স্টাফ রিপোর্টার :
এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পর এবার করোনা ভ্যাকসিনের আওতায় আসছে সিলেট বিভাগের ৪ লক্ষাধিক স্কুল শিক্ষার্থী। শনিবার ১১ ডিসেম্বর থেকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে শুরু হবে টিকা কার্যক্রম। রবিবার ১২ ডিসেম্বর শুরু হবে হবিগঞ্জে। সিলেট ও মৌলভীবাজারে শুরু হবে সোমবার ১৩ ডিসেম্বর থেকে। তবে রবিবার পরীক্ষামূলকভাবে সিলেট ক্যাডেট কলেজে শুরু হবে টিকা কার্যক্রম। এদিকে স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রম সফলে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। একই সাথে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে তালিকা প্রস্তুত করছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১২ থেকে ১৭ বছরের সকল স্কুল শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসতে সিলেট বিভাগে ৪ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। এর মধ্যে স্কুল ছাড়াও মাদ্রাসার ও কারিগরি স্কুলের শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন। জেলা পর্যায়ে জেলা সদর হাসপাতালে ও মহানগরীতে প্রথম অবস্থায় ৪ টি স্কুল কেন্দ্রে স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। জেলা শিক্ষা অফিস কার্যক্রম পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে আর বাস্তবায়ন করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রথম অবস্থায় জেলা পর্যায়ে এই টিকা কার্যক্রম চালু হলেও স্বাস্থ্য বিভাগের জনবল থাকা স্বাপেক্ষে এই কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে উপজেলা পর্যায়েও বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা বিভাগ।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ অক্টোবর ঢাকা বিভাগের মানিকগঞ্জ জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে ১২০ স্কুল শিক্ষার্থীর মধ্যে ফাইজারের ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়। এসব শিক্ষার্থী কোনো সমস্যায় না পড়ায় পরবর্তীতে সারাদেশের ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিনের আওতায় আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করে সরকার। সিলেট বিভাগের ৪টি জেলায় ১২ থেকে ১৭ বছরের শিক্ষার্থী রয়েছেন প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার। এছাড়া মাদ্রাসা ও কারিগরি স্কুলের শিক্ষার্থীরা এর আওতায় টিকা গ্রহণ করবে। ফলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে ৪ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) গত ১৭ অক্টোবর মাধ্যমিকের স্কুল শিক্ষার্থীদের তথ্য চায়। পরে গত নভেম্বরের শুরুতে সিলেট জেলা ও মহানগরের জন্য ১ লাখ ৭০ হাজার স্কুল শিক্ষার্থীর তথ্য পাঠায় সিলেট জেলা শিক্ষা অফিস। নিবন্ধিত এসব শিক্ষার্থীরা টিকার আওতায় আসছেন সোমবার থেকে। এদিন একযোগে নগরীর ৪ টি টিকাদান কেন্দ্র সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, ব্ল-বার্ড স্কুল এন্ড কলেজ, সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও পুলিশ লাইনস উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে টিকা কার্যক্রম শুরু হবে। টিকা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ। ইতোমধ্যে সিসিকের স্বাস্থ্য বিভাগ সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এছাড়া জেলা পর্যায়ে সিভিল সার্জন অফিস টিকা কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে।
সিলেট জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলা পর্যায়ে ১২ থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত ১ লক্ষ ৭২ হাজার স্কুল শিক্ষার্থীদের তালিকা শিক্ষা অধিদফতরে প্রেরণ করা হয়। সেখান থেকে জন্ম নিবন্ধন না থাকায় ১ লক্ষ ২৬ হাজার ৯৯১ জন শিক্ষার্থীকে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে জন্ম নিবন্ধন কার্ড দিয়ে রেজিস্ট্রেশনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে শিক্ষা অধিদফতর। ফলে পর্যায়ক্রমে জেলার ১২ থেকে ১৭ বছরের পুরো ১ লাখ ৭২ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে। শিক্ষা অধিদফতরের কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে প্রথম অবস্থায় শুধু সিলেট নগরীর ২৫ হাজার ৩৯৪ জন স্কুল শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়া হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সিলেটের পরিচালক প্রফেসর মো: আব্দুল মান্নান খান বলেন, সিলেট বিভাগের ৪ জেলার ৩ লাখ ৬৯ হাজার শিক্ষার্থীর তালিকা আমরা প্রস্তুত করেছি। শনিবার থেকে সুনামগঞ্জ জেলায়, রোববার থেকে হবিগঞ্জ জেলায়, সোমবার থেকে সিলেট মহানগরী ও মৌলভীবাজার জেলায় স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের জনবল থাকা সাপেক্ষে আমরা কেন্দ্র বৃদ্ধি করতে পারবো। ইতোমধ্যে কিছু স্কুলকে আমরা টিকা কেন্দ্রের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা: হিমাংশু লাল রায় বলেন, রবিবার সিলেট ক্যাডেট কলেজ কেন্দ্রে স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রমের শুরু হতে যাচ্ছে। সোমবার নগরীর ৪টি কেন্দ্রে একযোগে টিকাদান শুরু হবে। জেলা পর্যায়ে জেলা সদরে স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকা কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। দুয়েকদিনের ব্যবধানে বিভাগের সব জেলায় টিকা কার্যক্রম চলবে। ফাইজারের টিকা কেন্দ্র প্রস্তুত করতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ থাকা বাধ্যতামূলক। তাই চাইলেই যে কোন কেন্দ্রে ফাইজারের টিকা দেয়া যায়না। এজন্য স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকার ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছি।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: জাহিদুল ইসলাম বলেন, সোমবার থেকে নগরীর ৪টি স্কুলে অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রম শুরু হবে। প্রতিদিন একটি কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ৬ শ জন করে ৪টি কেন্দ্রে ২ হাজার ৪শ জনকে টিকা দেয়া হবে। আমরা প্রথম পর্যায়ে ২৫ হাজার ৩৯৪ জন স্কুল শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়ার জন্য লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছি। শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হলে ১০/১১ দিনের মধ্যেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবো বলে আমাদের বিশ^াস রয়েছে। শিক্ষা অধিদফতর কর্তৃপক্ষ যদি কেন্দ্র বাড়াতে পারেন তবে আমরা জনবল সরবরাহ করতে প্রস্তুত রয়েছি।