কাজিরবাজার ডেস্ক :
নতুন নির্বাচন কমিশনও আইন অনুযায়ী গঠিত হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রাক্কালে বিএনপি নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসার আগেই বিএনপি নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। নতুন নির্বাচন কমিশনও আইন অনুযায়ী গঠিত হবে এবং যথাসময়েই নির্বাচন হবে।
শনিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমন্ডলীর সভার শুরুতে সূচনা বক্তব্যে রাখতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্যদের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, সম্পাদকমন্ডলীর সভায় সময় নষ্ট না করে দ্রুতই সারাদেশে মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিয়ন-উপজেলা-জেলা-মহানগর শাখা কমিটিগুলো সম্মেলনের মাধ্যমে পুনর্গঠন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের যেসব জেলা-মহানগরে দলের মধ্যে বিবাদ বা কোন্দল রয়েছে তা চিহ্নিত করে কঠোর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দ্রুত নিরসন এবং চলমান স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভোটারদের মন জয় করার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, স্থানীয় নির্বাচনে কোন ধরনের হস্তক্ষেপ যেন না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকারসহ উপ-নির্বাচনগুলোও যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয় সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের বিশেষ দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। বৈঠকে বলা হয়, আগামী নির্বাচনের আগেই সারাদেশে দলকে ঐক্যবদ্ধ, সুশৃঙ্খল এবং ঐক্যের বাঁধনে বাঁধতে হবে, যেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ রাজপথে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা কিংবা নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করতে না পারে। এছাড়া বৈঠকে ভুঁইফোড় সংগঠনগুলো যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি কোন মন্ত্রী-এমপি বা কেন্দ্রীয় নেতারা যেন এসব ভুঁইফোড় সংগঠনগুলোর কোন অনুষ্ঠানে না যান সে ব্যাপারে অনুরোধ জানানো হয়।
এদিকে, সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে আরও বলেন, রাষ্ট্রপতির আহ্বানে ও সব দলের সঙ্গে আলোচনা করেই সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। সেখানে বিএনপিসহ সব দলের প্রতিনিধিত্ব ছিল। এবারও সব রকম গ্রহণযোগ্য পন্থায় নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে।
আগাম নির্বাচন বা দলের আগাম সম্মেলনের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন আইন অনুযায়ী যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের দলের সম্মেলনও নির্ধারিত সময়ে হবে। আওয়ামী লীগে আগাম সম্মেলনের নজির নেই।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, বিএনপির মতো আওয়ামী লীগের জাম্বু জেট কেন্দ্রীয় কমিটি না। আমাদের বর্তমান কমিটির মেয়াদ আগামী বছর ডিসেম্বরে শেষ হবে। আমাদেরও আগে বিএনপি ৫০১ এক সদস্যের জাম্বু জেট কমিটি করেছিল। মিডিয়াতে দেখলাম সেই নির্বাহী কমিটির এটাই তাদের প্রথম সভা। সিরিজ সভা হচ্ছে। এই সভায় তাদের দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের বিষয় নেই।
তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চা না করে বিশেষ সিরিজ সভা মানে বিএনপি সরকারবিরোধী সিরিজ ষড়যন্ত্রের গোপন সভা করছে। কিভাবে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা যায়, সরকার হটাবে, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উস্কানি দেবে এটা সেই সভা। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র তারা করে। আগামী বছর নির্বাচন কমিশন গঠনকে কেন্দ্র করে বিএনপি আবার নতুন করে ষড়যন্ত্র করছে।
বিএনপির সব ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলার জবাব দেয়া হবে। তিনি বলেন, আমাদের এক বছর আগে বিএনপির কমিটি হয়েছে। সেই কমিটির মিটিং হয় তিন বছর পর। তারা কোন জেলা-উপজেলা সম্মেলন করেনি। তারা মুখে মুখে গণতন্ত্রের বুলি আওরায়। তাদের সম্মেলন হয় না, কমিটি হয় না, পার্টিতে গণতন্ত্র নেই। সেই বিএনপি কিভাবে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে। অবৈধভাবে ক্ষমতা গ্রহণকারী জিয়ার দলে কোন গণতন্ত্র নেই।
ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডাঃ দীপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন ও শফিউল আলম নাদেল, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ত্রাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, শিক্ষা ও মানব সম্পদ সম্পাদক সামসুন্নাহার চাঁপা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকী, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খানসহ সম্পাদকমন্ডলীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
