কাজিরবাজার ডেস্ক :
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্থাপিত সাধারণ প্রস্তাব বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। দু’দিনে দীর্ঘ সাধারণ আলোচনার পর রাতে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ১৪৭ বিধিতে আনীত প্রস্তাবটি কণ্ঠভোটে দিলে সরকার ও বিরোধী দলের ভোটে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। প্রস্তাবটি পাসের পর সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়িয়ে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান।
স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশনে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক সাধারণ বিধি ১৪৭ বিধির আওতায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সাধারণ প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে মন্ত্রী-সিনিয়র এমপিরা বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দোসর এবং পাকিস্তানের দালালদের দেশবিরোধী চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের বিষদাঁত ভেঙ্গে দিতে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল শক্তির ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধুর দেখনো পথে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা অদম্য গতিতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ আর কারো মুখাপেক্ষী নয়, বিশ্বের কোন মোড়ল এখন আর ডেকে ছবক দিতে পারে না। বরং বিশ্বকে ছবক দিতে বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে যান। দেশকে বিপন্মুমুক্ত রাখতেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের নেপথ্যের মাস্টারমাইন্ডদের চিহ্নিত করে তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে দ্রুত একটি কমিশন গঠনের বিকল্প নেই।
স্পীকারের সভাপতিত্বে সকাল সাড়ে ১০টায় আলোচনা শুরু হয়ে মাঝে দেড় ঘণ্টার বিরতি দিয়ে রাত পর্যন্ত চলে সাধারণ আলোচনা। শেষদিনে বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, আবুল কালাম আজাদ, আফম রুহুল হক, নুরুল ইসলাম নাহিদ, মোতাহার হোসেন, সরকারী দলের আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, বর্তমান চীফ হুইপ নূরে-আলম চৌধুরী লিটন, সাবেক চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, এম তাজুল ইসলাম, এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, শবনম জাহান, হুইপ ইকবালুর রহীম, নাহিদ ইজহার খান, ডাঃ সামিন আহমেদ শিমুল, অধ্যাপক ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত, প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়, একেএম রহমতুল্লাহ, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, গণফোরামের মোকাব্বির খান, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, বিএনপির হারুনুর রশীদ ও রুমিন ফারহানা এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী, রওশন আরা মান্নান প্রমুখ। এর আগে বুধবার সংসদে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ স্মারক বক্তব্য দেন। বৃহস্পতিবার আলোচনার সময় কিছু সময়ের জন্য স্পীকারের দায়িত্ব পালন করেন সভাপতিম-লীর সদস্য এ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, বাংলাদেশের সামনে ধর্মীয় মৌলবাদের যে বিপদ বর্তমান, উন্নয়নের সঙ্গে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেয়ার যে বিপদ বিদ্যমান, দুর্নীতি-বৈষম্য-সাম্প্রদায়িকতা, সম্পদ আর ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন আর কর্তৃত্বে যে বিপদ বিদ্যমান; তার থেকে মুক্ত করতে আজকে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল শক্তির ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। সুবর্ণজয়ন্তীতে উন্নয়ন ও গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে হবে, সাম্প্রদায়িকতাকে রূখতে হবে। তিনি বলেন, ১৫ দল, তিন জোটের অঙ্গীকার, ১৪ দল গঠনের মধ্য দিয়ে আমরা বর্তমান পর্যায়ে এসেছি। নেতৃত্বে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এর ভিত্তি ছিল অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য। আমরা জোটে আছি, ১৪ দলে আছি। তবে তা কেবল দিবস পালনে। নীতিনির্ধারণে কোন অংশ নয়। সরকারের দায় আমাদেরও বহন করতে হয়। আওয়ামী লীগের কাছে ১৪ দলের অথবা অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক ঐক্যের প্রাসঙ্গিকতা আছে কিনা জানি না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে তাঁকে ছোট করার চেষ্টা করেছে, নাম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করেছে- সেই বঙ্গবন্ধুর খুনী ও তাদের দোসররা ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। যারা আজও পাকিস্তানের ক্রীড়নক হয়ে উচ্ছিষ্ট খেয়ে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে তারাও ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। তিনি বলেন, একজন পাঠককে যারা ঘোষক বানানোর চেষ্টা করেছে তারা অন্ধ, জ্ঞানপাপি। যতদিন এদেশ থাকবে, স্বাধীন পতাকা ও মানুষ থাকবে- ততদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ জ্বলজ্বল করবে। কোন অপশক্তিই বাংলাদেশকে আর পিছিয়ে দিতে পারবে না।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমাদের জন্য গৌরব ও আনন্দের বিষয়। বঙ্গবন্ধু চরিত্রে, স্বভাবে, আদর্শে ছিলেন গণতন্ত্রকামী, ধর্মনিরপেক্ষ, সমাজতান্ত্রিক এবং অসম্ভব সাহসী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মহামানব। শত জেল-জুলুম, নির্যাতন বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার প্রশ্নে এতটুকু টলাতে পারেনি। হানাদাররা বুঝতে পেরেছিল বঙ্গবন্ধুকে দমানো যাবে না, তাই আগরতলা মামলায় ফাঁসি দিতে চেয়েছিল। কিন্তু বাঙালির গণআন্দোলনে সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়। স্বাধীনতার মাত্র ৯ মাসের মধ্যে জাতিকে সংবিধান উপহার দেন বঙ্গবন্ধু। তিনি স্বাধীনতার মহানায়ক, অবিসংবাদিত নেতা, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের ¯্রষ্টা, বাঙালীর জাতির পিতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি।
তিনি বলেন, ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর বাংলাদেশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। ইতিহাসের সবচেয়ে ঘৃণ্য ও কলঙ্কজনক ঘটনাগুলো স্থান পায় এ সময়ে। বন্দুকের নল দেখিয়ে দেশ শাসন করেছে। আর বর্তমান সরকারের গত একযুগে বাংলাদেশে এসেছে উন্নয়নের স্বর্ণালি দিন। সব সূচকে দেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি নেত্রী তিনবার হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছেন, বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনুন। সে পথে হাঁটেন না। বিএনপির আইনের শাসন মানে ক্যু করে, গুলি করে হত্যা করা, বিচার লাগে না। এমনকি জিয়ার হত্যারও বিচার তারা করেনি।
আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন সত্ত্বা। জীবিত বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু বাঙালির হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু সদা চিরঞ্জীব, অন্তরালের বঙ্গবন্ধু অনেক শক্তিশালী। জিয়া-খালেদা জিয়ারা যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী করে আমাদের লাখো শহীদের রক্তস্নাত জাতীয় পতাকাকে অসম্মান করেছিলেন। ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা করে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। এদের মুখোশ জাতির সামনে আজ প্রকাশ হয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বলেন, একাত্তরের পরাজিত পাকিস্তান তাদের কৃতকর্মের জন্য আজও বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চায়নি। যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের দোসররা কোনদিন ক্ষমা পেতে পারে না। জিয়া-খালেদা জিয়ার মদদে জামায়াতসহ যুদ্ধাপরাধীরা দাপটের সঙ্গে রাজনীতি করে গেছে। কিন্তু দেশের জনগণ তাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। গত ১৩টি বছর এই অপশক্তি সরকারের বিরুদ্ধে কতই না ষড়যন্ত্র করেছে, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তাদের সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়ে দেশকে সবদিক থেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী সঙ্কটে, সংগ্রামে দেশকে কীভাবে এগিয়ে নিতে হয়, সেই উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তিনি সব প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। পৃথিবীর সামনে উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পেরেছে বাংলাদেশ। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো বিষয়টি এখন অকপটে স্বীকার করছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতেন তবে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠত। সমস্ত সূচকে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অদম্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এদেশ।
শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলতেন- বাঙালি জাতিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। সেটা প্রমাণ করেছেন তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনা। দেশী-বিদেশী শত ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। পিতার দেখানো পথে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকল সূচকে সকল প্রতিবেশীকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা জানিয়ে দেয় আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, পারবেও না।
বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, স্বাস্থ্যসেবা আজ ভেঙ্গে গেছে। সর্বকালের অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এ খাতে কোন উন্নয়ন হয়নি। শিক্ষা ব্যবস্থা যুগোপযোগী নয়। রাজনৈতিক-প্রশাসনে মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় ও দুর্নীতি ছেয়ে গেছে। সমগ্র জাতি যেন চরম বিপদের দিকে চলে যাচ্ছে। নির্বাচনের নামে প্রহসন চলছে। বিনা ভোটে শত শত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হচ্ছেন। কে তাদেরকে নির্বাচিত করল? তারা কীভাবে জনগণের দায়িত্ব পালন করবে? তিনি আবারও সঙ্কটে থাকা বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার দাবি জানান।
জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, বাঙালী জাতিকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দিতে আজীবন লড়াই-সংগ্রাম করে গেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মাত্র ৫৫ বছরের জীবনের মধ্যে সাড়ে ১২টি বছরই কারাগারে নির্যাতন সহ্য করেছেন, কিন্তু স্বাধীনতার প্রশ্নে কখনও আপোস করেননি। তিনিই স্বাধীনতার মহানায়ক। খুনীরা ভেবেছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেই সব শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু তারা জানে না মুজিব মানেই বাংলাদেশ, তিনি চিরঞ্জীব।
পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক বলেন, পাকিস্তানপন্থী বেঈমান-মোনাফেকরা জাতির পিতাকে হত্যা করে দেশের স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দীর্ঘ একুশ বছর বীর মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন অবহেলিত, নানা নির্যাতনের শিকার। দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়ক দিয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।
বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, গণতন্ত্রকে মূলমন্ত্র ধরে একটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়েছে। সেই দেশে গত এক যুগে চালু হয়েছে- আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র, সীমিত গণতন্ত্র। বর্তমানে দেশে এখন অর্থনৈতিক বৈষম্য অকল্পনীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অর্থনৈতিক-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্য হিসাব করলে আজকের স্লোগান হবে- সোনার বাংলা নরক কেন। আজ দেশে সরকারী দলের কিছু নেতাকর্মী, কিছু ব্যবসায়ী, কিছু দুর্নীতিবাজ সরকারী কর্মকর্তা অর্থাৎ সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ মানুষের সঙ্গে বাকি ৯০ শতাংশ মানুষের অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ছে।
এর জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, যে দলটি (বিএনপি) বিদেশীদের দিকে তাকিয়ে থাকে, তাদের প্রেসক্রিপশনে চলে- সেই দলটি অন্ধকারের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। বিএনপির অতীত কর্মকা- জনগণ ভুলে যায়নি। বাংলাদেশ আর কারও মুখাপেক্ষী নয়। বিশ্বের কোন মোড়লরা আর ডেকে ছবক দিতে পারে না, বরং বিশ্বকে ছবক দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ দিয়ে নিয়ে যায়।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একে অপরের পরিপূরক। বঙ্গবন্ধু আমাদের অস্তিত্ব, তাঁর জন্ম না হলে আমরা স্বাধীনতা পেতাম না। দেশের স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু যে আত্মত্যাগ করে গেছেন যা বিশ্বের নজিরবিহীন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হলে দেশ থেকে দুর্নীতি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এক কোটি ব্যাংক ডিফল্টার। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
জাসদের শিরীন আখতার বলেন, বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতার হত্যাকা- ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশে আজ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত-যুদ্ধাপরাধীরা আমাদের সকল অর্জনকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল। স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের অনেক কিছু অর্জিত হয়েছে। তবে এখন উগ্র সাম্প্রদায়িক, ধর্মান্ধ ও ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারলে আমাদের সব অর্জন নষ্ট হয়ে যাবে।
গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বাঙালী জাতির ভালবাসা অর্জনের অলৌকিক ক্ষমতা ছিল। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে বাঙালি জাতি অস্ত্র হাতে নিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছে। গুটিকয়েক হত্যাকারী নয়, বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে অনেকেই জড়িত। তাই একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করে নেপথ্যের নায়কদের মুখোশ উন্মোচন করা উচিত।
বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তাঁর রচিত কবিতা আবৃত্তি করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন দেশ আমরা পেতাম না, বিশ্বের মানচিত্রে আমাদের স্থান হতো না। তাই বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আলাদা করে দেখার কোন সুযোগ নেই।
জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার আনিসুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্যই আজ স্বাধীন দেশের সংসদে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী নিয়ে কথা বলতে পারছি। তিনি কালজয়ী ইতিহাসের মহানায়ক। মিত্র বাহিনীকে মাত্র তিন মাসের মধ্যে ফেরত পাঠানো বঙ্গবন্ধুর মতো স্বাধীনচেতা নেতার কারণেই সম্ভব হয়েছে। আজ তাঁরই কন্যার নেতৃত্বে প্রতিটি সূচকে প্রতিবেশী দেশগুলোকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।