কাজিরবাজার ডেস্ক :
চলমান মুজিববর্ষে বিশ্বের ইতিহাসে আরেকটি নজির ও দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। বাংলাদেশ তথা বিশ্বের এই প্রথম কোন সরকার একসঙ্গে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে। এরমধ্যে মুজিববর্ষ উপলক্ষে আধুনিক স্থাপত্যশৈলী ও দৃষ্টিনন্দন ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আজ বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বের ইতিহাসে এর আগে কোন দেশের সরকার একসঙ্গে এত মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করতে পারেনি। যে ইতিহাস আজ সৃষ্টি হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।
মসজিদ হচ্ছে ভাতৃত্ববোধ ও পারস্পরিক সুসম্পর্ক গড়ে ওঠার অন্যতম স্থান। মসজিদের শহর বলা হয় রাজধানী ঢাকাকে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্নস্থানে অসংখ্য দৃষ্টিনন্দন, অপূর্ব স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয় ঘটিয়ে অনেক মসজিদই রয়েছে। শুধু নামাজ আদায় নয়, একটি মসজিদে নামাজ আদায়সহ আরও প্রায় ২০ ধরনের সুযোগ-সুবিধা রেখে বাংলাদেশে একসঙ্গে এত বিপুল পরিমাণ একই মডেলের আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত মসজিদের উদ্বোধন বিশ্বে এই প্রথম। তিন ক্যাটাগরিতে নির্মিতব্য এই ৫৬০টি মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে সরকারের ব্যয় হচ্ছে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা।
প্রকল্প পরিচালকের দফতর ও ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্মিতব্য এসব মডেল মসজিদে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধাই থাকছে। নারী ও পুরুষদের জন্য পৃথক অজু ও নামাজ কক্ষ, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স পাঠাগার, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামিক বই বিক্রয়কেন্দ্র, পবিত্র হেফজ বিভাগ, শিশুশিক্ষা ছাড়াও অতিথিশালা, পর্যটকদের আবাসন, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, জানাজার ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ, গণশিক্ষা কেন্দ্র, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, অটিজম কর্নার, ই-কর্নারসহ একটি পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স মডেল মসজিদে সব সুবিধায় থাকছে। জেলা পর্যায়ে এ-ক্যাটাগরিতে প্রতিটি মসজিদে একসঙ্গে ১ হাজার ২শ’ মুসল্লী এবং উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকার মডেল মসজিদগুলোতে ৯শ’ জন একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। এছাড়া ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
গণপূর্ত অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, নক্সা অনুযায়ী তিন ক্যাটাগরিতে জেলা পর্যায়ে চারতলা বিশিষ্ট মসজিদ এ-ক্যাটাগরি, উপজেলা পর্যায়ে তিন তলা বিশিষ্ট মসজিদ বি-ক্যাটাগরি এবং উপকূলীয় এলাকায় তিন তলা বিশিষ্ট সি-ক্যাটাগরির মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। এসব মসজিদের মধ্যে জেলা পর্যায়ে হচ্ছে ৬৯টি, উপজেলা পর্যায়ে ৪৭৫টি এবং উপকূলীয় অঞ্চলে ১৬টি। এ-ক্যাটাগরির মসজিদের আয়তন প্রায় ৪০ হাজার বর্গফুট, বি ও সি ক্যাটাগরি আয়তন প্রায় ৩০ হাজার বর্গফুট।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার সাভার, ফরিদপুরের মধুখালি, কাঁথা, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া, কুলিয়ারচর, মানিকগঞ্জের শিবালয়, রাজবাড়ী সদর, শরীয়তপুর সদর, গোসাইরহাট, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, শেরপুর, কাহালু, নওগাঁর কাপাকের, পোরশা, পাবনার চাটমোহর, সিরাজগঞ্জ সদর, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, পবা, দিনাজপুরের খানসামা, বিরল, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ, রংপুর সদর, পীরগঞ্জ সদর, বদরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিদপুর, জামালপুরের ইসলামপুর সদর, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, তারাকান্দা, ভোলা সদর, ঝালকাঠির রাজাপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর, নবীনগর, চাঁদপুরের কচুয়া, চট্টগ্রাম জেলা সদর, লোহাগড়া, মীরসরাই, সন্দ্বীপ, কুমিল্লার দাউদকান্দি, খাগড়াছড়ির পানছড়ি, নোয়াখালীর সুবর্ণচর, খুলনা জেলা সদর, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদর, কুষ্টিয়া জেলা সদর এবং সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় মসজিদ নির্মাণ শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আজ আনুষ্ঠানিকভাবে এসব মডেল মসজিদ উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ উপলক্ষে বুধবার এক প্রেস ব্রিফিং করে বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে মুজিববর্ষ উপলক্ষে নির্মিত ৫০টি মডেল মসজিদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার উদ্বোধন করবেন। সম্পূর্ণ সরকারী অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে এসব মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। বিশ্বের ইতিহাসে এর আগে আর কোন সরকার একসঙ্গে এত মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করেনি।
প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ইসলামী মূল্যবোধের উন্নয়ন এবং ইসলামী সংস্কৃতি বিকাশের উদ্দেশে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই প্রতিশ্রুতি আজ বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে। বাংলাদেশ তথা বিশ্বের ইতিহাসে এই প্রথম কোন সরকার একসঙ্গে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। মুসলমানরা সাধারণত তাদের ধর্মীয় কার্যক্রম মসজিদে সম্পাদন করে থাকেন। বাংলাদেশে প্রায় ৩ লাখ মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদের সিংহভাগই স্থানীয় জনগণের আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান আরও বলেন, প্রতিটি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ৪৩ শতাংশ জায়গার ওপর তিন ক্যাটাগরিতে নির্মিত হচ্ছে। এরমধ্যে জেলা ও সিটি কর্পোরেশন পর্যায়ে ৪ তলা, উপজেলা পর্যায়ে ৩ তলা এবং উপকূলীয় এলাকায় ৪ তলা (নিচতলা ফাঁকা) মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ক্যাটাগরিতে ৬৪টি জেলা শহর ও ৩টি সিটি কর্পোরেশনে ৫টিসহ মোট ৬৯টি চারতলা বিশিষ্ট মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। বি-ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে ৪৭৫টি এবং সি-ক্যাটাগরিতে উপকূলীয় এলাকায় ১৬টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে শুদ্ধাচার কৌশল। আদর্শ ও চরিত্রবান নাগরিক গঠনে এসব মসজিদ ও সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ, গবেষণা, সভা, কর্মশালা, ওয়াজ মাহফিল, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে লাইব্রেরি, গবেষণাসহ ইসলামী মূল্যবোধের চর্চা, প্রচার ও বিকাশের নানামুখী ব্যবস্থা রয়েছে। এর মাধ্যমে একটি দুর্নীতিমুক্ত শোষণমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে।
২০১৮ সালের গত ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৮টি বিভাগের ৯টি স্থানে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ ৫০টি মডেল মসজিদ গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান ও ধর্ম সচিব মোঃ নুরুল ইসলাম, সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকসহ অন্য কর্মকর্তারা রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন থেকে অনুষ্ঠানে যুক্ত হবেন। উদ্বোধনকালে তিনটি মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের (রংপুরের বদরগঞ্জ, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা ও খুলনা) কর্মকর্তারা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর সামনে তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলবেন।