস্তা (৫০ কেজি) ৭ শ ৫০ টাকা। উপজেলার ৭ ইউনিয়নের মধ্যে উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন ব্যাতিত ৬ ইউনিয়নে ৬ জন ডিলার বি সি আই সি নিয়োগ প্রাপ্ত সার ডিলার রয়েছেন। সেই সাথে উপজেলায় ১৫/১৬ জনের মতো খুচরা ডিলার রয়েছেন। চলতি বছর ৬ জন ডিলারদের মধ্যে ৬ শ ৬৬ বস্তা এম ওপি সার বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রত্যেক ডিলার ১ শ ১১ বস্তা বরাদ্দ পান। নিয়ম অনুসারে ইউনিয়ন ডিলারদের কাছ থেকে সার কিনে খুচরা ডিলার রা বিক্রি করে থাকেন।
চলতি মাসে এম ও পি সার কম বরাদ্দের কারণে গুদামে সার ওঠানোর পর পরই প্রত্যেক ডিলারে দের এম ওম ও পি সার বিক্রি শেষ হয়ে যায়। কিন্তু বিভিন্ন বাজারে খুচরা ডিলার ও সাধারণ দোকানীরা দেদারছে এম ও পি সার বিক্রি করে যাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে ভৈরব সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কালো বাজরে সার কিনে এনে অতিরিক্ত দাম দিয়ে কৃষকদের কাছে সার বিক্রি করছেন। আর কৃষকরাও সার না পেয়ে একটু বেশী দামে সার কিনছেন। যারা বাজারে অতিরিক্ত দামে এম ও পি সার বিক্রি করছেন তাদের মধ্যে রয়েছে বাদাঘাট বাজরের খুচরা ডিলার হাফিজুর রহমান, বালিজুরী বাজার এমদাদ মিয়া, আনোয়ারপুর বাজার নাজমুল হুদা, দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের আব্দুস সাত্তার, লামাগাঁও বাজার প্রভাত তালুকদার।
সেই সাথে ডিলার না হয়েও যারা সার বিক্রি করছেন তাদের মধ্যে তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের চিকসা গ্রামের আমিন মিয়া, খালেদ মিয়া, জামালগড় গ্রামের ইনু মিয়া, দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের শাহ আলম মিয়া, ডালিম মিয়া, সুলেমানপুর বাজারে রাসেল মিয়া সহ অসংখ্য লোকজনের নাম কৃষকদের কাছ থেকে জানা গেছে।
এ বিষয়ে কথা হয় আনোয়ার বাজার খুচরা ডিলার নাজমুল হুদার সঙ্গে। তিনি জানান একটু বেশী দাম দিয়ে সার কিনতে হচ্ছে। আমার কাছে আপাতত সামান্য সার রয়েছে। দু এক দিনের মধ্যে সার উঠবে।
উজান তাহিরপুর গ্রামের কৃষক ইসমাইল মিয়া বলেন তাহিরপুর সদর বাজারে লাল সার ( এম ও পি) না থাকায় আমি ও গ্রামের কয়েকজন কৃষক মিলে আনোয়ারপুর বাজারে নাজমুল মিয়ার দোকান থেকে এক বস্তা সার কিনি ৮৫০ টাকা দিয়ে। একই অবস্থার কথা জানালে, মাটিয়ান হাওর পারের কৃষক বশির মিয়া। তিনিও জানান, তিনি বাদাঘাট বাজার থেকে ৮ শ ৫০ টাকা দিয়ে এক বস্তা লাল সার কিনেন।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন সার ডিলার সাময়ুন কবির বলেন বরাদ্দ নাই। বরাদ্দ না পাওয়া পর্যন্ত এম ও পি সার পাওয়া যাবে না।
দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন খুচরা ডিলার প্রভাত তালুকদার এর সাথে এম ও পি সার আছে কি না যোগাযোগ করা হলে তিনি ও জানান, সার রয়েছে পরিমাণে কম। বেশী নিলে দু’ একদনি অপেক্ষা করতে হবে। সেই সাথে তিনি বলেন দামও একটু বেশী পরবে।
বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশন তাহিরপুর ইউনিট সভাপতি নুর মিয়া বলেন আমাদের ৬ জন ডিলার কে চলতি মাসে ৬ শ ৬৬ বস্তা এম ও পি সার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা অনেক আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। আমাদের কোন ডিলারের কাছে বর্তমানে এম ও পি সার নেই।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অদিধপ্তর এর উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ডিলার ব্যতিত সার বিক্রি সম্পূর্ণ বে-আইনি। ডিলার ও খুচরা ডিলার ব্যতিত অন্য কেহ খোলা বাজারে সার বিক্রি করতে পারেন না।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান উদ-দৌলা বলেন এম ও পি সার সংকট রয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে বরাদ্দ চলে আসবে। এম ও পি সার বাজার মূল্য থেকে বেশী দামে কোন ডিলার বিক্রি করছেন বিষয়টি কোন কৃষক আমাকে অবহিত করেন নি। আমি বিষয়টি খোঁজ খবর নিচ্ছি।