স্পোর্টস ডেস্ক :
ফুটবলে বাংলাদেশ-ভারত লড়াই মানেই ভিন্ন আবহ। দুই দেশের সমর্থকদের মধ্যে বিরাজ করে টানটান উত্তেজনা। এখন অবশ্য ক্রিকেটসহ প্রায় সব খেলাতেই একই অবস্থা। ভারতের বিরুদ্ধে খেলা হলেই সাজ সাজ রব পড়ে যায় ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যে।
এমন আরেকটি উপলক্ষ দুয়ারে উপস্থিত। কেননা দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ খ্যাত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলে মুখোমুখি হচ্ছে দুুই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও ভারত। মালদ্বীপের মালের ন্যাশনাল ফুটবল স্টেডিয়ামে হাইভোল্টেজ ম্যাচটি মাঠে গড়াবে বাংলাদেশ সময় আজ বিকেল ৫টায়। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে টি স্পোর্টস চ্যানেল।
জয়ের জন্য মরিয়া থাকলেও ভারতের বিরুদ্ধে এই স্বাদ যেন ভুলেই গেছেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। সেই ২০০৩ সালের ১৮ জানুয়ারি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে সবশেষ জয় এসেছে। সেটিও ছিল এই সাফের মঞ্চে। ১৮ বছর পর একই মঞ্চে জয় খরা ঘোচাতে মরিয়া জামাল ভুঁইয়ার দল। ম্যাচের আগে দু’দলের কথাতে মনে হচ্ছে, যেন যুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছেন তারা! বাংলাদেশ দলের কোচ ও অধিনায়ক যেমন জয়ের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন; তেমনি ভারতীয় দলের কোচ ও অধিনায়কও জয় ছাড়া কিছুই ভাবছেন না। ফলে উত্তেজনাপূর্ণ ও জমজমাট ম্যাচের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
অবশ্য অনেকেরই আপত্তি আছে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের উত্তাপ নিয়ে। তাদের মতে, এখন তো আর দু’দলের লড়াইয়ে নেই সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা। অনেকটা বলেকয়ে ম্যাচ জিতে নেয় ভারত। যার প্রমাণ গত দেড় যুগে একবারও ভারতকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। অনেকে আবার এটাও বলছেন, ভারতের জয়ের পাল্লা ভারি থাকলেও দু’দল যখনই মুখোমুখি হয় উত্তাপের কমতি থাকে না। সাম্প্রতিক বছরের ম্যাচগুলোতেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর কলকাতার বিখ্যাত সল্ট লেক স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে তো প্রায় জিততেই চলেছিল লাল-সবুজের দেশ। দুর্দান্ত খেলা বাংলাদেশ খেলা শেষের দুই মিনিট আগে গোল হজম করে ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র করেছিল। যে কারণে উত্তেজনা-উত্তাপের কমতি নেই আজকের ম্যাচ নিয়েও। ভারতের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী যেমন বলেই দিয়েছেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচ সব সময়ই তার কাছে ‘যুদ্ধ’!
নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১-০ গোলে হারিয়ে শুভ সূচনা করেছে বাংলাদেশ। ভারতের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ম্যাচেও লক্ষ্য অভিন্ন। ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কোচ অস্কার ব্রুজোন বলেন, ‘আমরা জয় ছাড়া কিছুই ভাবছি না। ভারতের বিরুদ্ধে জিততে চাই’। কিন্তু বললেই তো আর হবে না; জিততে হলে করতে হবে গোল। কিন্তু বাংলার ছেলেরা গোলপোস্টের কাছে গেলে কেমন যেন খেই হারিয়ে ফেলেন। লঙ্কানদের বিরুদ্ধেও গোল করতে না পারার সমস্যা প্রকটভাবে দেখা গেছে। তাহলে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সফল ও শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে কিভাবে জয় আসবে? এ প্রসঙ্গে অস্কার বলেন, ‘সমস্যা দূর করে আমরা প্রতি ম্যাচেই গোল করতে চাই। আশা করি করব’। তবে বাস্তবতাও মাথায় রাখছেন বাংলার স্প্যানিশ কোচ, ‘আমি আগেই বলেছি ভারত ফেবারিট। উপমহাদেশে শুধু তাদের অন্যদের চেয়ে ভালো লীগ আছে। বিভিন্ন পজিশনে তাদের অনেক ভালো খেলোয়াড় আছে। তবে আমি মনে করি, এই ম্যাচে ভালো লড়াই হবে। আমরা লড়াই করব এবং জয়ের জন্যই খেলব।’
বাংলাদেশ কোচ বলেন, ‘এটা ঠিক ভারত শক্তিশালী দল। তবে আমরাও শক্তিশালী। আমরা এখানে এসেছি ভালো কিছু করার লক্ষ্যে। যদিও আমি মাত্র আটটি অনুশীলন সেশন পেয়েছি।’ বাংলাদেশের জন্য আতঙ্কের নাম ভারতীয় অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী। তারকা এই ফরোয়ার্ড বাংলার দলকে পেলেই যেন গোলোৎসবে মেতে ওঠেন! সবশেষ গত ৭ জুন দোহায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচেও শেষ দিকে জোড়া গোল করে হতাশ করেছিলেন বাংলাদেশকে। সুযোগসন্ধানী ভারতীয় অধিনায়ককে নিয়ে অস্কার বলেন, ‘ছেত্রীকে আমি ভালোভাবে চিনি ও জানি। আমি ওর কোচ ছিলাম। ও বক্সে ভয়ঙ্কর খেলোয়াড়। অল্প জায়গা থেকে গোল করতে পারে। তবে ওকে কীভাবে থামাতে হয়, সেটাও আমি জানি। আমরা সেভাবেই পরিকল্পনা করছি।’
বাংলাদেশের তারকা ডিফেন্ডার তপু বর্মণও সুনীল ছেত্রীকে নিষ্ক্রিয় করতে বদ্ধপরিকর, ‘অবশ্যই ছেত্রীকে আটকানোর সব চেষ্টা আমাদের থাকবে। আমি নিজেও একটু বেশিই সতর্ক থাকব।’ লঙ্কানদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পেনাল্টি গোলে জয় নিয়ে কটাক্ষ করে কথা বলেছেন ভারতীয় কোচ ইগর স্টিমাচ। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া বলেন, ‘এটা ভারতীয় কোচের নিজস্ব মত। হতে পারে ম্যাচের আগে মানসিক খেলা খেলছেন তিনি। ম্যাচের আগের এমনটা হয়ে থাকে। কাজেই এটাকে গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই। আমরা শুধু জয় নিয়েই ভাবছি। অবশ্যই ভারতের বিরুদ্ধে জিততে চাই।’
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে মিশন শুরু করছে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ সাতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত। যে কারণে কিছুটা হলেও চাপে আছেন ছেত্রীরা। বাংলাদেশকে সমীহ করে ভারতের ক্রোয়েশিয়ান কোচ ইগর স্টিমাচ বলেন, ‘বাংলাদেশ কোচ বদল করেছে। নতুন কোচের কৌশল ভিন্ন হতে পারে। কাজেই আমাদের জন্য ম্যাচটা কঠিন হতে পারে। সবকিছু সহজ ভাবছি না। তবে আমরা এখানে (মালদ্বীপ) এসেছি চ্যাম্পিয়ন হতেই।’ ভারতীয় অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কিছুদিন (গত জুনে) আগেই খেলেছি। আগেও অনেকবার খেলেছি। সব সময়ই লড়াইটা কঠিন। তাছাড়া বাংলাদেশ কোচ পরিবর্তন করেছে। প্রতিপক্ষ হিসেবে ওরা শক্তিশালী। আমার কাছে প্রতিটি ম্যাচই যুদ্ধের মতো। তাই লড়াইটা শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শতভাগ উজাড় করে দিতে হবে।’ অভিন্ন সুর ছেত্রীর সতীর্থ গুরপ্রীত সিংয়েরও, ‘সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের মান অনেক উন্নত হয়েছে। তাই কোনো ম্যাচই সহজ নয়। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমরা সেরাটা দিয়েই লড়ব।’