মালদ্বীপের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল নাসিমের তিন দিনের ঢাকা সফরটি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে তিনি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব ও পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। তিনি ঢাকার একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টারও পরিদর্শন করেন। তবে তার সফরে সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে বৈঠকটি। এ সময় তিনি মালদ্বীপে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমজীবীদের সে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কর্মীরা মালদ্বীপের বিভিন্ন সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এ সময় তিনি সে দেশের যুব শ্রেণীকে কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা প্রদানের জন্যও বাংলাদেশের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। অথচ প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমজীবীরা দেশে এলে প্রায়ই সমাদর পান না বলে অভিযোগ আছে। এমনকি বিমানবন্দরেও তাদের হয়রানি করা হয় পদে পদে। করোনা অতিমারীতে তা আরও বেড়েছে। তবে বর্তমানে অবশ্য অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে।
সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের উদ্যোগে চালুকৃত রেমিটেন্স সেবা ‘ব্লেজ’-এর মাধ্যমে বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীরা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা যে কোন সময় যে কোন মুহূর্তে স্বোপার্জিত অর্থ দেশে পাঠাতে পারছেন। এতে সময় লাগছে মাত্র কয়েক সেকেন্ড। ‘ব্লেজ’-এর মাধ্যমে টাকা পাঠালে ব্যাংকিং কার্যক্রমের বাইরে এবং ছুটির দিনেও টাকা পাঠানো যাচ্ছে যে কোন সময়। এর মাধ্যমে প্রভূত উপকৃত হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। এর পাশাপাশি আরও ইতিবাচক সংবাদ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশী মুদ্রার মজুদ এই প্রথম অতিক্রম করেছে ৪৮ বিলিয়ন ডলার, যা টাকার অঙ্কে দাঁড়ায় ৭৫ লাখ ৯ হাজার ৮৬ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ দশমিক ১৫)। অবশ্য এর মধ্যে আইএমএফের কিছু অনুদানও রয়েছে। তবে রিজার্ভের পরিমাণ বাড়ার জন্য প্রধান কৃতিত্বের দাবিদার প্রবাসী বাংলাদেশীরা এবং সরকার প্রদত্ত নগদ প্রণোদনা। প্রবাসী আয়ের এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক শ্রম সংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক হিসাবে জানা যায়, বিশ্বের ১৭৪টি দেশে অন্তত এক কোটি ২০ লাখের মতো বাংলাদেশী রয়েছে, যাদের অধিকাংশই শ্রমিক। এর মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশই রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ৬টি দেশে। প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমজীবীদের সঙ্কট-সমস্যার কথা বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আরও কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রবাসীদের কল্যাণে কয়েক শ’ কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল গঠন করা হয়েছে। বিদেশ ফেরতদের স্বকর্মসংস্থানের জন্য সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হচ্ছে। তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে কোন জামানত লাগছে না। তদুপরি দেয়া হচ্ছে কৃষি খামার, গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি পালন, সেলাই মেশিনসহ আত্মনির্ভরশীল হওয়ার প্রশিক্ষণ।