মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের তিন বারের চেয়ারম্যান রণধীর কুমার দেবের মৃত্যুর একমাস যেতে না যেতেই শুন্য পদে নৌকা প্রতিক পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। যদিও নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি। তবুও দলীয় সমর্থকরা ফেসবুকে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে। অনেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের গুণগান উল্লেখ করার পাশাপাশি লবিং করছেন দলীয় হাই কমান্ডে।
এছাড়া জাতীয় পার্টির এক প্রার্থীর নাম শুনা গেলেও জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র কোন প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা করতে এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে অন্তত এক ডজন প্রার্থীর নাম পাওয়া গেছে যারা নৌকার মাঝি হতে মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন।
দলীয় হাইকমান্ডের কাছে যারা নৌকা প্রতীকের জন্য মনোনয়ন চাইতে পারেন বা যাদের নাম শুনা যাচ্ছে তারা হলেন- সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভার প্রাপ্ত সভাপতি মো. আছকির মিয়া, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিবিদ,ব্যবসায়ী মো. ইউছুব আলী, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মনসুরুল হক, প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু শহীদ মো. আব্দুল্লাহ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শহিদ হোসেন ইকবাল, উপজেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন ফয়েজ, শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা ভানু লাল রায়, সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি মো. আফজল হক, উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রেম সাগর হাজরা, জাতীয় শ্রমিকলীগ মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাকারিয়া আহমদ, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ সদস্য মো. বদরুজ্জামান সেলিম ও সদ্য প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান রণধীর কুমার দেবের সহধর্মিনী শিখা রানী দেব।
এছাড়া মৌলভীবাজার জেলা জাতীয় পার্টির ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক মো. কামাল হোসেন নাম শহরজুড়ে আলোচনায় রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আগামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা আছে, তবে সময় বলে দিবে কোন প্লাটফর্ম থেকে নির্বাচন করব।’
প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান রণধীর কুমার দেবের ছেলে ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজু দেব রিটন বলেন, ‘আমরা পারিবারিক ভাবে এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আমাদের শুভাকাঙক্ষীরা সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি আমাদের পরিবার থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহন করার পরামর্শ দিচ্ছেন।
আগামী ২০ জুন বাবার শ্রাদ্ধকার্য শেষ করে আমরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করবো। নির্বাচনে আমার মা, বড়ভাই অথবা আমিও থাকতে পারি, তবে সিদ্ধান্ত কোনটাই হয়নি এখনো।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মসুদুর রহমান মসুদ জানান, উপজেলা চেয়ারম্যানের মৃত্যুর পর দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই উপজেলা পরিষদে নির্বাচন করবেন বলে অনেকের’ই নাম শুনা যাচ্ছে। উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের সাথে কথাবার্তা বলছেন তারা। আমাদের কথা একটাই নৌকা প্রতীক নিয়ে যিনি আসবেন আমরা তার জন্যই মাঠে থাকবো।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি প্রবীভ রাজনীতিবিদ মো. ইউছুব আলী উপজেলা পরিষদের উ-নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের শেষ প্রান্তে এসে দলের কাছে নৌকা প্রতীক চাইবো। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আগামী উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে প্রবীন রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আছকির মিয়া বলেন, ‘যেহেতু আমি আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত, তাই দলের কাছে নৌকা প্রতীক চাইবো। গত দুই নির্বাচনেও আমি নৌকা প্রতীক চেয়েছি কিন্তু পাইনি। এবার আশাবাদি দল আমাকে মনোনয়ন দিবে।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শহিদ হোসেন ইকবাল বলেন, ‘প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান রণধীর কুমার দেবের মৃত্যুতে পদটি শূন্য ঘোষণার পর সাংবিধানিক নিয়মে ৯০ দিনের মধ্যে উপ-নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই উপ-নির্বাচনে দলের কাছে আমি মনোনয়ন চাইবো। কারণ দীর্ঘ দিন থেকে দলের এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করছি। আমি ১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলাম। এছাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের বিগত দুই কমিটিতে তথ্য সম্পাদক এবং দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বর্তমানে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। আমি আশাবাদী দল আমাকে সেই মূল্যায়ন করবে।’
উপজেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান তফাজ্জল হোসেন ফয়েজ বলেন, ‘আশির দশকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ করে এখন আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে দলের ও মানুষের জন্য কাজ করেছি। তাই আমি প্রত্যাশা করছি দল আমাকে মনোনয়ন দিবে।’
সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভানু লাল রায় বলেন, ‘শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পাওয়ার জন্য ইতিমধ্যে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি-সম্পাদকসহ স্থানীয় এমপির কাছে আবেদন করেছি। এছাড়া আওয়ামীলীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সাথে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি, নৌকা প্রতীক পেলে আমি অবশ্যই নির্বাচন করবো। তবে দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে যাবার কোন সুযোগ নেই যেহেতু আমি আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রেম সাগর হাজরা বলেন, ‘প্রয়াত চেয়ারম্যানের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠতে পারিনি। তবে শূন্য ঘোষণা করে আমাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জনগণের জন্য আমরা রাজনীতি করি। জনগণ যদি চায় আমাকে তাহলে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারি। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আমি এখনও নেইনি।’
জাতীয় শ্রমিকলীগ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. জাকারিয়া বলেন, ‘শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনে আমি প্রার্থী হতে আগ্রহী। ছাত্ররাজনীতি থেকে শুরু করে বর্তমানে জাতীয় শ্রমিকলীগ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। দলের বিভিন্ন দুর্যোগে নিবেদিত প্রাণ হিসেবে ছিলাম এখনো আছি, কাজেই আমি নৌকা প্রতীক চাইবো দলের কাছে। দল মনোনয়ন দিলে আমি বিজয়ী হব ইনশাআল্লাহ।’
মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মনসুরুল হক বলেন, ‘উপজেলা ইলেকশন করার আমার তেমন কোন ইচ্ছা নেই। যদিও অনেকেই আমাকে বলছেন মনোনয়ন চাওয়ার জন্য।’
এছাড়া প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু শহীদ মো. আব্দুল্লাহ, উপজেলা কৃষকলীগ সভাপতি ও শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আফজল হক এবং জেলা পরিষদ সদস্য মোঃ বদরুজ্জামান সেলিম মনোনয়ন চাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাচন অফিসার তপন জ্যোতি অসীম বলেন, ‘নিয়মানুসারে শূন্য পদ ঘোষণার ৯০ দিনের মধ্যেই উপ-নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশনা পেলেই আমরা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করব।’
নির্বাচনের বিষয়টি জানতে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম এর কাছে পর পর দুই দিন মুঠোফোনে কল দিলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, ‘সাংবিধানিক নিয়মে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক পদটি শূন্য ঘোষণার পর বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশনা পেলেই আমরা নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
প্রসঙ্গগত ২১ মে ২০২১ শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রণধীর কুমার দেব রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা করেন। তার মৃত্যুত শূন্য হয়ে যায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদটি। এরপর থেকেই উপজেলাজুড়ে সরগরম কে হচ্ছেন তার স্থলাভিষিক্ত।