মহান বিজয় দিবস আজ

58

DSC_0399কাজিরবাজার ডেস্ক :
মহান বিজয় দিবস আজ। রক্তস্নাত বিজয়ের ৪৩তম বার্ষিকী। আজ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের দিন। দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র সংগ্রাম করে বহু প্রাণ আর রক্তের বিনিময়ে এদিনে বাঙালি ছিনিয়ে আনে বিজয়ের লাল সূর্য। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের মুক্তিকামী মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের পর এদিন আত্মসমর্পণ করে মুক্তিকামী মানুষের কাছে। ১৯৪৭ সালে ইংরেজদের শাসন থেকে এদেশ মুক্ত হলেও ফের বাধা হিসেবে দেখা দেয় পাকিস্তানি শোষক গোষ্ঠীর অন্যায় শাসন। বাঙালি বঞ্চিত হতে থাকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে। পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদ লুট করে নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে গড়ে তোলা হয় সম্পদের পাহাড়। তাদের সে অত্যাচার-নির্যাতনের প্রতিবাদে ধীরে ধীরে জেগে উঠে দামাল বাঙালি। ধাপে ধাপে আঘাত হানতে থাকে শাসনযন্ত্রে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, সাতান্নর স্বায়ত্তশাসন দাবি, বাষট্টি ও উনসত্তরের গণ-আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের মার্চে দুরন্ত বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তির সংগ্রামে। ২৫শে মার্চ কাল রাতে পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী শুরু করে নির্মম নিধনযজ্ঞ। এরপর আসে মহান স্বাধীনতার ঘোষণা। দখলদার বাহিনীকে বিতাড়নে শুরু হয় অদম্য সংগ্রাম। ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধে জীবন দান করেন লাখ লাখ বাঙালি। অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর আসে সেই কাক্সিক্ষত বিজয়। সে সময়ের রেসকোর্স ময়দান বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী ও ভারতের মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি বাহিনী। অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। হানাদার বাহিনীর এই আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে দীর্ঘ প্রায় দু’যুগের পাকিস্তানি শোষণ আর বঞ্চনার। নির্যাতন আর নিষ্পেষণের কবল থেকে মুক্ত হয়  জাতি।
আজ পরম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় পুরো জাতি স্মরণ করবে মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী লাখো শহীদদের। যাদের জীবন উৎসর্গে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। একই সঙ্গে প্রত্যয় ব্যক্ত হবে সমৃদ্ধ আগামীর বাংলাদেশ গড়ার। বিজয়ের এ দিবসে সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও তাদের রায় কার্যকরের দাবি উচ্চারিত হবে সমবেত কণ্ঠে। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে পালিত হবে নানা কর্মসূচি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনভর পালন করবে বিজয় দিবসের কর্মসূচি। দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বাণী দিয়েছেন।
আজ সরকারি ছুটির দিন। দিবসটি উপলক্ষে আজ সকালে সারা দেশের সকল সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা ওড়ানো হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পালিত হবে নানা কর্মসূচি। সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে দিবসের কর্মসূচির সূচনা করবেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশী কূটনীতিকবৃন্দ, স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যগণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরস্থ জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে বীর মুক্তিযোদ্ধা, সশস্ত্রবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বর্ণাঢ্য  কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ এতে প্রধান  অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলোকে সাজানো হয়েছে জাতীয় ও রঙ-বেরঙের পতাকা দিয়ে। বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আজ জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। রেডিও-টেলিভিশনে প্রচার করা হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মসজিদ, মন্দির ও গীর্জা প্যাগোডায় অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা। এতিমখানা,  হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের সকল শিশুপার্ক ও জাদুঘরসমূহ বিনাটিকিটে উন্মুক্ত রাখা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার  তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে সূচনা হবে বিজয় দিবসের কর্মসূচি। দিবসটি উপলক্ষে প্রত্যুষে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ঢল নামবে সাধারণ মানুষের। বিজয় আবেগে উদ্বেলিত সাধারণ মানুষের ফুলে ফুলে ছেয়ে যাবে জাতীয় স্মৃতিসৌধ আর সকল শহীদ মিনার। দেশ জুড়ে উচ্চারিত হবে বঙ্গবন্ধুর সেই বজ্রকণ্ঠ। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোতে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিজয় দিবসের কর্মসূচি পালিত হবে।
১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয় ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৬টা ৩৪ মিনিটে  সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন। সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। এছাড়া ঢাকা মহানগরীর অন্তর্গত সকল থানা শাখা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও জাতীয় সংসদ সদস্যগণ নিজ নিজ এলাকা থেকে বিজয় র‌্যালিসহকারে পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হয়ে শিখা চিরন্তনে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের সময় বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে বিজয় মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় অনুষ্ঠেয় কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক লে. কর্ণেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আলহাজ এডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আব্দুর রহমান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করবেন। বিজয় দিবসের পরদিন ১৭ই ডিসেম্বর বুধবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে  আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি পালনের জন্য দলের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বিজয় দিবস উপলক্ষে কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আজ ভোর ৬টায় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বীর শহীদের প্রতি দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন তিনি। এরপর সকাল সাড়ে ৭টায় রাজধানীর শেরেবাংলানগরস্থ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন তিনি। গতকাল এক বিবৃতিতে দলের পক্ষ থেকে বিজয় দিবসের এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বিএনপির কর্মসূচিগুলো হলো- দলের চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সাভারস্থ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, সকাল সাড়ে ৭টায় শেরেবাংলানগরস্থ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও ফাতেহা পাঠ।
সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। রাজধানীসহ সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও কূটনৈতিক এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানসমূহের নিñিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে দেশব্যাপী র‌্যাবের ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাকে কয়েক হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া সকল ব্যাটালিয়ন, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং বিভিন্ন আয়োজকদের সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক মহান বিজয় দিবসের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে, র‌্যাবের বোম ও  ডগ স্কোয়াড কর্তৃক ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর স্থানে সুইপিং করা, চেকপোস্টের মাধ্যমে তল্লাশি করা এবং অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা রোধে র‌্যাবের প্রতিটি ব্যাটালিয়নে বিশেষ স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স স্ট্যান্ডবাই থাকবে। এছাড়া জাতীয় স্মৃতিসৌধ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বিনোদন কেন্দ্র ও অন্যান্য স্থান যেখানে জনসমাগম হবে সেসব স্থানে সাধারণ জনগণ যাতে হয়রানি অথবা সন্ত্রাসীর কবলে না পড়ে সে ব্যাপারে যথাযথ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষপাঞ্জলি অর্পণ অনুষ্ঠান চলাকালে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা রক্ষা ও যানজট  নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য ভোর সাড়ে ৪টা থেকে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বাস, ট্রাক, লরিসহ বড় গাড়ি বিকল্প সড়কে চলাচল করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর ট্রাফিক সূত্র জানায়, বিজয় দিবস উপলক্ষে গাবতলী আমিন বাজার ব্রিজ-সাভার রোড পরিহার করে বিকল্প রাস্তা হিসেবে ঢাকা এয়ারপোর্ট রোড-উত্তরা-আবদুল্লাহপুর ক্রসিং-আশুলিয়া সড়ক হয়ে চলাচল করবে। আরিচা হতে আমিনবাজার হয়ে ঢাকাগামী ওই যানবাহনসমূহ নবীনগর বাজার হতে আশুলিয়া হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করবে। টাঙ্গাইল হতে আশুলিয়া হয়ে ঢাকাগামী যানবাহনসমূহ কালিয়াকৈর-গাজীপুর চৌরাস্তা-টঙ্গী হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করবে। এছাড়া বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীবর্গ, সামরিক, আধা-সামরিক, দেশী-বিদেশী কূটনৈতিকবৃন্দ, খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। ওই অনুষ্ঠানে আগত অতিথিবৃন্দের যানবাহন সুষ্ঠুভাবে চলাচলের জন্য বঙ্গভবনের আশপাশ এলাকায় চলাচলরত গাড়ি ১৬ই ডিসেম্বর বেলা ১২টা থেকে বঙ্গভবনের অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত জিরো পয়েন্ট থেকে গুলিস্তান আন্ডারপাস-রাজউক ক্রসিং পযন্ত সকল প্রকার বাণিজ্যিক যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
প্রস্তুত সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে নতুনরূপে সাজানো হয়েছে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধকে। দেশের সূর্য সন্তানদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা জানাতে জাতি অপেক্ষা করছে বিজয়ের শুভলগ্নে। বিজয়ের এই ৪৪ বছরে জাতির শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় সিক্ত হতে পুরোপুরি প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ। জাতির গৌরব আর অহংকারের এ দিনটিতে সৌধ প্রাঙ্গণে ঢল নামবে লাখো জনতার। তাদের হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে শহীদ বেদি। গণপূর্ত বিভাগের কর্মীদের দুই সপ্তাহের অক্লান্ত পরিশ্রমে এক নতুন রূপ ধারণ করেছে সৌধ প্রাঙ্গণ। নানা রঙের বাহারি ফুলের চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে স্মৃতিসৌধের সবুজ চত্বর। চত্বরের সিঁড়ি ও নানা স্থাপনায় পড়েছে রঙ-তুলির আচড়। জাতীয় স্মৃতিসৌধের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, দিনটিকে সামনে রেখে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। দিনটির প্রথম প্রহরেই রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী শহীদ বেধিতে ফুল দিয়ে বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। তাই সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে যাবতীয় গার্ড অব অনারের মহড়া শেষ হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সৌধ এলাকায় নিরাপত্তা চৌকি, পর্যবেক্ষণ টাওয়ারসহ বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। এ প্রসঙ্গে আশুলিয়া থানার ওসি শেখ বদরুল আলম জানান, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও এর আশপাশের এলাকাজুড়ে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া সাদা পোশাকে পুলিশের নজরদারি বাড়ানোসহ নিরাপত্তার স্বার্থে সৌধ প্রাঙ্গণের বিভিন্ন পয়েন্টে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ১৬ই ডিসেম্বর সকালে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেত্রী জাতীর বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার পর জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হবে জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সারা দেশের ন্যায় সিলেটেও সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল রাত ১২টা ১ মিনিটে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্প মাল্য অর্পণ করা হয়। এ সময় গোটা শহীদ মিনার এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। শহীদ মিনারে পুষ্প মাল্য অর্পণকারীদের মধ্যে ছিল শহীদ মিনার বাস্তবায়ন পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ও মহানগর ইউনিট কমান্ড, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, ডিআইজি সিলেট রেঞ্জ, পুলিশ সুপার, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, সিলেট সিটি কর্পোরেশন, জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ, জেলা ও মহানগর বিএনপি, জাসদ, কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়।