রেজিষ্ট্রারী মাঠে বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সমাবেশে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ॥ বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে সিলেট থেকে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু

29
খালেদা জিয়ার বিদেশে সুচিকিৎসা ও নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে রেজিষ্ট্রারী মাঠে বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ছবি-মামুন হোসেন

স্টাফ রিপোর্টার :
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, পুণ্যভূমি সিলেট হচ্ছে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামের সুতিকাগার। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে জাতীয় রাজনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে সিলেটের রয়েছে গৌরবোজ্জল ভুমিকা। সিলেটবাসীর প্রতি আস্থা ও বিশ^াস আছে বলেই আমাদের নেত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে সর্বশেষ সিলেট সফর করে গেছেন। আওয়ামী কারা নির্যাতনে তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গুরুতর অসুস্থ হয়ে বর্তমানে বাঁচা মরা লড়াইয়ে রয়েছেন। অবিলম্বে স্থায়ী মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশ পাঠাতে হবে। অন্যথায় যদি বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হয় তাহলে সিলেট থেকে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলন শুরু হবে। পাড়া মহল্লায় সর্বত্র গণ আন্দোলনের সূচনা হবে।
তিনি বলেন, আইন ও সংবিধান তো মানুষের জীবন রক্ষার জন্য। কিন্তু ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট সরকার আইন ও সংবিধানকে ব্যবহার করে তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। অথচ তারাই ক্ষমতায় থাকতে আইন ও মানবাধিকারকে গলাটিপে হত্যা করেছে। মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, দেশে খুন, গুম ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানীর রাজত্বে পরিণত করেছে। তারা সিলেটের কৃতি সন্তান এম ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে। এমন সরকারের মুখে আইন ও মানবাধিকার বুলি মানায় না। তারা বলে, বেগম খালেদা জিয়া নাকি মুক্ত, তাহলে মুক্ত মানুষের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে বাধা কোথায়? এর জবাব তারা দিতে পারেনা। কারণ সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। প্রথমেই আমাদের নেত্রীর স্থায়ী মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে বিদেশে চিকিৎসা ও গণতন্ত্রের মুক্তিও নিশ্চিত হবে। শুধু আইন আইন করবেন না। বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে আইনের এই বোঝা বইতে পারবেন না। ক্ষমতা বেশীদিন থাকবেনা। বেগম খালেদা জিয়ার সাথে অন্যায় আচরণের সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
তিনি মঙ্গলবার ৩০ নভেম্বর নগরীর ঐতিহাসিক রেজিষ্ট্রারী মাঠে বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। বেলা ২টায় শুরু হয় সমাবেশ সন্ধ্যা ৫টায় সমাপ্ত হয়। সমাবেশের শেষ পর্যায়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের সুস্থতা কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন নয়াসড়ক মসজিদের ইমাম মাওলানা শামসুল ইসলাম।
সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকীর সভাপতিত্বে এবং সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়সল, এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী ও আব্দুল আহাদ খান জামালের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশের শুরুতে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন ওলামা দলের সহ-সভাপতি মাওলানা জিল্লুর রহমান।
বিশেষ অতিথির এডভোকেট জয়নুল আবেদীন তার বক্তব্যে বলেন, আমি আইনের মানুষ। কোন আইনেই তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে বাধাঁ দেয়ার সুযোগ নেই। প্রয়োজন মাফিক চিকিৎসা সেবা পাওয়া সকল নাগরিকের অধিকার। সরকার নিজেরাই আইন বহির্ভূতভাবে দিনের ভোট রাতে দিয়ে ক্ষমতায় ঠিকে আছে। আইন ও সংবিধান বহির্ভূতভাবে দেশ পরিচালনা করছে। বেগম খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি ও চিকিৎসার জন্য আইনী কোন বাধাঁ নেই। বাধা হচ্ছে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। তাই রাজনৈতিকভাবেই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্থায়ী মুক্তি ও চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন একটি রাজনৈতিক গণআন্দোলন।
যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সুহেল বলেন, আওয়ামী সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসারের বিচারে বন্দী বেগম খালেদা জিয়াকে পরিকল্পিতভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আমাদের নেত্রী ভাল না থাকলে আমরা ভাল থাকিনা। কারণ সকালে শিক্ষার্থীরা স্কুল কলেজে যায়। আর আমরা বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীরা যাই আদালতে। সুতরাং আমাদেরকে হামলা মামলা, জেল জুলুমের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। সময় থাকতে শুভ বুদ্ধির উদয় হলে ভাল। অন্যথায় সামনে কঠিন পরিণতি বরণ করতে হবে।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট জয়নুল আবেদীন, যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সুহেল, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদী লুনা, ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী ও খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, বিএনপির কেন্দ্রীয় সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা: সাখাওয়াত হাসান জীবন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, বিএনপির কেন্দ্রীয সহ-ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় সহ স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আক্তার, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ডা: শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, কেন্দ্রীয় সদস্য নাসের রহমান, মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান।
বক্তব্য রাখেন, সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নাসিম হোসাইন, মহানগর সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী, জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এডভোকেট আব্দুল গাফফার, মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির শাহীন, ফরহাদ চৌধুরী শামীম, জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক কাউন্সিলার রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, জিয়াউল গণি আরেফিন জিল্লুর, মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক নজিবুর রহমান নজিব, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অধ্যাপিকা সামিয়া বেগম চৌধুরী, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট এ টি এম ফয়েজ উদ্দিন, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এডভোকেট রুকশানা বেগম শাহনাজ, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা দলের আহ্বায়ক সালেহ আহমদ খসরু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহবুবুল হক চৌধুরী, জেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক এ কে এম তারেক কালাম, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি সুরমান আলী, জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক শহীদ আহমদ চেয়ারম্যান, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল ওয়াহিদ সুহেল, জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক এডভোকেট মোমিনুল ইসলাম মুনিম, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন ও মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সুদীপ জ্যোতি এষ প্রমুখ।
এর আগে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের বিপুল সংখ্যাক নেতাকর্মী খন্ড খন্ড মিছিল সহযোগে সমাবেশ স্থলে যোগ দেন। সমাবেশকে কেন্দ্র করে সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ। তবে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই দিন ব্যাপী চলা এই সমাবেশ পরিসমাপ্ত হয়।
সমাবেশে বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের অনেক নেতা বক্তব্য রাখলেও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী এবং সিলেট এক আসনে গত নির্বাচনের বিএনপি প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে সমাবেশ স্থলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেক কর্মী সিসিক মেয়র আরিফের বক্তব্য শোনার জন্য অপেক্ষায় থাকলেও তাদের আশা পূর্ণ হয়নি। পরে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না দেওয়ায় মুক্তাদিরের অনুসারিরাও ছিলেন ক্ষুব্ধ।
সমাবেশ শেষে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা দ্রুত সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনায় মোনাজাত করা হয়। এ সময় বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী কান্নায় ভেঙে পড়েন। একজনের কান্নার আবেগ ছুঁয়ে যায় অন্যজনকেও। এভাবে আবেগঘন পরিবেশের তৈরি হয় সমাবেশস্থলে। সমাবেশ থেকে খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি প্রদান, মামলা প্রত্যাহার ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবি জানানো হয়।
এদিকে, সভায় যখন কেন্দ্রীয় ও সিলেট বিভাগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হয়ে একে একে বক্তব্য রাখছিলেন ঠিক তখন মঞ্চের পাশেই দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি শুরু হয়ে যায়। পরে মঞ্চ থেকে কয়েকজন এসে তাদের নিভৃত করেন। এ সময় মাইকে সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল বক্তব্য রাখছিলেন।