সমঝোতা না হওয়ায় জলবায়ু সম্মেলনের সময় বেড়েছে

2

কাজিরবাজার ডেস্ক :
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ২৬তম জলবায়ু সম্মেলন শুক্রবার শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু খসড়া ঘোষণার পর টানা দুই দিনেও কোন সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারায় আয়োজনের সময় একদিন বাড়ানো হয়েছে। শেষ মুহূর্তের দর কষাকষিতে কয়লা ও অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকি প্রসঙ্গ এবং দরিদ্র দেশগুলোকে কী পরিমাণ অর্থ দেয়া হবে তা-ই প্রাধান্য পাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে কপ২৬’র প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কনফারেন্স অব পার্টিজের (কপ) ২৬তম সম্মেলন শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও জলবায়ু পরিবর্তনের বিপজ্জনক প্রভাব এড়াতে দেশগুলোর মধ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর আলোচনা, দর কষাকষি এখনও চলছে। তাই এই সময় বাড়ানো হয়েছে।
শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৬টায় সম্মেলনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে আনুষ্ঠানিক অধিবেশন বসার কথা। এই অধিবেশনেই সম্মেলনের চূড়ান্ত ঘোষণা অনুমোদন করা হবে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশগুলোর দরকষাকষি চলছিল। উল্লেখ্য, জলবায়ু সম্মেলনে সময় বৃদ্ধি নতুন কোন ঘটনা নয়। অতীতেও অনেক জলবায়ু সম্মেলনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় সময় বৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে পড়া ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রের দূতরা বলেছেন, তাদের ভূখণ্ড ধারণার চেয়েও দ্রুতগতিতে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। তাই দ্রুত জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব কমানো দরকার। এজন্য বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ কমানোর আর কোন বিকল্প নেই। আর বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ কমাতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানি ও কয়লার ব্যবহার দ্রুত কমাতে হবে। কিন্তু বেশ কিছু উন্নত এবং দ্রুত উন্নয়নশীল দেশ এ বিষয়টি গায়ে মাখাচ্ছে না। তারা নানাভাবে এ বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইছে। আবার তাদের এই জীবাশ্ম জ্বালানি ও কয়লার মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে উপকূলীয় ও দ্বীপ দেশগুলোর জলবায়ু ভয়ানক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তাদের সম্পদ ও প্রাণের ক্ষতির হচ্ছে। কিন্তু উন্নত দেশগুলো সেই ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রক্ষা করতে চাইছে না। এ নিয়েই মূলত জলবায়ু আলোচনায় শেষ মুহূর্তের দরকষাকষি চলছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে দেড় ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা গেলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপজ্জনক প্রভাব এড়ানো যাবে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে এ লক্ষ্য অর্জনে বেশিরভাগ দেশ প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। কিন্তু সেই লক্ষ্য তারা পূরণ করছে না। লক্ষ্য অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের কার্বন নিঃসরণ ৪৫ শতাংশ কমানো, আর ২০৫০ সালের মধ্যে মোটামুটি শূন্যের কাছাকাছি নিয়ে আসা দরকার।
গত ১০ নবেম্বর সম্মেলনের চুক্তির যে খসড়া প্রকাশিত হয়েছে তাতে কয়লা ও অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধে প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে জোরাল বক্তব্য নেই। পরিবেশকর্মীরাও চুক্তির এ খসড়ার তুমুল সমালোচনা করেছেন; তবে অনেকেই বলছেন, জাতিসংঘের এ ধরনের কোন নথিতে কয়লার কথা এভাবে আগে কখনই আসেনি, জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলনে ‘এই অগ্রগতিও কম নয়’। ২০০৯ সালে উন্নত দেশগুলো ২০২০ সালের মধ্যে দরিদ্র দেশগুলোর সহযোগিতায় জলবায়ু তহবিলে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষ পর্যন্ত তারা তাদের কথা রাখেনি। আর দীর্ঘ ১০ বছরে এই তহবিলের চাহিদা আরও বেড়ে গেছে। আইপিসিসি বলছে, এখন আর বছরে এক শ’ বিলিয়ন ডলার নয়, ট্রিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।
কপ২৬ এ এখন পর্যন্ত যত প্রতিশ্রুতি এসেছে তাতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়েও ২ দশমিক ৪ ডিগ্রী বেশিতে পৌঁছানোর পথে রয়েছে, এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ক্লাইমেট এ্যাকশন ট্র্যাকার। চূড়ান্ত চুক্তিতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকির বিরোধিতা করে লেখা অংশটুকু না রাখতে যেসব দেশ চাপ দিচ্ছে তার মধ্যে চীন ও সৌদি আরবও আছে বলে আলোচনাঘনিষ্ঠ কয়েক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
তবে এতে ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি ও দিক নির্দেশনার বিষয়গুলো উঠে এসেছে। সম্মেলনে অংশ নেয়া দেশগুলো কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনা, বন বিনাশের ইতি টানাসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। এরমধ্যে বিভিন্ন দেশের সরকারকে তাদের গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর পরিকল্পনা জানাতে সময়সীমা বেঁধে দেয়ার ওপর ব্যাপক জোর দেয়া হয়েছে। লন্ডন থেকে দেয়া ভাষণে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জলবায়ু তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ দিতে ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য ধনী দেশের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, গরিব দেশগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরিয়ে আনতে ‘টেবিলে আরও অর্থ ঢালো’।
২০২২ সালে জলবায়ু সম্মেলন মিসরে : জলবায়ুবিষয়ক সম্মেলন কপ২৭ আগামী বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত হবে মিসরে। দেশটির পরিবেশবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি গত সেপ্টেম্বরে তার দেশে কপ২৭ আয়োজন করার আগ্রহ প্রকাশের ঘোষণা দেন। উত্তর আফ্রিকার দেশটির রেড সি রিসোর্ট শারম-ইল-শেখ এই শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করবে।
এছাড়া ২০২৩ সালে জলবায়ু সম্মেলনের আয়োজন করবে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এক টুইট বার্তায় বিষয়টি জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রাশিদ আল-মাকতুম। বহু বছর পর এটি হবে মধ্যপ্রাচ্যে দ্বিতীয়বার এবং ওপেকভুক্ত কোন দেশে তৃতীয়বারের মতো বার্ষিক জলবায়ুবিষয়ক আলোচনা।