মো. শাহজাহান মিয়া জগন্নাথপুর থেকে :
আগামী ২৬ ডিসেম্বর জগন্নাথপুর উপজেলার ৭ ইউনিয়নে চতুর্থ ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনের সময় যতো ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে নির্বাচনী উত্তাপ ও প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ। পাল্লা দিয়ে চলছে প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ। দিনরাত চষে বেড়াচ্ছেন পাড়া-মহল্লা। এতে রীতিমতো নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন প্রার্থীরা। তাই শেষ মুহূর্তে প্রার্থীদের লড়াই তুঙ্গে রয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন স্থানে টাকার ছড়াছড়ি চলছে বলে অনেকে জানান। যে কোন মূল্যে নিজেদের বিজয় নিশ্চিতের লক্ষে সর্বশক্তি নিয়ে প্রার্থী ও সমর্থকরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন মাঠে। নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে প্রার্থীদের মধ্যে অনেকে ভোটারদের জন্য স্ব-মমতায় খোলে দিয়েছেন মনের দরজা। দু-হাত বিলিয়ে করছেন দান-খয়রাত। জনসেবায় উজার করে দিয়েছেন নিজেকে। সমাজসেবক, দানশীল ও গরীবের বন্ধু হিসেবে নিজেকে জাহির করছেন অনেকে। চলছে দাবা খেলার মতো কূট-কৌশলের প্রতিযোগিতা। অগ্রিম দিয়ে যাচ্ছেন যতো উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাস। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি ইমেজ প্রাধান্য পাচ্ছে বেশি। সাথে রয়েছে দলীয় পরিচিতি। এর মধ্যে জনপ্রিয়তায় ও কৌশলগত ভাবে যাঁরা এগিয়ে রয়েছেন, তাঁদেরকে নিয়ে সর্বত্র বইছে আলোচনার ঝড়।
ভোটাররাও কষতে শুরু করেছেন ভোটের শেষ হিসাব-নিকাশ। কাকে ভোট দেয়া উচিৎ অথবা কে নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়ন হবে। এ নিয়ে ভোটারদের ভাবনার শেষ নেই। এছাড়া গরীব ও অসহায় ভোটারদের উপরে রয়েছে বাড়তি চাপ। আছে প্রবাসী স্বজনদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার তদবির ও চার পাশে ছড়াছড়ি করছে টাকা আর টাকা। রয়েছে গোষ্ঠীগত পেশি-শক্তির প্রভাব। চলছে বোরো জমি আবাদের মৌসুম। এতো সবের মধ্যে একজন যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেয়া নিয়ে তাদের চিন্তার যেন শেষ নেই। এরপরও আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে চারদিকে বইছে ভোট উৎসবের আমেজ।
নির্বাচনে ৭ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মোট ৩৭ জন প্রার্থী ভোটযুদ্ধে লড়াই করছেন। তাঁরা হলেন, ১নং কলকলিয়া ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আলাল হোসেন রানা, স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুস সোবহান ও রফিক মিয়া। এ ইউনিয়নে ত্রিমুখি লড়াই হতে পারে। এ লড়াইয়ে তাঁরা ৩ প্রার্থীরই নাম শোনা যাচ্ছে।
২নং পাটলি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আংগুর মিয়া, স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজুল হক, আতিকুর রহমান আতিক, আবদুল হাই আজাদ ও এনামুল ইসলাম। এ ইউনিয়নে দ্বিমুখি লড়াই হতে পারে। এ লড়াইয়ে আংগুর মিয়া ও সিরাজুল হকের নাম শোনা যাচ্ছে।
৫নং চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বকুল, আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল গফুর, স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আরশ মিয়া, মুজিবুর রহমান, আবদুল মমিন ও ইলাছ মিয়া। এ ইউনিয়নে দ্বিমুখি লড়াই হতে পারে। মূল লড়াইয়ে শহিদুল ইসলাম বকুল ও আরশ মিয়ার নাম শোনা যাচ্ছে।
৬নং রাণীগঞ্জ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ ছদরুল ইসলাম, স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম রানা, ছালিক মিয়া, আমান উদ্দিন আহমদ লেচু, সাবেক চেয়ারম্যান মজলুল হক ও সিরাজুল ইসলাম আসিক। এ ইউনিয়নে ত্রিমুখি লড়াই হতে পারে। এর মধ্যে মূল লড়াইয়ে শহিদুল ইসলাম রানা, শেখ ছদরুল ইসলাম ও আমান উদ্দিন আহমদ লেচুর নাম শোনা যাচ্ছে।
৭নং সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হাসান, স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মকসুদ মিয়া, আজহারুল ইসলাম কামালী, সৈয়দ আসাদ হোসেন চৌধুরী ও মুকিতুর রহমান। এ ইউনিয়নে দ্বিমুখি লড়াই হতে পারে। মূল লড়াইয়ে আবুল হাসান ও মুকিতুর রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে।
৮নং আশারকান্দি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ূব খান, আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুস ছত্তার, জাতীয় পার্টি মনোনীত শাহ তারেক রহমান নিপু, স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী পারভেজ, মোহাম্মদ আলী, আহমেদ হোসাইন, লেবু মিয়া ও সৈয়দ জমিরুল হক। এ ইউনিয়নে ত্রিমুখি লড়াই হতে পারে। এ লড়াইয়ে মোঃ আইয়ূব খান, তারেক রহমান নিপু ও আবদুস ছত্তারের নাম শোনা যাচ্ছে।
৯নং পাইলগাঁও ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মখলুছ মিয়া, আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী সুন্দর উদ্দিন, স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারুক আহমদ ও দবিরুল ইসলাম। এ ইউনিয়নে ত্রিমুখি লড়াই হতে পারে। মূল লড়াইয়ে মখলুছ মিয়া, ফারুক আহমদ ও সুন্দর উদ্দিনের নাম শোনা যাচ্ছে। এছাড়া ৭ ইউনিয়নের সকল ওয়ার্ডে নারী সদস্য পদে ৮৯ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ২৩১ জন প্রার্থীর লড়াই শেষ সময়ে জমে উঠেছে। নিজেদের বিজয় নিশ্চিতে তাঁরাও পিছিয়ে নেই। সরজমিনে ৭ ইউনিয়নের স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে অনেকে এমন তথ্য জানান।