পানি, বিদ্যুৎ ও মাটি ভরাটের ব্যবস্থা না হওয়ায় ॥ বড়লেখায় ৩৪টি পরিবার প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরে উঠতে পারেনি

5

কাজিরবাজার ডেস্ক :
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ৫০টি ঘরে উদ্বোধনের পাঁচ মাসেও পানি, বিদ্যুৎ ও মাটি ভরাটের ব্যবস্থা হয়নি। মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারাদেশের মতো (প্রথম পর্যায়ে) বড়লেখায় ভূমি ও গৃহহীনদের জমি ও ঘরগুলো দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ, পানি ও মাটি ভরাট করে চলাচলের উপযোগী না থাকায় এখনো ৩৪টি পরিবার ঘরগুলোতে উঠেনি। আর যারা উঠেছেন তারা পানি ও বিদ্যুতের জন্য কষ্ট করছেন। কোনো কোনো জায়গায় মাটি ভরাট করে না দেওয়ায় পানি জমে অনেকে ঘর থেকে বের হতে পারছে না। ঘরগুলোর বাসিন্দারা দ্রুত পানি, বিদ্যুৎ ও মাটি ভরাট করে চলাচলের উপযোগী করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানিয়েছেন। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শীঘ্রই ঘরগুলোতে পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ (‘ক’ শ্রেণি) পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় বড়লেখা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৫০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে বড়লেখা সদর ইউনিয়নে ১০টি, উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নে ১৬টি, দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নে ৩টি, দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নে ৩টি এবং দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নে ১৮টি ঘর নির্মাণ করা হয়। একেকটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা।
চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি উপকারভোগীদের মধ্যে ঘরগুলোর চাবি হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু মাত্র ১৬টি পরিবার ঘরে উঠেছে। পানি আর বিদ্যুতের ব্যবস্থা না থাকায় বাকি ৩৪ পরিবার ঘলগুলোতে এখনো উঠেনি।
সরেজমিন বড়লেখা সদর ইউনিয়নের সাতকরাকান্দি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ১০টি ঘরের মধ্যে ৩টি পরিবার ঘরে উঠেছে। বাকিরা এখনো উঠেনি।
কথা হয় উপকারভোগী শতবর্ষী আয়াতুন নেছার সাথে। তিনি মেয়ে ও নাতনিকে নিয়ে থাকেন এ ঘরে। তিনি বলেন, পানি নাই, বিদ্যুৎ নাই, ঘর থেকে বের হওয়ার রাস্তা নাই। বৃষ্টির পানি জমে আছে। এখনো মাটি ভরাট করে দেওয়া হয়নি। ঘরে (কচমা) অপরিপক্ব কাঠ দেওয়ার কারণে ঘুণ পোকায় কাঠ নষ্ট করে ফেলছে।
বড়লেখা সদর ইউনিয়নের সাতকরাকান্দি গ্রামে উপকারভোগী হাজেরা বেগমের সাথে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি স্বামীকে নিয়ে তিনি ঘরে উঠেছেন। তিনি বলেন, পানি ও বিদ্যুৎ না থাকায় খুব কষ্টে আছি। অন্যের বাড়ি থেকে পানি এনে খেতে হচ্ছে। দুই তিনদিনে গোসল করি। খুব কষ্টে আছি। সংশ্লিষ্টরা বিদ্যুৎ দিব বলেও দেয়না।
হাজেরা বেগমের মতো এখানে ঘর পেয়েছেন মাতাব উদ্দিনও। স্ত্রীকে নিয়ে উঠেছেন ঘরে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার ঘর দিয়েছে কিন্তু একটু বৃষ্টি হলেই ঘরের ওয়াল বেয়ে ঘরে পানি প্রবেশ করে। এখানে বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা নেই। খাবারের পানির ব্যবস্থা না থাকায় এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে পানি এনে পান করতে হচ্ছে। পানি আর বিদ্যুৎ না থাকায় আমাদের কষ্ট করে থাকতে হচ্ছে।
উপজেলার কাশেমনগর গ্রামে গিয়ে কথা হয় মনি বেগম, নাজমা বেগম ও ছলিম উদ্দিনের সঙ্গে। তারা বলেন, ‘এখানে ১৫টি ঘর আছে। এরমধ্যে আমরা সাত পরিবার ঘরে উঠেছি। বাকি পরিবারগুলোও উঠেনি। কারণ এখানে পানি নেই। বিদ্যুৎ নেই। আমরা পানি অন্যদের বাড়ি থেকে কষ্ট করে এনে পান করছি। পানি আর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিলে আমাদের ভোগান্তি কমবে।’
উপজেলার ৪নং উত্তর শাহবাজপুরের চাঁনপুরে সরেজমিনে গিয়ে একজন উপকারভোগীর সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, এখানে আমরা তিনটি পরিবার ঘরে উঠেছি, বাকিরা এখনো উঠেনি। পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা রয়েছে তবে আজ থেকে খুব দ্রুতগতিতে কাজ চলছে।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বড়লেখা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এমাজ উদ্দিন সরদার দুপুরে বলেন, ‘৫০ ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে কাজ অব্যাহত রয়েছে। আশাকরি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি বিদ্যুৎ সংযোগ সম্পন্ন হবে। কিন্তু সদর ইউনিয়নের সাতকরাকান্দি গ্রামের দশটি ঘরের বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যাপারে তিনি অবগত নন। তিনি যাবেন, দেখবেন, মেইন লাইন থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে থাকলে দ্রুত সংযোগ দেওয়া হবে।’
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মঈন উদ্দিন বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরগুলোতে পানির উৎস (গভীর নলকূপ) স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে উত্তর শাহবাজরপুর ইউনিয়নের ভোগা-চাঁনপুরে নির্মিত ঘরগুলোতে গভীর নলকূপ স্থাপন কার্যক্রম চলছে। মূলত বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় নলকূপ স্থাপন কার্যক্রমে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। এ কারণে কিছুটা দেরি হয়েছে। আশাকরি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নলকূপ স্থাপন করে উপকারভোগীদের মধ্যে হস্তান্তর করা হবে।’
এ ব্যাপারে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, ‘আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। যোগদানের পর প্রথম মাসিক সমন্বয় সভায় ঘরগুলোতে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএমকে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে বলা হয়েছিল। পরবর্তীতে ডিজিএমকে চিঠিও দিয়েছি। ডিজিএম জানিয়েছেন, দুই একদিনের মধ্যে ঘরগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শুরু হবে। ১৫ থেকে ২১ দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শেষ হবে। এছাড়া ঘরগুলোতে গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুত তা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো ধরনের গাফিলতি গ্রহণযোগ্য নয়। তা সফলভাবে বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’