দুর্নীতি দমন কমিশনের গণশুনানি ॥ অভিযোগের পাহাড় পাসপোর্ট-সেটেলমেন্ট ও বিআরটিএ অফিসের বিরুদ্ধে ॥ অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে সময় বেঁধে দিয়ে দুদক কমিশনারের কঠোর নির্দেশ

24
সরকারি অফিস সমূহে সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে উদ্ভুত সমস্যাদি শ্রবণ ও নিষ্পত্তি এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে গণশুনানিতে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ।

স্টাফ রিপোর্টার :
“সবাই মিলে গড়বো দেশ দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন এর উদ্যোগে সিলেটে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলে গণ শুনানী। সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নানা দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি উঠে আসে এই গণ শুনানীতে। দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মো: জহুরুল হক সেবা গ্রহীতাদের লিখিত নানা অভিযোগ শুনে এর বিপরীতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তির বক্তব্য জেনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে কঠোর নির্দেশনা দেন। বিশেষ করে সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ, জেলা নির্বাচন অফিস ও ভূমি অফিসের নজিরবিহীন হয়রানী, দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের নানা তথ্য প্রমানসহ অভিযোগ তুলে ধরেন সেবা গ্রহীতারা। এছাড়া ওসমানী হাসপাতাল ও সিটি কর্পোরেশনসহ সরকারী আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির চিত্র উঠে আসে গণশুনানীতে।
নগরীর রিকাবীবাজারস্থ কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে রবিবার সকাল ১০ টায় কানায় কানায় পূর্ণ হল বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের উপস্থিতিতে গণশুনানীতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর কমিশনার (তদন্ত) জহিরুল হক, সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজি এমদাদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ, প্রশিক্ষণ ও আইসিটি) একেএম সোহেল, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার পরিতোষ ঘোষ। গণশুনানীতে প্রথমেই মঞ্চে জেলা নির্বাচন অফিসের নানা হয়রানীর বিষয় নিয়ে অভিযোগ নিয়ে হাজির হন এক সেবা গ্রহীতা। এরপর একে একে ৩/৪ জন জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) ভূল সংশোধন করতে গিয়ে নির্বাচন অফিসের নানা হয়রানীর বিষয়টি তুলে ধরেন। দুদক কমিশনার ১০ থেকে ১৫ দিন সময় বেঁধে দিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তাকে এসব অভিযোগের সমাধানের কঠোর নির্দেশ দেন। গণশুনানীতে সবচেয়ে বেশী অভিযোগ উঠে আসে সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের বিরুদ্ধে। সেবা গ্রহীতাদের অভিযোগ শুনে বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের ডিডি অনেকগুলো অভিযোগ আমলে নিয়ে দুদক কমিশনারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দিয়ে এসব অভিযোগের সমাধান করে দেবেন বলে অঙ্গীকার করেন। এ সময় দুদক কমিশনার বলেন, সিলেট পাসপোর্ট অফিসে কি হয় আমরা জানি। সাধারণ মানুষ গেলে কাজ হয় না অথচ দালাল ধরে গেলে সেই কাজ দ্রুত হয়ে যায় এ খবরও আমাদের কাছে আছে। তিনি ডিডিকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, আপনি মনে করবেন না এসব অফিযোগ এখানে বলা হলো আর সব শেষ হয়ে গেলো। আমরা সব খবর রাখবো। তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, দুদকের আইন অনেক শক্তিশালী। দুদক ধরলে কি হয় সেটা ভাল করেই আপনারা জানেন। কমিশনার বলেন, শুধু মিনমিন করে কথা বললেই হবে না সাহস নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। গণশুনানীতে এক ব্যক্তি তালাক সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে হাজির হন। এ সময় মঞ্চে সিটি কপোরেশনের পক্ষ থেকে জবাব দিতে সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট শাখার একজন সাধারণ কর্মচারী ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বক্তব্য তুলে ধরেন। এক পর্যায়ে দুদক কমিশনা কয়েস লোদীর কাছে জানতে চান আপনি কি অথরিটি। আমরাতো মেয়র এবং মেয়র কোন কারণে উপস্থিত থাকলে না পারলে ডেপুটি মেয়রকে উপস্থিত থাকতে বলেছি। আপনাতো অথরিটি না। তখন কাউন্সিলর কয়েস লোদী বলেন, আমাকে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা চিঠি দিয়ে এখানে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে উপস্থিত থাকতে বলেছেন। দুদক কমিশনার তার এই বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তিনি বার বারই বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের অথরিটিকে চেয়েছি। দুদক কমিশনার জহুরুল হক তালাকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়ে বলেন, আপনী ইচ্ছে করলেই সভায় বসে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে টাকা নিতে পারেন না। এটা সরকারের আইন দ্বারা সিদ্ধ হতে হবে।
এ সময় দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ, প্রশিক্ষণ ও আইসিটি) একেএম সোহেল বলেন, আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে কাল কেউ ঘুমালে তাকে টাকা দিতে হবে। এমন কোন সিদ্ধান্ততো আপনী নিতে পারেন না। এটাতো আপনার ইচ্ছার অনিচ্ছার ব্যাপার না। আপনাকে আইন দ্বারা পরিচালিত হতে হবে। এক পর্যায়ে অনুষ্ঠানে হাজির হন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।