শাহ আলম শামীম কুলাউড়া থেকে :
বহুল আলোচিত, সমালোচিত কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, ঐক্যফ্রন্ট থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মৌলভীবাজার-২ কুলাউড়া আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদের বরাদ্দকৃত ২০২০-২১ অর্থ বছরের (“সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ” প্রকল্পের আওতায় সরকার থেকে পাওয়া) ১ম পর্যায়ের ১৭০টি টিউবওয়েল যারা বরাদ্দ পেয়েছেন সেই তালিকায় যাদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে তাতে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণ করা হয়েছে। সেই তালিকায় দেখা গেছে কুলাউড়া পৌর শহরসহ সবক’টি ইউনিয়নের অনেক ধর্নাঢ্য ও রাজনৈতিক ব্যক্তি, প্রবাসী, আইনজীবী, শিক্ষক ও ব্যবসায়ীর নাম রয়েছে। তালিকা প্রস্তুতে ইউনিয়ন পর্যায়ে কোন চেয়ারম্যান বা মেম্বারদের সাথে কোন ধরণের সমন্বয় করা হয়নি। যার কারণে এই তালিকা তৈরিতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। তালিকাটি এমপি’র ব্যক্তিগত সহকারী, অফিস সহকারী, সমন্বয়কারীসহ তাঁর অনুসারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করলে মুহূর্তের মধ্যে দেশ ও বিদেশে চাউর হলে নেট দুনিয়ায় তা ভাইরাল হয়। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে এমপি’র প্রতি বিষোদাগার করেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার শত শত লোকজন। তবে এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেছেন, এক কথায় আমি বলতে পারি, আমি যারে প্রয়োজন মনে করেছি তাকেই টিউবওয়েল দিয়েছি।
এমপি সুলতান মনসুর গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিজয়ের ৩৮ বছর বলে বক্তব্য দিয়ে সমালোচিত হয়ে কুলাউড়া ছাড়েন। করোনাকালীন সময়ে এমপি’র কাছে মুঠোফোনে কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের এক বাসিন্দা ত্রাণ চাইলে তিনি তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে হাকালুকি হাওরে গিয়ে ডুব দিয়ে মরতে বলেন। তাঁর এ ধরণের বক্তব্যের একটি ফোনালাপ সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর আর তিনি কুলাউড়া না ফিরে সাধারণ জনগণের সাথে কোন ধরণের যোগাযোগ ছাড়াই করোনা অজুহাতে দীর্ঘ ১০ মাস থেকে ঢাকায় অবস্থান করছেন। এই সুযোগে এমপি’র কুলাউড়ার দাপ্তরিক অফিস বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি আখড়ায় পরিণত হয়েছে। তাঁর সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিনিধিরা ইচ্ছামাফিক টাকার বিনিময়ে সরকারি টিউবওয়েল, স্যোলার (সৌর বিদ্যুৎ) বরাদ্দ দিচ্ছেন তাদের ঘনিষ্ঠজন ও এমপি’র অনুসারীদের। সাম্প্রতি কিছু দিন আগে সরকারী স্যোলার (সৌর বিদ্যুৎ) বিতরণেও ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে।
উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোঃ আব্দুস শহীদ ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সভাপতি মোঃ ছয়ফুর রহমান আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও ধানের শীষের এমপি সুলতান মনসুরের সরকারি টিউবওয়েলসহ আর বিভিন্ন কাজের সমন্বয় ও তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানা গেছে। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এমপি নির্বাচিত হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তাঁর যুবলীগ প্রীতি (হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু) দেখে অনেক বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন তাকে ভুলতে বসেছেন। সবাই মনে করছেন, ধানের শীষে ভোট দিয়ে সুলতান মনসুরকে এমপি নির্বাচিত করে তারা চরম ভুল করেছেন। যার কারণে এখন সুলতান মনসুর বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে ভুলে গেছেন।
এমপি’র (জনস্বাস্থ্য বিষয়ক) টিউবওয়েল বরাদ্দের তালিকার প্রণয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সভাপতি মোঃ ছয়ফুর রহমান বলেন, টিউবওয়েল বরাদ্দ এটা কেবল এমপি’র সিদ্ধান্ত। নেতাকর্মীদের তিনি খুশি রাখতে সমন্বয় করে টিউবওয়েল বরাদ্দ দিয়েছেন। এসব বিষয়ে কোন কিছু জানতে চাইলে সরাসরি এমপি’র সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
এ ব্যাপারে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ এমপি মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, এসব বিষয়ে সামনা সামনি কথা বলা উচিত। আমি তো তোমারে চিনিয়ারও না দেখিয়ারও না। এক কথায় আমি বলতে পারি, আমি যারে প্রয়োজন মনে করেছি তাকে টিউবওয়েল দিয়েছি। গরীবরা টিউবওয়েল থেকে বঞ্চিত কিন্তুু ধনীরা টিউবওয়েল পাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কে ধনী-গরীব এটা আমার বিবেচনার বিষয় নয়, পানির যার প্রয়োজন তাকে টিউবওয়েল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতাকে দিয়ে টিউবওয়েলের তালিকা তৈরি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যাকে ভালো মনে করেছি, প্রয়োজন মনে করেছি তাকে দিয়ে টিউবওয়েলের তালিকা করিয়েছি। খুব স্বচ্ছভাবে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আমি কারে দিয়া কাজ করাচ্ছি, এটা কেবল আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার কাছে সে একজন সমাজকর্মী, রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে বিবেচনা করে তাকে দিয়েই তালিকা করিয়েছি।
টিউবওয়েল বরাদ্দে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব আমাকে বলে লাভ নেই, এসব বিষয়ে মতিন মিয়া ও শাহিনকে (আব্দুল মতিন ও এম এম শাহিন, সাবেক দুই সাংসদ) জিজ্ঞেস করো। কারণ অতীতে কুলাউড়ায় টিউবওয়েল বরাদ্দে অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে।