ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে আসছে লকডাউন, প্রভাব পড়েনি নগরীর রাস্তা-ঘাট ও পাড়া-মহল্লায়

11
ঢিলেঢালা হচ্ছে কঠোর লকডাউন। প্রতিদিন সিলেট নগরে বাড়ছে মানুষের চলাচল। অকারণে নগরে ঘোরাঘুরি বেড়েছে কয়েক গুণ। শনিবার নগরীর জিন্দাবাজার পয়েন্ট এলাকায় মার্কেটের বারান্দায় আড্ডারত মানুষ জন। ছবি- মামুন হোসেন

স্টাফ রিপোর্টার :
মহামারি করোনা ভাইরাস রোধে নির্দেশিত দ্বিতীয় ধাপের ১০ম দিনের লকডাউনে তেমন প্রভাব পড়েনি সিলেট নগরীর রাস্তা-ঘাট ও পাড়া-মহল্লায়। ফলে কঠোর লকডাউনের বিধিনিষেধ অনেকটাই শিথিল হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাটে লোকজনের চলাচল দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি ও আইন শৃংখলা বাহিনীর শৃংঙ্খল না মানায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে মৃতের সংখ্যা। পরিস্থিতি হচ্ছে দিন দিন ভয়ংকর।
এদিকে অফিস-আদালত ও মার্কেট বিপণী বিতান আর গণপরিবহন বন্ধ ছাড়া বাকি সব কিছু অন্য দিনের তুলনায় স্বাভাবিক। এছাড়া মার্কেট-শপিং মহল বন্ধ থাকলেও কিছু কিছু ব্যবসায়ীরা দোকান কোঠা বন্ধ করে বাহিরে অবস্থান করে অথবা এক সাটার খোলে মালামাল বিক্রি করতে দেখা যায়। সেই সাথে সিলেটের মাছ,ফলের আড়ৎ ও কাঁচাবাজারে ছিল অব্যাহত মানুষের ভিড়। গতকাল শনিবার দুপুরে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
শনিবার সকালে সিলেটের সড়কগুলোতে যানবাহন ও রিকশার সংখ্যা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে ব্যস্ত হয়ে উঠে নগরীর আম্বরখানা, বন্দরবাজার এলাকা, কালিঘাট, মদিনা মার্কেট, টিলাগড়, শাহপরাণ গেইট, আখালিয়া, টুকেরবাজার, কুমারগাঁওসহ অধিকাংশ এলাকা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া নির্দেশ থাকলেও ছোট-খাটো প্রয়োজনে বের হচ্ছেন অনেকে। এছাড়া সিলেটের পাড়া-মহল্লার অলিগলিগুলোতে ছিল জমাট আড্ডা আর কেনাবেচা। কাঁচাবাজার, ফল মার্কেট, মাছের আড়তে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গা ঘেঁষাঘেঁষি করেই কেনাকাটা করতে দেখা গেছে ক্রেতাদের।
এসব স্থানে মানুষের মুখে মাস্ক পড়া একেবারেই কমে গেছে। বিধিনিষেধের মাঝেই খোলা চায়ের স্টলগুলোতেও মানুষের আনাগোনা ছিল বেশ। সড়কের চেকপোস্টগুলোতে পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও চলাচল নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা ছিল কম। মাঝেমধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ি থামিয়ে বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করতে দেখা গেছে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের। এদিকে সকাল থেকে সিলেট নগরীর প্রবেশদ্বার দক্ষিণ সুরমা, কুমারগাঁও, বিমানবন্দর সড়ক, সুরমা গেইট, শেখঘাট পয়েন্টে পুলিশের চেকপোস্ট দেখা গেলেও তা ছিলো একেবারেই ঢিলেঢালা। আর এই সুযোগেই রিকশা চালকরা বাড়িয়ে দিচ্ছে যাত্রী ভাড়া।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, শনিবার সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও সড়কে যানবাহন ও মানুষের উপস্থিতি ছিলো বেশি। তবে বিনা প্রয়োজনে বাইরে বের হলে জরিমানা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেই সাথে যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ। এছাড়া জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিতরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে কর্মস্থলে যেতে পারছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুনন্দা রায় বলেন, কঠোর লকডাউনে সিসিকের অভিযান সবসময় অব্যাহত আছে। প্রতিদিন অভিযান চালিয়ে জরিমানাও করা হচ্ছে। সেই সাথে সর্তক করে দেয়া হচ্ছে। নিজের জীবন রক্ষার জন্য সবার আগে নিজেদের সচেতন হতে হবে। নিজেরা যদি সচেতন না হই তাহলে যতই জরিমানা দেই না কেন কোন কাজ হবে না। এজন্য সবাইকে সরকারের নির্দেশনা অনুসারে চলাচল করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নূরে আলম শামীম বলেন, সরকার নির্দেশিত কঠোর লকডাউন অবশ্যই কঠোরভাবে মানতে হবে। একেবারে জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বেরোলে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, করোনা ভাইরাস সম্পর্কে মানুষ যদি নিজে থেকে সচেতন না হন তাহলে পুলিশের পক্ষে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ ও সচেতন করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তবুও পুলিশ সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন চেকপোস্ট ও টহল পুলিশ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। জীবন বাঁচাতে হলে আগে সচতেনতা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। ছোট-বড় প্রতিটি গাড়িকেই চেকিংয়ের আওতায় আনা হচ্ছে। যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারলে যেতে দেওয়া হচ্ছে, অন্যথায় মামলা করা হচ্ছে।