কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশের উত্তরবঙ্গের প্রবেশপথ হিসেবে পরিচিত বগুড়া শহর থেকে ৫ কিলোটার ভেতরের একটি গ্রামে বসবাস করেন জালাল হোসেন-রুবিনা বেগম দম্পতি। একমাত্র ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন চাকরি সুবাদে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় বাস করছেন আজ প্রায় ১০ বছর যাবত। ব্যস্ততার কারণে বছরে একবারের বেশি চাইলেও বাড়ি যেতে পারেন না জাহাঙ্গীর। বাবা-মায়ের জন্য মন কেমন করলেও জীবিকার তাগিদে যে উপায় নেই যাওয়ার। আর তাই বেছে নিয়েছেন মুঠোফোনে ভিডিও কলে মা-বাবাকে দেখার পদ্ধতি। অফিস শেষে প্রতিদিনই ভিডিও কলে মায়ের সঙ্গে কথা বলেন মন খোলে। ভাগ্যিস প্রযুক্তির এত প্রসার ঘটেছে। না হলে দিনের পরদিন মা-বাবাকে না দেখেই দিন কাটাতে হতো জাহাঙ্গীরকে। তবে এই প্রযুক্তিই এখন সময় কাটানোর উৎস হিসেবে বেছে নিয়েছেন সিলেটের টিলাগড় এলাকার ষাটোর্ধ বাসিন্দা আজাদুর রহমান। এক ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল আজাদুর রহমানের। কিন্তু ছেলে এ লেভেল সম্পূর্ণ করেই পাড়ি জমিয়েছে যুক্তরাজ্যে। আর এক আত্মীয়ের ছেলে পছন্দ করে বিয়ে করে একই জায়গায় নিয়ে গেছে মেয়েকেও। কিছুদিন আগে হারিয়েছেন জীবনসঙ্গিনী শাপলা বেগমকেও। ছেলে-মেয়ে যুক্তরাজ্যে তাদের কাছে গিয়ে থাকার অনুরোধ করলেও দেশের মাটি ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছে হয় না তার। তবে কাটছে সময় মন্দ নয়। বাড়ির সামনের গলির মাথায় এক মোবাইল দোকানদারের কাছ থেকে ফেসবুকে এ্যাকাউন্ট খুলেছেন। খুঁজে পেয়েছেন নতুন সা¤্র্রাজ্য। পরিচিত-অপরিচিত কত বন্ধু যে এখানে! খুঁজে পেয়েছেন দীর্ঘদিনের হারিয়ে যাওয়া অনেক বন্ধুকেও। মন চাইলেই তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন ভিডিও কলে। এখন আর আগের মতো একাকিত্ব তাকে ঘিরে ধরতে পারে না।
শুধু জালাল হোসেন বা আজাদুর রহমানই নন। দেশে প্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে একাকিত্ব কেটেছে এমন অনেক প্রবীণের। তাদেরই একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা স্বপন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, অবসরের সময়টা যখন একঘেঁয়ে হয়ে উঠছিল দিন দিন তখনই ছেলের বউ ফেসবুকে একটি এ্যাকাউন্ট খুলে দেয়। এখন মোবাইলে চোখ বুলাতে বুলাতে সময়ই পাই না। কত কিছু দেখতে পারি। কত মানুষকে খুঁজে পাই এখানে।
প্রযুক্তির আলো শুধু তরুণদের মধ্যে নয় নতুন জীবন দিয়েছে দেশের এমন অনেক প্রবীণদেরও। আর তাইতো ৩১তম আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ডিজিটাল সমতা সকল বয়সের প্রাপ্যতা’। শুক্রবার বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও এই প্রতিপাদ্যে দিবসটি পালন করা হবে নানা আয়োজনে। দিবসটি উপলক্ষে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানায়, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রাক্কালে সকল বয়স-শ্রেণীর জনগণের জন্য ডিজিটাল সমতার ওপর গুরুত্ব দিয়েই এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে করোনা অতিমারীর বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এ বছর দিবসটি অনাড়ম্বরভাবে পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে আজ দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। প্রবীণদের বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে বিশেষ পোস্টার ও লিফলেট ছাপানো হয়েছে। এছাড়া দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে বিশ্ব প্রবীণ দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। বিশ্ববিদ্যালয়ের মিল্টন হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশে বয়স্ক রোগীর সংখ্যা কম হওয়ায় করোনায় অপেক্ষাকৃত মৃত্যু হার কম। এবার করোনা বুঝিয়ে দিয়েছে যেসব দেশের মানুষের বয়স ৬৫ বছর বয়সের বেশি সেসব দেশে মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি। যেমনটি ইউরোপ-আমেরিকায় দেখা গেছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সী রোগী ৬০ শতাংশ হওয়ায় মৃত্যুহার কম হয়েছে। আর অন্যান্য দেশে ষাটোর্ধ রোগী ৬০ শতাংশেরও বেশি। ফলে সেসব দেশে করোনায় অপেক্ষাকৃত বেশি মৃত্যু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার ইক্যুয়িটি মেইনটেইন করছে। যে যে অবস্থায় হোক, সেটা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কিংবা বয়স্কদের ক্ষেত্রে, কীভাবে তাদের অসুস্থতা কমানো যায় সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা যারা আছি, সবাই সব বয়সী রোগীকে সমানভাবে সেবা দিতে চাই। করোনা আমাদের শিখিয়েছে বয়স্কদেরই শুধু ডিমেনশিয়া হয় না, মানসিক অসুস্থতা শুধু বয়স্কদেরই হচ্ছে না, এই বিষয়গুলো সবার ক্ষেত্রেই দেখা দিয়েছে।