৭ মার্চের ভাষণ পাঠ্যপুস্তকে সংযোগ করুন

10

১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা ৭ মার্চ বাঙালীর ঐতিহাসিক তাৎপর্যের এক অবিস্মরণীয় কালপর্ব। বঙ্গবন্ধুর উদাত্ত আহ্বানে সাত কোটি বাঙালীর হৃদয় কাঁপানো যে অনন্য ভাষণটি জনসমুদ্রে উপস্থাপিত হয় তা যেন ঐতিহ্যিক বলয়ের এক অভাবনীয় স্ফুরণ। ৭ মার্চের সেই উত্তাল জনস্রোতের জোয়ারে অবগাহন করে বঙ্গবন্ধু তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তার, স্বদেশ প্রেমের অনমনীয়বোধ ছাড়াও আপামর বাঙালীর প্রতি সচেতন দায়বদ্ধতায় বজ্রকণ্ঠে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত করলেন মুক্তির মহামন্ত্র। অমিত তেজ আর দুর্জয় সাহসে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেদ করার যে অমৃত বাণী জনগণের মাঝে সম্প্রসারিত সেটাই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে প্রবলভাবে আলোড়িতই শুধু নয়, বরং ত্বরান্বিত করতেও উদ্দীপকের কাজ করে। বজ্রকণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর বাগ্মিতার নান্দনিক শৌর্য তার স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। সেখানে বিষয়বস্তুর অনন্য অভিযোজনে উপস্থিত বক্তৃতার অপরিমেয় আবেদনে মুক্তিকামী বাঙালী যে দিকনির্দেশনা পেয়ে যায় তা যেন সুচিন্তিত মনন চেতনায় রাজনৈতিক প্রজ্ঞারও অবিস্মরণীয় বাণী। যা বিশ্ব ইতিহাসের অসাধারণ মুক্তির বারতা হিসেবেও অভিষিক্ত হয়ে যায়। ইউনেস্কো তার ঐতিহ্যিক দলিলে বঙ্গবন্ধুর এই বক্তৃতাকে অন্তর্ভুক্ত করে জাতির জনককে বিশ্ব মর্যাদায় দাঁড় করিয়ে দেয়। সঙ্গত কারণে ৭ মার্চের উদাত্ত আহ্বান শুধু কোন সাধারণ ভাষণ নয়, বরং স্বাধীনতা ও বাঙালীর দুরন্ত অভিগমনের এক অনন্য বৈপ্লবিক জোয়ার।
মহামান্য আদালত সেই ঐতিহাসিক ভাষণকে এখন শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকে সম্পৃক্ত করার নির্দেশনা জারি করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর সেই অগ্নিভাষণের ধারাবাহিক ফলশ্রুতি। সঙ্গত কারণে দেশের উদীয়মান প্রজন্ম, জাতি গঠনের কারিগরদেরও এই অসামান্য ভাষণের তাৎপর্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নিজেদের শাণিত করতে উদ্বুদ্ধ করবে। এখনও স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের আস্ফালন এবং অপশক্তির রোষানল দেশকে তাড়িত করে। ফলে সময়ের প্রজন্মকে তাদের পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে এই ভাষণকে শিক্ষণীয় বিষয় হিসেবে চর্চা করানোও দেশ ও জনগণের স্বার্থে জরুরী।
১৯৭১ সালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বভাবসুলভ তর্জনী উঁচিয়ে জাতিকে যে উদাত্ত আহ্বানে সাড়া জাগিয়েছিলেন তেমন ভাস্কর্য নির্মাণও দেশের জন্য অত্যন্ত জরুরী। ঐতিহ্যিক ভাষণের সেই মঞ্চ পুনর্নির্মাণেরও নির্দেশ আসে হাইকোর্টের পক্ষ থেকে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে মঞ্চ পুনর্নির্মাণের জন্য বিভিন্ন স্থাপনা অপসারণের কাজ শুরু করে দিয়েছে। অতি দ্রুত কর্মপ্রকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন সময়ের দাবি।