সুস্পষ্টভাবে আইনের বিধিনিষেধ থাকলেও প্রকাশ্যে চলছে কিডনি কেনাবেচা। ফেসবুক গ্রুপ ও পেজে (এফ-কমার্স) কিডনি বেচাকেনার পোস্ট দিচ্ছে সংঘবদ্ধ দালালচক্র। তাদের টোপের শিকার হচ্ছেন গরিব অসহায় মানুষ। প্রলুব্ধ করে নামমাত্র মূল্যে কিডনি নিয়ে রোগীদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে চড়া দামে।
সর্বপ্রথম জীবিত ব্যক্তির কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৫৪ সালে। ’৬০-এর দশক থেকে নিয়মিত কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু হয়। বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও উন্নত হয়েছে। যে কোন সুস্থ ব্যক্তি কিডনি দান করে চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় থেকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। বাংলাদেশে ১৯৯৯ সালে প্রণীত হয় মানবদেহে অঙ্গপ্রতঙ্গ প্রতিস্থাপন আইন। ২০১৮ সালে এটি সংশোধন করা হয়। সংশোধিত আইনে কিডনি প্রতিস্থাপনের অনুমতি দেয়া হলেও তা ছিল সীমাবদ্ধ। আইনে অনাত্মীয় কারও কাছ থেকে অঙ্গদানের ব্যবস্থা ছিল না। এ কারণে বাংলাদেশে কিডনি প্রতিস্থাপনের সামর্থ্য থাকলেও এর প্রয়োগ হয়েছে খুব সীমিত। ‘ইচ্ছায় আত্মীয় বা অনাত্মীয়কে অঙ্গদান করা সুস্থ নাগরিকের মৌলিক অধিকার’ এই মর্মে ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম উচ্চ আদালতে একটি রিট দায়ের করেছিলেন ২০১৭ সালে। শুনানিতে আদালত সাতজন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির বক্তব্য শোনেন। ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত ‘মানবিক বিবেচনায় সহানুভূতিশীল হয়ে কেউ কেউ কিডনি দিতে পারবেন’ মর্মে আদেশ দেন। তবে কিডনি দেয়ার ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করার জন্য সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে একটি প্রত্যয়ন বোর্ড করতে হবে। এই বোর্ড দাতা ও গ্রহীতার সম্পর্ক যাচাই করবে। কোন্ পরিস্থিতিতে কিডনি দেয়া হচ্ছে এর ব্যাখ্যা দেবে। আর্থিক লেনদেন হচ্ছে কিনা, তাও যাচাই করবে। দেশে কিডনি কেনাবেচার আইনী কঠোরতার কারণে দালাল চক্র ভিন্নপথ বেছে নিয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী কিডনি ক্রয়-বিক্রয়কেন্দ্র, বাংলাদেশ কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট গ্রুপ, কিডনি-লিভার চিকিৎসাসেবা, কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট নেটওয়ার্ক, কিডনি পেশেন্ট কেয়ার এ্যান্ড গাইড- এসব নামে গ্রুপ খুলে একটি দালাল চক্র কিডনি কেনাবেচা শুরু করেছে। গ্রুপে রক্তের গ্রুপ উল্লেখ করে তারা কিডনির ডোনার আহ্বান করছে। তারা ডোনারদের সঙ্গে দুই-আড়াই লাখ টাকায় চুক্তি করে। পাসপোর্ট আছে এমন ডোনারদের প্রাধান্য দেয়া হয়। জাল কাগজপত্রে রোগীর স্বজন সাজিয়ে ডোনারকে ভারতে নিয়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়। দালালরা রোগীর কাছ থেকে আদায় করে ২০-২৫ লাখ টাকা। ডোনারের সঙ্গে চুক্তি করা হয় ৩/৪ লাখ টাকায়।
কিডনি ট্রন্সপ্লান্ট একটি জটিল প্রক্রিয়া। কিডনি দাতা এবং গ্রহীতাকে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসায় থাকতে হয়। চিকিৎসা প্রক্রিয়াও বেশ ব্যয়বহুল। একজন দরিদ্র্য ব্যক্তি তার কিডনি বিক্রয় করে চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় না থাকলে অল্প দিনের মধ্যেই তার মৃত্যু ঘটতে পারে। এ কারণে আইন কিংবা আদালত নানা দিক বিবেচনা করে কিডনি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্র সীমাবদ্ধ করে দেন। অসাধু দালাল চক্র বিষয়গুলো বিবেচনায় না নিয়ে শুধু অর্থের লোভে এই অমানবিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কঠোর হস্তে এই অমানবিক বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে।