চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে সরকারের কাছে ফের আবেদন

4

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে আবারও তার পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
সম্প্রতি খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই আবেদন করেন। দুইদিন আগে তা আইন মন্ত্রণালয়ে মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোমবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে খালেদা জিয়ার ভাই একটি আবেদন করেছেন। গত পরশু দিন সেটা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেই না। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের পর তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়, সেখান থেকে অনুমোদন হয়ে এলে তারপর তা বাস্তবায়ন হয়।
এদিকে, সোমবার সন্ধ্যায় একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসনের বোন বেগম সেলিমা ইসলামও খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করার বিষয়টি জানিয়েছেন।
সেলিমা বলেন, এখানে আধুনিক চিকিৎসার সাপোর্ট বা সুবিধার ঘাটতি আছে বলে চিকিৎসকরা তাদের বলেছেন।
তিনি বলেন, তার (খালেদা জিয়ার) শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। বুঝতেই পারছেন যে ২৬ দিন হাসপাতালে থেকে আসলো। আবার এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই হাসপাতালে যেতে হলো।
খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, তার হিমোগ্লোবিন অনেক কমে গেছে। তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ, হেঁটে চলতে পারছে না। সেজন্যই আমরা বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করতে চাই।
সেলিমা যোগ করেন, এখানে তো ডাক্তাররা সেভাবে চিকিৎসা দিতে পারছেন না। কারণ তাদের আধুনিক যন্ত্রপাতি বা সুবিধা নাই।
বিএনপি চেয়ারপারসনের বোন জানান, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা প্রয়োজন, চিকিৎসকরা এখন একটাই পরামর্শ দিচ্ছেন। সেজন্য তাদের ভাইবোনদের পক্ষ থেকে আবারও সরকারের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এটাই আমাদের আবেদন সরকারের কাছে যে তাকে (খালেদা জিয়া) চিকিৎসার জন্য যাওয়ার অনুমতি ওনারা (সরকার) যেন দেয়।
কোন দেশে নিয়ে চিকিৎসা করাতে চায় পরিবার- এই প্রশ্নে সেলিমা ইসলাম বলেন, সিঙ্গাপুর কাছে হবে এবং সেজন্য সিঙ্গাপুরকে তারা অগ্রাধিকার দেন। তিনি আরও বলেন, যে দেশেই অনুমতি মিলবে, সেখানেই তারা নেবেন।
প্রসঙ্গত, দুটি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া কারাবন্দি ছিলেন। নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আথ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত শনিবার রাতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি করা হয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায় ঘোষণার পর খালেদাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর এই মামলায় আপিলে তার আরও পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট।
একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন একই আদালত। রায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
গত বছরের মার্চে করোনা মহামারি শুরু হলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত করে কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে সরকার শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়। প্রথম দফা মুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে আসলে গত বছরের ২৫ আগস্ট বেগম জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে স্থায়ী মুক্তি চেয়ে আবেদন করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার দ্বিতীয় দফায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ছয় মাসের জন্য তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ায়। সর্বশেষ গত ২৫ মার্চ থেকে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়।
এই মেয়াদও শেষ হয়ে আসলে গত সেপ্টেম্বর মাসে শামীম ইস্কান্দার খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার আবেদন করেন। কিন্তু সরকার সেই অনুমতি দেয়নি। বিদেশে যাওয়া যাবে না এবং বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিতে হবে- আগের মতো এই দুটি শর্তে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে তার দণ্ড স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়ে দেয় সরকার।