করোনাকালে প্রতারণা

7

করোনাকালে সমাজ বিচিত্র প্রতারক প্রত্যক্ষ করছে। বিশ্বে যখনই মহামারী বা অতিমারীর কাল আসে তখনই নানা অজুহাতে নানা ধরনের প্রতারক এবং ব্যবসায়ী গজিয়ে ওঠে আঙুল ফুলে কলাগাছের মতো। তাদের উদ্দেশ্য একটাই, মানুষকে ঠকিয়ে অর্থোপার্জন। মানুষের কোন উপকার করে টাকা উপার্জন করলে না হয় কথা ছিল। উপকৃত ব্যক্তি চড়াদামে উপকার কেনার পরও বখশিশ দিতে হয়তো আপত্তি করতেন না। কিন্তু এ একেবারে মহাঠগবাজি। দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব ঘটার পর পর আমরা মহাপ্রতারক হিসেবে দেখেছি শাহেদ ও সাবরিনাকে। কিভাবে করোনা শনাক্তের মিথ্যা পরীক্ষার মিথ্যা রিপোর্ট দিয়ে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক বনে গিয়েছিল তারা অল্পকালের মধ্যেই। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। শেষ পর্যন্ত শ্রীঘরে ঠাঁই হয়েছে তাদের।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমতি নিয়ে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে বুথ বসিয়ে নমুনা সংগ্রহের কাজ করছিল জেকেজি। এ কাজ পেতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দু’জন পরিচালক এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দু’জন অতিরিক্ত সচিবের সহায়তা ছিল। এরা আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকে বিরাট বিপদে ফেলে দিয়েছিল।
এ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে আমরা পেলাম টিকা প্রদানের তারিখ নিয়ে প্রতারণা করা করোনাকালীন নব্য রাজাকার। বিদেশগামীরাই ছিল ওদের টার্গেট। করোনার টিকাদান কর্মসূচী ঘিরে প্রতারণার ফাঁদ পাতে ওরা। সরকারী সাতটি হাসপাতালের সামনে ওঁৎপেতে থাকত চক্রটি। বিশেষ করে বিদেশগামী ব্যক্তিদের টার্গেট করত। এরপর মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে বিদেশগামী ব্যক্তিদের দ্রুত করোনার টিকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল এই প্রতারক চক্র। এই প্রলোভন দেখিয়ে জনপ্রতি আড়াই থেকে পাঁচ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল তারা। এভাবেই চক্রটি দুই শতাধিক মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাদেরও শেষ রক্ষা হয়নি। আইনের জালে ধরা পড়েছে তারা। এদের সঙ্গে সরকারী হাসপাতালের কর্মচারী-কর্মকর্তারা যুক্ত আছে কিনা, আগামীতে তদন্তেই সেটি উঠে আসবে। করোনার সময়ে মানুষের বিবিধ বিপন্নতা রয়েছে। তার ওপর টিকা প্রাপ্তি নিয়েও রয়েছে উৎকণ্ঠা ও প্রতীক্ষা। এরকম একটি অতিমারীর ক্রান্তিকালে যারা প্রতারণা করছে, অবশ্যই তাদের শক্ত হাতে দমন করতে হবে। এ জন্যে ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষের অভিযোগ আমলে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর হতে হবে।