লবীব আহমদ কোম্পানীগঞ্জ থেকে :
পাহাড় থেকে ঢলে পড়ছে স্বচ্ছ ঠান্ডা নীল পানি! আর সেই স্বচ্ছ ঠান্ডা পানি গড়িয়ে যাচ্ছে সাদা পাথরের উপর আর পাশ দিয়ে। আহ! সেখানে গা জড়ালেই অন্যরকম এক অনুভূতি। হ্যাঁ, সব অনুভূতি অনুভব করার জন্য আপনাকে যেতে হবে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সাদা পাথরে। ২০১৭ সালের পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভারত থেকে ভেসে আসা পাথর সংরক্ষণ করায় প্রায় ১০ একর জায়গাজুড়ে দৃশ্যমান হয়েছে নতুন পাথরের স্তূপ। সেই থেকে এলাকাটি ‘সাদা পাথর’ পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পায়। নাম শুনে নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছেন এটা সাদা সাদা পাথরের রাজ্য, যেখানে পাথরগুলো আছে বিছানার মতো।
একসময় খারাপ রাস্তার জন্য হাজারো সৌন্দর্যে ভরপুর এই সাদা পাথর ছিলো পর্যটকের দৃষ্টিগোচরের বাহিরে। কিন্তু, সিলেট-ভোলাগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক হওয়ার পর থেকে দর্শনার্থীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে কোম্পানীগঞ্জের এই সাদা পাথর।
উপরের বর্ণনা শুনে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন সাদা পাথরের সৌন্দর্যের ব্যাপারে। তাহলে এবার ঘুরে আসা যাক স্বচ্ছ ঠান্ডা নীল পানি আর সাদা সাদা পাথরে ভরপুর সাদা পাথরে।
সাদা পাথর সিলেট শহর থেকে প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দূরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্টে অবস্থিত। সাদা পাথরে যেতে হলে প্রথমে আপনাকে সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্টে আসতে হবে। সেখানে সিএনজি-অটোরিক্সা, সাদা পাথর টুরিস্ট বাস, বিআরটিসি বাস পাওয়া যায়। সিএনজিতে করে গেলে আপনাকে একটু বেশি
ভাড়া দিতে হবে অবশ্যই। তাই, সেজন্য উপযুক্ত পরিবহন হচ্ছে সাদা পাথর টুরিস্ট বাস বা বিআরটিসি বাস। সাদা পাথর বাসে গেলে আপনাকে ৭০ টাকা খরচ করতে হবে আবার বিআরটিসি বাসে গেলে ৬০ টাকা খরচ করতে হবে৷ এগুলো ভোলাগঞ্জ খেয়াঘাটে আপনাকে নামিয়ে দিবে। আবার সিএনজি করে গেলে আপনাকে ১০০ টাকা ভাড়া দিতে হবে। সেখান থেকে নৌকায় সরাসরি চলে যাবেন সাদা পাথরে। সেক্ষেত্রে নৌকা ভাড়া আপনার গুনতে হবে ৮০০ টাকা। অবশ্যই একা বা ২-৩ জন গেলে আরো ৪-৫ জন মিলে গ্রুপ করে যাওয়ার ও সুযোগ আছে নৌকায়। এক নৌকায় ৮-১০ জন করে যাওয়া যায়। এই নৌকা শুধু যে আপনাকে সাদা পাথরে নামিয়ে দিয়ে আসবে তা, কিন্তু না। আপনাকে আবার নিয়ে আসবে৷ এক্ষেত্রে নৌকার মাঝির মোবাইল নাম্বার কাছে রেখে দিবেন। আপনার সফর শেষে কল দিলেই আপনাকে নিয়ে আসবে।
এবার আসি কখন যাবেন সাদা পাথর?- সাদা পাথরে প্রায় বার মাসই যাওয়া যায়। অবশ্যই সাদা পাথরের মূল সৌন্দর্য আপনি বর্ষাকালে বেশি পাবেন৷ কেননা, তখন সেখানে পানি থাকে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি থাকে। আবার যখন ভারতে অতিরিক্ত বৃষ্টি হবে, তখন না যাওয়াই ভালো। তখন নদীতে প্রচুর জোয়ার নামে।
সাদা পাথরে সবচেয়ে বেশি পর্যটকের আগমন ঘটে দুই ঈদে। প্রতিদিন ১৫-২০ হাজার মানুষের আনাগোনা হয় তখন। এছাড়াও প্রতি শুক্র, শনি ও ছুটির দিনেও প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটে। আর প্রতিদিন তো আছেই পর্যটকের ভীড়।
সাদা পাথরর আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে অবশ্যই আপনাকে পানিতে গোসল বা সাঁতার কাটতে হবে। সাঁতার না জানলেও সেখানে টিউব পাওয়া যায় সাঁতার কাটার জন্য। সেক্ষেত্রে আপনাকে গোসল করার বা সাঁতার কাটার জন্য প্রয়োজনীয় পোশাক সাথে নিতে হবে৷ যেমন একটা গামছা বা তোয়ালে তো রাখতেই হবে সাথে।
এবার আসি দুপুরে খাবার-দাবারের বিষয়- সারাদিন যেহেতু ভ্রমণ করবেন, সেহেতু খাবার খাওয়া ও তো প্রয়োজন। সেজন্য আপনি সাথে খাবার নিয়েও যেতে পারেন অথবা সেখানে খাবার খাওয়ার জন্য ভালো রেষ্টুরেন্ট ও আছে। সাদা পাথর খেয়াঘাটে হোটেল আল বেলা, পর্যটন হোটেল সহ আরো অনেক রেষ্টুরেন্ট রয়েছে, যেখানে আপনি দুপুরের খাবার খেতে পারবেন। আবার বিকেলের মিষ্টি বাতাসের সাথে চা ও খেতে পারবেন নদীর পাশে বসে। হোটেল গুলোতে খাবার খেলে অবশ্যই আপনাকে খাবার বিল দেওয়া নিয়ে ঝামেলা করতে হবে না৷ উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক খাবারের দাম লিস্ট করে রাখা আছে।
এছাড়াও সাদা পাথরে বা খেয়াঘাটের পারে আপনি পাবেন বিভিন্ন পছন্দনীয় দ্রব্যাদি, যা আপনি দেখলে না কিনে থাকতে পারবেন না।
এবার তাহলে চলে আসা যাক সাদা পাথর থেকে। যেভাবে গিয়েছেন, সেভাবেই আসতে পারবেন সাদা পাথর খেয়াঘাট থেকে। তবে ব্যক্তিগত বা প্রাইভেট গাড়িতে চড়ে গেলে অবশ্যই কাটাখাল ব্রিজ পরবর্তী এলাকায় গড়ে উঠা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাইটেক পার্কে কিছুটা সময় ব্যয় করে আসতে পারেন। সেখানে লম্বা একটা ব্রিজ রয়েছে, যেটাকে পর্যটকেরা নাম দিয়েছেন ‘গরীবের আইফেল টাওয়ার’। সেখানকার সৌন্দর্য দেখলে অবশ্যই আপনার কিছুটা সময় হলেও সেখানে থাকতে ইচ্ছে করবে।