দেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল অর্থ পাচার হচ্ছে বিদেশে। এটি একরকম ওপেন সিক্রেট। তবে এর সঠিক পরিমাণ কত তা জানে না কেউ। সরকারও এ নিয়ে মুখ খুলতে চায় না সহজে। দুর্নীতি দমন কমিশন মাঝে মধ্যে কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ আনলেও সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণের অভাবে তা থেকে যায় অগোচরে। বিএনপির আমলে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম এবং বর্তমান সরকারের আমলে কানাডায় বেগমপাড়ার কথা বহুল আলোচিত। সাবেক এক অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, কিছু আমলাও বিদেশে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত। বর্তমান অর্থমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের নাম ও তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কার্যত কোন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রায় কোন নজির নেই বললেই চলে। কেননা সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের অভাব প্রকট। তবে বিএনপির আমলে বর্তমানে দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দুই পুত্র তারেক ও কোকোর বিদেশে অর্থ পাচারের প্রমাণ মিলেছে এবং এর কিয়দংশ দেশে ফিরিয়ে আনাও সম্ভব হয়েছে। তবে তা হয়েছে সে দেশের সরকার ও আদালতের সহযোগিতার কারণে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পাচারকৃত অর্থের কিয়দংশ ফিলিপিন্স থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি এখনও। এ নিয়ে মামলা দায়ের করতে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে, যা চলমান। নিকট অতীতে বিশ্বের বহুল আলোচিত পানামা পেপারস, প্যারাডাইস পেপারসে বাংলাদেশের কয়েক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এলেও যথেষ্ট তথ্য প্রমাণের অভাবে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির মূল্য বেশি (ওভার ইনভয়েসিং) এবং রফতানির মূল্য কম দেখিয়ে (আন্ডার ইনভয়েসিং) এর মাধ্যমে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীর বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ তো আছেই। এর বাইরেও রয়েছে হুন্ডি ব্যবসায়ী, সোনা ও মাদক চোরাচালান, মানব পাচার বিশেষ করে নারী ও শিশু পাচার ইত্যাদি।
২০১৫ সালের পর জাতিসংঘকে বৈদেশিক বাণিজ্যের আর কোন তথ্য দেয়নি বাংলাদেশ। ফলে কোন হিসাবও পাওয়া যায়নি। তবে বিদেশে অর্থ পাচারের পরিমাণ যে বেড়েছে, সে বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ করা সম্ভব হলে দেশের সার্বিক উন্নয়নসহ বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে অবশ্যই।