ধান বাংলাদেশে উৎপন্ন প্রধান খাদ্য ফসল। ভাত আমাদের দৈনন্দিন আহারেরও গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে। নদীমাতৃক বাংলার উর্বর পলিমাটিতে অতি সহজে কম পরিশ্রমে ধান চাষ করা আবহমান বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য। মাছে-ভাতে বাঙালী এই প্রবাদবাক্য আধুনিকতার বিকাশমান যুগেও তার স্বমর্যাদায় অধিষ্ঠিত। তাই ধানের আবাদ এ দেশের মাটি আর মানুষের অন্যতম অনুষঙ্গ বলাই চলে। ধান বলতে আমরা আমন, আউশ, বোরো ইত্যাদি বুঝে থাকি। লাল, কিছুটা বাদামি কিংবা সাদা রঙের চালের রকমফেরও আমরা দেখি। কালো ধানের চাষ বলতে গেলেই নতুন কোন কিছু ভিন্নতা বোঝায়। এমন আলাদা রঙের ধান চাষ শুরু হয়েছে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নে। সিঙ্গাপুর ফেরত রেজওয়ানুল সরকার সোহাগ দেশে প্রথমবারের মতো কালো ধানের চাষ করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ৩০ জুলাই জমিতে রোপণ করা এই কালো ধানের ফসল কাটা হবে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। ফসল ক্ষেতে থাকতেই কৃষকের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। এই ধানের বীজ সংগ্রহ করতে কৃষকরা চেষ্টা করছে।
রেজওয়ানুল সরকার সোহাগ চলতি মৌসুমে ৫২ শতাংশ জমিতে কালো ধানের চাষ করেছেন। সোহাগ ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে ছিলেন। কালো ধানের চাল প্রথম তিনি সিঙ্গাপুরেই দেখেন। উৎসাহিত হয়ে তিনি দেশে এই ধানের চাষ করার উদ্যোগ নেন। সিঙ্গাপুরে কালো ধানের চালের মূল্য বেশি। ৫ কেজি সাধারণ চাল সিঙ্গাপুরী ১২ থেকে ১৬ ডলারে কেনা যায়। কালো ধানের চাল কিনতে লাগে ২০ ডলার। ধারণা দেয়া হয় কালো চাল শরীরকে চর্বি জমা থেকে সুরক্ষিত রাখে। এ ছাড়া হজমের ক্ষেত্রেও বেশ উপযোগী। ধীরে-সুস্থে হজম হওয়ার জন্য ক্ষুধা প্রবৃত্তিও তাড়াতাড়ি আসে না। ইন্দোনেশিয়া থেকে বীজ সংগ্রহ করে সোহাগ দেশে এনে জমিতে তা রোপণ করেন গত ৩০ জুলাই। সোহাগ এই কালো চালের ওপর প্রামাণ্য চিত্র দেখে অবগত হয়েছেন এর বহু ইতিবাচক স্বাস্থ্যগত দিক। বিশেষ করে ডায়াবেটিস ও স্নায়ু রোগ প্রতিরোধে এই কালো চাল অত্যন্ত উপকারী। বার্ধক্য নিয়ন্ত্রণেও প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখে। তা ছাড়া ভিটামিন, ফাইবার ও মিনারেলের উপস্থিতিতে কালো ধান স্বাস্থ্যসম্মত। সঙ্গত কারণে কালো ধান উৎপাদনে তিনি উদ্যোগী হয়েছেন। এই ধানের উৎপাদনের পরিমাণ এবং মূল্য নির্ধারণ এখনই করা যাচ্ছে না। ধান ঘরে তুলে চাল করার পর পরিমাণ বোঝা যাবে। আর বাজারজাত করার মাধ্যমে জানা যাবে আর্থিক মূল্য। এর জন্য তাকে কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। সোহাগের ধারণা, প্রতি একরে ৩৫ মণ ধান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মূল্য যদি আকর্ষণীয় হয় তাহলে আগামীতে আরও বেশি বীজ বপন করবেন সোহাগ।
এই বিদেশী কালো ধানের চাল ঢাকায় বিভিন্ন কোম্পানি কেজিতে হাজার টাকায় বিক্রি করলেও তিনি কেজি প্রতি ৫০০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করবেন। কালো ধানের চাষ সারা দেশে সম্প্রসারণ করতে পারলে দেশের কৃষি অর্থনীতিতে ব্যাপক সুফল আসার সম্ভাবনা রয়েছে। রোপণ থেকে ঘরে তোলা অবধি অন্যান্য সাধারণ ধানের মতোই কালো ধানকে পরিচর্যা করতে হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং আমাদের মাটিও এই ধারনের উপযোগী। সুতরাং এর চাষ ব্যাপকভাবে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে।