বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য দমনে যুক্ত হলেন বাংলাদেশের গণমাধ্যমকর্মীরা

6

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য দমনসহ বাংলাদেশের সমৃদ্ধ বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব¡ বিলীনের জন্য দায়ী সব ধরনের হুমকি স¤পর্কে জনগণকে সচেতন করার জন্য গণমাধ্যম গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বন্যপ্রাণী ব্যবসা-বাণিজ্যের তথ্য-উপাত্ত বিস্তারিত ও সঠিকভাবে গণমাধ্যমগুলোতে তুলে ধরতে পারলে তা বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্যের ধরন এবং গতি ধারা স¤পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা পেতে সাহায্য করবে। শুধুতাই ই নয়, এতে করেসরকারি কর্তৃপক্ষ ও বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধে উৎসাহী হবেন। ফলে বিশ্বব্যাপী বিপদাপন্ন অনেক বন্যপ্রাণী যেমনব াঘ, বনরুই, কচ্ছপ, হাঙ্গর ও শাপলা পাতার বেশ কিছু প্রজাতিকে চির তরে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে।
বিশ্বব্যাপী বিপন্ন এমন প্রজাতিসহ অসংখ্য প্রজাতির স্থলজ এবং জলজ বন্যপ্রাণীরআবাসস্থল আমাদের এই বাংলাদেশ।
কিন্তু স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে এদের একটা বড় অংশ আজ বিলুপ্ত প্রায়। দেশের বিভিন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওপরভিত্তি করে ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটি (ডাব্লিউসিএস) বাংলাদেশ,বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর একটি ডাটাবেস সংরক্ষণ করে আসছে।
২০১২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতিবেদনকৃত ৮৯০টি বন্যপ্রাণীর ব্যবসা-বাণিজ্য স¤পর্কিত ঘটনার মধ্যে শতকরা প্রায় ৬৪ ভাগ ক্ষেত্রেই বন্যপ্রাণী প্রজাতি সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে প্রাণীকে ভুলনামে সনাক্ত করা হয়েছে।
অনেক প্রতিবেদনেই জব্দকৃত প্রাণীবা দেহাংশের পরিমাণ, গ্রেফতার কৃত অপরাধীর সংখ্যা কিংবা পরবর্তী বিচারকার্য সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
বিস্তারিত এসব তথ্য-উপাত্ত বন্যপ্রাণী ব্যবসা-বাণিজ্যের ধরন ও গতিধারা স¤পর্কিত ধারণার পাশাপাশি সর্বস্তরের জনগনের মাঝে বন্যপ্রাণী ব্যবসা-বাণিজ্য দমনে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বন্যপ্রাণী ব্যবসা-বাণিজ্য এবং এ সংক্রান্ত অপরাধগুলোর প্রতিবেদনের গুণগত মানোন্নয়নে এবং গণমাধ্যমকর্মীদের সঠিক ও স¤পূর্ণ প্রতিবেদন লেখার দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডাব্লিউসিএস বাংলাদেশ ও বন অধিদপ্তর যৌথভাবে ৬ নভেম্বর রেস্ট ইন হোটেল মৌলভীবাজারে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করেছে।
দেশের শীর্ষ স্থানীয় মাধ্যমসমূহের ৪৫টি পত্রিকার প্রতিনিধি এই কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মৌলভীবাজার আদালতের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলী আহসান বলেন, বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্য দমনে একটা বড় চ্যালেঞ্জের জায়গাহলো অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করা। বন্যপ্রাণী মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রাণীটির সঠিক সনাক্তকরণ, অপরাধ চিহ্নিতকারী এবং গ্রেফতার ও জব্দকরণে নেতৃত্বদানকারী সংস্থার তথ্য, অপরাধ সংঘটনের সময় এবং স্থান, আটককৃত প্রাণীবা এদের দেহাংশের পরিমাণ এবং বাজারদর ইত্যাদি তথ্য প্রতিবেদনে তুলে আনতে হবে। বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্যের বিরুদ্ধে সাংবাদিক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিদসহ দেশের প্রতিটি নাগরিককে সরকারের সাথে একযোগে কাজ করতে হবে। আমাদের বন্যপ্রাণীরা আমাদের স¤পদ। যদি আমরা দ্রুতই কোন পদক্ষেপ না নেই অচিরেই আমরা এদের চির তরে হারিয়ে ফেলবো।
কর্মশালার প্রশিক্ষক ও ডাব্লিউসিএস বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই কর্মশালাটি অংশগ্রহণকারীগণ মাধ্যমকর্মীদেরকে বন্যপ্রাণীর ব্যবসা-বাণিজ্য স¤পর্কিত প্রতিবেদন সমূহের ক্রটি-বিচ্যুতি চিহ্নিত করে সঠিক ও তথ্যবহুল প্রতিবেদন লেখার ও জনগণকে সচেতন করে তোলার মাধ্যমে বন্যপ্রাণীর অবৈধব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধে সহায়ক ভূমিকা পালনের সুযোগ করে দিবে।
কর্মশালায় অংশ গ্রহণকারীগণ মাধ্যমকর্মীরা বিভিন্ন অনুশীলনে সক্রিয় অংশ গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিবেদনের ক্রটি ও তথ্য অপ্রতুলতা চিহ্নিত করে সঠিক ও তথ্যবহুল প্রতিবেদন লেখা, নিয়মিতভাবে বাণিজ্যকৃত প্রাণীসমূহ শনাক্ত করার উপায় ও বিশ্বব্যাপী বিপন্ন বন্যপ্রাণীর ব্যবসা-বাণিজ্য স¤পর্কিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন ও বিধিমালা সমূহস¤পর্কে ও জানতে পেরেছেন। অংশগ্রহণকারীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কর্মশালায় কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সকল স্বাস্থ্য বিধি কঠোরভাবে মেনে চলা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি এবং বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের এ এস এম জহির উদ্দিন আকন, পরিচালক, বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট, বন অধিদপ্তর, তাঁর সমাপনী বক্তব্যে বলেন, অবৈধ বন্যপ্রাণী ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করতে, গ্রেফতার করতে এবং বিচার কার্য স¤পন্ন করতে দেশের বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বন অধিদপ্তর এবং ডাব্লিউসিএস বাংলাদেশ সম্মিলিতভাবে প্রয়োজনীয় কার্যকরি প্রশিক্ষণ কর্মশালা নিয়মিতভাবে পরিচালনা করছে।
বন্যপ্রাণী ব্যবসা-বাণিজ্যের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা ও জনমত তৈরির মাধ্যমে এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধে বিচারকার্যের বিস্তারিত প্রতিবেদন তুলে ধরে গণমাধ্যমকর্মীরা ও আমাদের এই প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূণর্ ভূমিকা পালনকরতে পারেন।
এছাড়াও প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এ সালাম, বন অধিদপ্তর. ড. লস্কর মাকছুদুর রাহমান, লিগ্যাল অ্যাডভাইজার, মো. তারিকুলইসলাম, সিনিয়র অ্যাডভাইজার, এবং সামিউল মোহসেনিন, কো-অর্ডিনেটর, বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন প্রোগ্রাম, ডাব্লিউসিএস বাংলাদেশ।