জ্বালানি খাত

5

গ্যাস সঙ্কট বৃদ্ধি এবং মজুদ হ্রাসের প্রেক্ষাপটে দেশে নতুন কূপের সন্ধান নিঃসন্দেহে ভাল সংবাদ। জাতির জন্য এই শুভ সংবাদটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী। আরও ভাল সংবাদ হচ্ছে, গ্যাসকূপটি আবিষ্কার করেছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। দেশের ২৮তম এই গ্যাসকূপ থেকে পাওয়া যাবে ৬ হাজার ৮শ’ কোটি ঘনফুট গ্যাস। উত্তোলন করা যাবে দৈনিক এক কোটি ঘনফুট গ্যাস এবং পাওয়া যাবে প্রায় ১৩ বছর। এর বাজার মূল্য ১২শ’ কোটি টাকার বেশি। দেশে সর্বশেষ গ্যাসকূপ আবিষ্কৃত হয়েছিল ২০১৮ সালে ভোলায়। তিন বছর পর আরও একটি পাওয়া গেল সিলেটের জকিগঞ্জে। বর্তমানে দেশে গ্যাসের সম্ভাব্য মজুদ ১০ টিসিএফ বা ১০ লাখ কোটি ঘনফুট। বছরে গ্যাসের চাহিদা এক লাখ ৩৪ হাজার কোটি ঘনফুট।
প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রমাণিত মজুদ কমে আসার প্রেক্ষিতে আবাসিকে নতুন গ্যাস সংযোগ প্রদান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গ্যাস সঙ্কটে ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুত উৎপাদন। পর্যাপ্ত গ্যাসের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিল্প কারখানা। বিকল্প হিসেবে আমদানি হচ্ছে ব্যয়বহুল তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি)। এই প্রেক্ষাপটে সিলেটে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের ঘোষণায় দেশের জ্বালানি খাতে শুভ বার্তা বয়ে এনেছে।
সিলেটের গ্যাসক্ষেত্রটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের অষ্টম সাফল্য। এর আগে প্রতিষ্ঠানটি আরও সাতটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। আগে এই গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান এবং খনন কাজ পরিচালনা করত বিদেশী কোম্পানি। প্রাপ্ত গ্যাসের একটি বড় অংশ বা মূল্য তারাই নিয়ে যেত। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসর পর সিলেটের একটি গ্যাসকূপ উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাপেক্স কর্মকর্তারা বলেন, এই কাজে বিদেশী কোম্পানির আর প্রয়োজন নেই। বাপেক্ষের বিজ্ঞানীরাই অনুসন্ধান এবং উত্তোলনের কাজ করতে স্বক্ষম। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে পর্যালোচনার নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিদেশী কোম্পানির পরিবর্তে দেশীয় কোম্পানি বাপেক্স গ্যাস অনুসন্ধান এবং কূপ খননের কাজ করছে।
গ্যাস কূপটিতে মোট চারটি স্তরে গ্যাস পাওয়া গেছে। ৮৬ কোটি টাকা বাজেট থাকলেও অনুসন্ধান ও খননে খরচ হয়েছে ৭১ কোটি টাকা। চলতি বছর পহেলা মার্চ বাপেক্স কূপ খনন শুরু করে, যা শেষ হয় ৭ মে। ১৫ জুলাই ডিএসটি (ড্রিল স্টিম টেস্ট) সৌভাগ্য শিখা জ্বালাতে সক্ষম হন বাপেক্সের প্রকৌশলী এবং ভূতত্ত্ববিদগণ। নতুন এই গ্যাসক্ষেত্রে আগামী শুষ্ক মৌসুমে দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক ভূকম্প জরিপ পরিচালিত হবে। এরপর গ্যাসক্ষেত্রের পূর্ণাঙ্গ আকার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেলে এর ওপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত হবে গ্যাস উত্তোলনে কূপ খননের। পরিমাণে খুব বেশি না হলেও দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস পাওয়ার এই সংবাদে দেশের জ্বালানি খাতে উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে প্রশংসার দাবি রাখে দেশীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স এবং এর সঙ্গে যুক্ত প্রকৌশলী ও ভূতত্ত্ববিদগণ। তাদের এই কর্মপ্রচেষ্টা নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে জ্বালানি খাতকে আরও সমৃদ্ধ করবে।