স্টাফ রিপোর্টার :
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার চেলা ও মরা চেলা নদী থেকে শ্যালো এবং বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন একতা বালু উত্তোলন ও সরবরাহকারী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতৃবৃন্দ। বুধবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান তারা। তারা বলেন, অবৈধভাবে ড্রেজার, বোমা ও শ্যালো মেশিন দিয়ে যান্ত্রিকভাবে বালু উত্তোলনের ফলে যেমন প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বেকার হচ্ছেন, তেমনিভাবে পরিবেশও ধ্বংস হচ্ছে। এজন্য পরিবেশ বিধ্বংসী এ পন্থায় বালু উত্তোলন বন্ধ করে শ্রমিকদের জীবনজীবিকা সচল রাখার দাবিও তাদের।
লিখিত বক্তব্যে সমিতির সভাপতি মো. বাবলু হোসেন শাহেদ বলেন, ‘সুনামগঞ্জের ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা নিয়ে চেলা ও মরা চেলা নদী বালুমহাল ৫৬৬ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত। এ নদীতে প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে বালতি/বেলচা দিয়ে বালু উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। কিন্তু ১৪২৮ বাংলা সনের মহাল ইজারাদার মেসার্স ফয়েজ এন্টারপ্রাইজের পরিচালক ফয়েজ আহমদ ইজারার শর্তভঙ্গ করে ছাতক, কোম্পানীগঞ্জ ও দোয়ারাবাজার এলাকার প্রভাবশালী ও অত্যাচারীদের হাতে বালুমহাল সাব-ইজারা দিয়েছেন। আর এই সাব-ইজারাদাররাই বেআইনীভাবে ড্রেজারের পাশাপাশি শ্যালো ও বোমা মেশিন দিয়ে বালুমহালের ৫০-৬০ ফুট নীচ থেকে বালু উত্তোলন করে আসছেন। গভীরতা বেড়ে যাওয়ার কারণে সনাতন পদ্ধতিতে বালু উত্তোলন করতে না পারায় এতে কর্ম হারিয়েছেন শ্রমিকরা, আর ভাঙন হুমকিতে রয়েছে নদী তীরের ৩ শতাধিক বাড়িঘর ও স্থাপনা এবং কয়েকশ’ একর ফসলি জমি।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘অবৈধ ও নিয়মবহির্ভূত বালু উত্তোলনের কারণে নদী ভাঙনে দৌলতপুর গ্রামে একটি মসজিদ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। একই সাথে নাছিমপুর, শারপিননগর, রহিমের পাড়া, সোনাপুর, কাজিরগাও, পুর্ব লুভিয়া, চাইরগাও, রহমতপুরসহ প্রায় ২০টি গ্রামের রাস্তা ঘরবাড়ি, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রায় ৩ শতাধিক বাড়িঘর নদী ভাঙ্গন ও হুমকির মুখে পড়েছে। ফকির টিলা থেকে সোনালী চেলা রাস্তা ও চারালবাড়ি এবং ক্যাম্পের বাজারে সরকারি রাস্তা ভেঙ্গে যাবার কারণে অর্ধলক্ষাধিক মানুষের সড়ক যোগাযোগ অচল ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, ইজারাদারে লোকজন নদীর ইজারাকৃত জায়গা ছাড়াও সৈয়দাবাদ, নিয়ামতপুর, এমদাদনগর, মাষ্টারবাড়িরসহ বন বিভাগের মুর্তা বাগান, ফসলি জমি থেকে শ্যালো ও বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন। এ কারণে পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু ইজারা চুক্তির ১২ নম্বার শর্ত লঙন করে রাতভর অবৈধ বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করলেও স্থানীয় প্রশাসন নিরব অবস্থানে রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৪ সাল থেকে নদীর বালু মহালের ইজারাদাসহ বিভিন্ন সংগঠন অতিরিক্ত রয়্যালিটি আদায় ও শ্রমিকদের ওপর হামলা, অমানবিক নির্যাতন করে চলন্ত নৌপথের অন্তত ৩০টি স্থানে নামে-বেনামে চাঁদাবাজি করা হত। ২০১৫ সালে এমভি মহরম আলী নৌ পরিবহনের এক শ্রমিককে চাঁদা না দেওয়ায় মারধর করে নদীতে ফেলে হত্যা করার অভিযোগও রয়েছে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ছাতক থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এরপরই অতিষ্ঠ বালু ব্যবসায়ী, নৌকা মালিক ও শ্রমিক এক্যবদ্ধ হয়ে ‘ছাতক বাজার একতা বালু উত্তোলন ও সরবরাহকারী ক্ষুদ্র ব্যবায়ী সমরায় সমিতি’ (রেজিষ্ট্রার নম্বার ০৮১/সুনাম১৫) গঠন করেন। এ সমিতি গঠনের পর থেকে বেপরোয়া হয়ে উঠা নৌপথে চাঁদাবাজী, অতিরিক্ত রয়্যালিটি আদায়, শ্যালো ও বোমা মেশিনের বিরুদ্ধে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ান। এরপরেও কোন সুরাহা না হওয়ায় হাইকোর্টে রিট পিটিশন মামলা দায়ের করেন (নং ১০৬১৭/২০১৭) তারা। একই সাথে চাঁদাবাজি ও টোকেন বানিজ্যের বন্ধের দাবিতে দায়ের করা ওই রিট পিটিশন মামলার রিট সংযুক্ত করে নৌ-পুলিশে আবেদনও করেন। এছাড়া অবৈধ বোমা, শ্যালো ও ড্রেজার মেশিন বন্ধের জন্য আবার আরেক রিট পিটিশন মামলা দায়ের করেছেন (নং ১২৫৯৯/২০১৮।’
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২২ জুন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রীর কাছে তারা স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপিতে অবৈধভাবে মেশিন বসিয়ে ইজারাদার ও সাব-ইজারাদারের লোকজন রাতদিন বালু ও পাথর উত্তোলনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
এ বিষয়ে তদন্তের মাধ্যমে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তারা প্রধানমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী ও মন্ত্রনালয়ের সচিবের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। পাশাপাশি শ্রমিকদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে চেলা ও মরা চেলা নদীতে অবৈধ শ্যালো ও বোমা মেশিন দিয়ে বালু ও পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করতঃ সনাতন পদ্ধতিতে বালু উত্তোলনের পথ সুগম করার দাবিও করেন। অন্যথায় দাবি বাস্তবায়নে তারা কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারিও দেন।