বারবার রিমান্ডে নিয়েও পরীর কাছে কিছুই পায়নি সিআইডি ॥ সাকলায়েনের ভিডিও নিয়ে তোলপাড়

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
মাদক মামলায় ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছুই পায়নি সিআইডি। তবে তার সঙ্গে কাদের যোগাযোগ ছিল সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে বলে দাবি সিআইডির। এদিকে পরীমনি ও বিতর্কিত মডেল ফারিহা মাহবুব পিয়াসাসহ ৮ জনের ব্যাংক এ্যাকাউন্টের তথ্য তলব করেছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বুধবার বেসরকারী কয়েকটি ব্যাংক থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বুধবার রিমান্ড শেষ হওয়ায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে পরীর কস্টিউম ডিজাইনার জিমি ও ফারিয়া পিয়াসাকে। তাদের প্রয়োজনে ফের রিমান্ডে আনা হতে পারে বলে জানিয়েছে তদন্তকারীরা। এদিকে পরীমনির সঙ্গে ডিবি কর্মকর্তা সাকলায়েনের ঘনিষ্ঠতার একটি ভিডিও ফাঁস হয়ে যাওয়ায় পুলিশে চলছে তোলপাড়। ওই ভিডিওটি কেন আমেরিকাপ্রবাসী এক সাংবাদিকের এডমিন থেকে পোস্ট করা হয়েছে পুলিশ এখন সেটা খতিয়ে দেখছে। ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় এখন ভাল করেই ফেঁসে গেছেন সাকলায়েন।
দেশের আলোচিত এসব নারীদের বার বার রিমান্ডে নিয়ে কি ধরনের তথ্য আদায়ের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে কি ধরনের তথ্যই বা তাদের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এদের শুভাকাক্সক্ষীরা অনবরত সামাজিক যোগাাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন- রাতের রানীদের ধরা হয়েছে বলে গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি হারুন অর রশীদ ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু রাতের রাজাদের কেন ধরা হচ্ছেনা কেন তাদের তলব করা হচ্ছেনা সে রহস্য উদ্ঘাটন করতে হবে। তাদেরও ব্যাংক হিসাব চেয়ে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। জানতে চাইলে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক দৈনিক বলেন, এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাদের। রিমান্ড শেষে প্রয়োজন হলে আবাারও চাওয়া হতে পারে।
এদিকে পরী পিয়াসাদের কবল থেকে উদ্ধার হওয়া নামীদামী গাড়ির খোঁজ নিতে গিয়ে তাদের বিপুল সম্পদের সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যে কারণে তাদের সম্পদের হিসাব বিবরণী চাওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে চিঠি পাওয়ার তিন কর্মদিবসের মধ্যে এদের এ্যাকাউন্টের লেনদেনসহ যাবতীয় তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। যে আট জনের ব্যাংক এ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে পরীমনি, হেলেনা জাহাঙ্গীর ছাড়াও রয়েছেন গ্রেফতার হওয়া কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা, মরিয়ম আক্তার মৌ এবং প্রযোজক নজরুল ইসলাম। একই চিঠিতে আরও তিন জনের তথ্য চাওয়া হয়েছে। তারা হলেন-রোজিনা আক্তার, যার ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে বরিশালের বানারীপাড়া এবং ঢাকার মোহাম্মদপুরের নেয়ামত উল্লাহর দুই ছেলে সালেহ চৌধুরী ওরফে কার্লোস ও মিশু হাসান। চিঠিতে পরীমনির পুরো নাম শামসুন নাহার স্মৃতি উল্লেখ করা হয়েছে। ঠিকানা দেয়া হয়েছে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া।
জানা গেছে, একটি গোয়েন্দা সংস্থার অনুরোধে এসব ব্যক্তির ব্যাংক এ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ। এ ক্ষেত্রে এ্যাকাউন্ট খোলার ফরম, শুরু থেকে লেনদেন বিবরণী, কোন ধরনের সঞ্চয় বা ঋণ হিসাব থাকলে তার স্থিতিসহ যাবতীয় তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে।
এদিকে পরীমনির কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ করিম জিমির বিরুদ্ধে বনানী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় তাকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহর আদালত এই আদেশ দেন। এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশ আসামিকে তিন দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করে। এরপর আবারও পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত রিমান্ড ও জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
শনিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ-উর-রহমানের আদালত জিমির তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। গত ৬ আগস্ট রাতে গুলশানের একটি বাসা থেকে জিমিকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর বনানী থানায় গুলশান জোনের জোনাল টিমের ডিবির উপ-পরিদর্শক উদয় কুমার মণ্ডল মামলাটি করেন।
সাকলায়েন কান্ডে পুলিশে তোলপাড় : পরীমনি কান্ডে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার গোলাম সাকলায়েন শিথিল। মঙ্গলবার রাতে আমেরিকা থেকে ফাঁস হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়- তার জন্মদিনে তার বাসায় বসে কেক কাটার সময় ঘনিষ্ঠ মেলামেশার দৃশ্য। এটি এখন ঢাকায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভিডিও ফুটেজ। দ্রুতগতিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের ইউটিউব চ্যানেলে মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে ভিডিওটি আপলোড করা হয়। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা ছিল-পরীমনি ও পুলিশ কর্মকর্তা সাকলায়েনের গোপন ভিডিও। সাকলায়েন পরীমনির সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্কের কথা অস্বীকার করলেও তাদের গোপন একটি ভিডিও আমাদের কাছে পাঠান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন পুলিশ কর্মকর্তা। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বসে একজন প্রবাসী সাংবাদিক কীভাবে সংবেদনশীল এ ভিডিও সংগ্রহ করলেন- কে বা কারা তাকে ভিডিওটি পাঠিয়েছেন, তা নিয়ে নানা মহলে আলোচনা চলছে। সাংবাদিক ইলিয়াস ভিডিওর ক্যাপশনে-একজন পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে ভিডিওটি সংগ্রহ করেছেন বলে দাবি করেন।
যদিও ঢাকায় পুলিশের কোন দায়িত্বশীল মহল এর সত্যতা নিয়ে কোন ব্যাখ্যা দেয়নি। তবে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) মোঃ সোহেল রানা গণমাধ্যমকে জানান, পুলিশ কর্মকর্তাসহ সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য আচরণবিধি রয়েছে। এছাড়া, দেশে প্রচলিত আইন রয়েছে। কোন কর্মকর্তা যদি আচরণবিধি বা আইন লঙ্ঘন করেন, তাকে তার দায় নিতে হবে। পরীমনিকে নিয়ে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের জন্য ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি কাজ করছে। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা রয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডিবি থেকে বদলি হওয়া সাকলায়েন বর্তমানে নতুন কর্মস্থল পিওএম-পশ্চিম বিভাগে যোগদান করেছেন। তিনি সেখানে নিয়মিত অফিস করছেন বলেও জানা গেছে।
এ বিষয়ে পুলিশের একাধিক র্কর্তা ব্যক্তি জানান, একটি পেশাদার বাহিনীর সদস্য হিসেবে পুলিশের কেউ এ ভিডিও ছড়াতে পারে না। তাছাড়া এ ভিডিও পুলিশের হাতে আসার কথা নয়। পুলিশ যেসব ফৌজদারি মামলা তদন্ত করছে- এ ভিডিও সেগুলোর মধ্যে কোনটির আলামত নয়। মামলার আলামত না হওয়ায় এটি জব্দ করার প্রশ্নই ওঠে না। যিনি ভিডিওটি প্রবাসী সাংবাদিককে পাঠিয়েছেন- তিনি দুপক্ষের পরিচিত কেউ। ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্যই তিনি ভিডিওটি পাঠিয়েছেন। যে ভিডিওটি ফাঁস হয়েছে, সেটি ঈদের পর পুলিশ কর্মকর্তা সাকলায়েনের বাসায় ধারণ করা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পরীমনি-তার কস্টিউম ডিজাইনার জিমি এবং তার গাড়িচালক। জিমি মূলত সেই ভিডিওটি ধারণ করেছেন। বুধবার জিমিকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়।