সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ॥ যুক্তরাজ্য প্রবাসীর জায়গা জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ

16
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করছেন দিরাই উপজেলার হাতিয়া গ্রামের প্রবাসী মো: জুনু মিয়া।

স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর মিউনিসিপ্যালিটি মৌজায় জোরপূর্বক জায়গা দখলের অভিযোগ করেছেন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার হাতিয়া গ্রামের বাসিন্দা যুক্তরাজ্য প্রবাসী মো. জুনু মিয়া। মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর একটি হোটেলের হলরুমে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। এ সময় ন্যায়বিচার ও জমি পুনরুদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি কামনা করেন এই প্রবাসী।
মো. জুনু মিয়া বলেন, ‘কোনোধরনের নোটিশ বা আদালতের রায় ছাড়া ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এ জায়গায় নির্মিত বাসা ভেঙে ৭ শতক জায়গা দখল করা হয়েছে। অতি উৎসাহী এ আচরণ দেশপ্রেমে নিরুৎসাহিত এবং প্রবাসীদের দেশে বিনিয়োগে ভয়ভীতির সঞ্চার করছে।’
তিনি বলেন, এ জমি মূলত তার পুত্র মো. সজলুল আমিন, মো. রুহুল আমিন ও মো. জহিরুল আমিন এবং খালাতো ভাই গোলাপগঞ্জ উপজেলার মেহেরপুরের তোফায়েল আহমদ ও ফয়জুল আহমদ পৃথক দলিলে ক্রয় করেন। তাদের পক্ষে জুনু মিয়া সংবাদ সম্মেলন করেন। জমির মালিকানা ও সিটি করপোরেশনের সঙ্গে বিরোধের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘ভূমির মূল মালিক ছিলেন নরেশ চন্দ্র দত্ত সেনাপতি। তিনি রজনী কান্তি চৌধুরীর নিকট জমি বিক্রয় করেন। তার একমাত্র উত্তরাধিকার ছিলেন রণধীর চৌধুরী। রনধীর চৌধুরী একসময় জানতে পারে তার মালিকানাধীন ভূমি ভুলভাবে সিলেট মিউনিসিপ্যালিটি নামে রেকর্ড হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে তৎকালীন পৌরসভার চেয়ারম্যানকে ১ নম্বর বিবাদী তালিকাভুক্তক্রমে সদর মোনসেফী প্রথম আদালতে রেকর্ড সংশোধনের লক্ষ্যে স্বত্ত্ব মামলা নম্বর ৮৪/৬৮ ইং মামলা দায়ের করেন। আদালত ২৭/৬/১৯৬৯ তারিখে পৌরসভার বিরুদ্ধে রায় দেন এবং ৪/৭/১৯৬৯ইং তারিখে খরচাসহ বিবাদির বিরুদ্ধে ডিক্রি হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ভূমি অন্যায়ভাবে ও বেআইনিভাবে আত্মসাৎ করার লক্ষ্যে ভূমিখেকো চক্র সিটি করপোরেশনের মেয়রকে ভ্রান্ত ধারণা দিয়ে ঞ.ঝ ৮৪/৬৮ খ্রিস্টাব্দের মামলায় সিটি করপোরেশনের রেকর্ড বাতিল হওয়া স্বত্ত্বেও নানারূপ বেআইনি কার্যক্রম করছেন। প্রায় ৫০ বছর পর ২০১৮ সনে ২য় সাব জজ আদালতে ডিক্রি বাতিলের লক্ষ্যে মামলা করেন।’
প্রবাসী জুনু মিয়া বলেন, ‘সিটি করপোরেশন ঞ.ঝ ২৯৯/১৮ খ্রিস্টাব্দ এবং ঞ.ঝ ৮৪/৬৮ খ্রিস্টাব্দ মামলা উভয়সূত্রে ডিক্রি হওয়া স্বত্ত্বেও এর বিরুদ্ধে আপীল রিভিশন করেননি বা আইনানুগ কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করেননি। ৫০ বছর পরে ঐ ডিক্রি বাতিলের লক্ষ্যে সম্পূর্ণ মনগড়াভাবে বক্তব্য উপস্থাপনক্রমে ডিক্রি বাতিলের মামলা দায়ের করা হয়।’
সবকিছু বিপক্ষে থাকার পরও সিসিক এ জমি দখলে উঠেপড়ে লেগেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘ঐ রেকর্ড বাতিলের জন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে বিগত ১৩/০৭/২০১৭ তারিখ সিটি করপোরেশনের নামে পুনরায় রেকর্ড বহালের আবেদন করলে তদন্তের জন্য চার্জ অফিসার মোহাম্মদ মাহবুবুল আলমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। মাহবুবুল আলম বিগত ২০১৮ সালের ২২ মে প্রতিবেদন দেন এবং উল্লেখ করেনÑ নালিশা ভূমি স্বত্ব ৮৪/১৯৬৮ মূলে রেকর্ড বাতিল হওয়ায় সিটি করপোরেশনের কোনো মালিকানা নাই এবং ‘দেওয়ানী আদালতের রায় বহাল থাকায় সিলেট সিটি করপোরেশনের দাবিকৃত ভুমি নিয়ে প্রণীত রেকর্ড সংশোধনের সুযোগ নেই।’
‘এ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার এস এম জাকির হোসেন ১/৭/২০১৮ তারিখে সিটি করপোরেশনের আবেদনটি খারিজ করেন। আদশের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনের কোনো আপীল রিভিশন বা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে কার্য্যক্রম গ্রহণ না করায় বর্ণিত বিষয়বস্তুর তথ্য গোপনক্রমে পুনরায় একই বিষয়ে আবেদন করেন।’
এই লন্ডন প্রবাসী বলেন, ‘প্রায় ৫৩ বছর আগে আদালতের দেওয়া রায়ে ভুমির মালিকানা নিয়ে বিতর্কের অবসান হলেও মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ক্ষমতার বলে আমার ও আমার খালাতো ভাইদের বাসাবাড়ি বুলডোজার দিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় উচ্ছেদ করেন। অথচ, এ বিষেয়ে কোনো নোটিশ দেননি মেয়র। কিংবা আদালত থেকে উচ্ছেদের কোনো আদেশও দেওয়া হয়নি।’ মেয়রের অতি উৎসাহি আচরণ এবং নিজে বাদী হয়ে জমির মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়টি বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে বলে মনে করেন জুনু মিয়া।’ জায়গা উদ্ধারের জন্য এবং অন্যায়ভাবে বাসাবাড়ি ভেঙে ফেলায় মেয়র আরিফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট দাবি জানান জুনু মিয়া।