আতঙ্কের নাম দোয়ারাবাজার-লক্ষ্মীপুর ২৬ কি.মি সড়ক

9

দোয়ারাবাজার থেকে সংবাদদাতা :
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার-লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার সড়ক এখন আতংক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উপজেলার লক্ষ্মীপুর, সুরমা, বগুলা ও বাংলাবাজার (আংশিক)ওই চার ইউনিয়নের ৮০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহরে যোগাযোগের একমাত্র ভরসা ওই সড়কটি। এলজিইডির আওতাধীন গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কটি সংস্কারের অভাবে এখন ভোক্তভোগীদের অভিশাপে পরিণত হয়েছে। কয়েক বছর ধরে বেহাল দশায় পুরো সড়কটিই এখন চলাচলের অনুপযোগী।
সড়ক পার্শ্ববর্তী বাসিন্দারা জানান, যান চলাচল করাতো দূরের কথা, পায়ে হেটে চলাচল করাই ঝুঁকিপূর্ণ। পুরো সড়কজুড়ে গর্ত, খানাখন্দ, কাদা আর জলাবদ্ধতা মাড়িয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। প্রতিদিনই ঘটছে ছোটবড় দুর্ঘটনা। চিকিৎসা সেবা গ্রহিতা গর্ভবতী মহিলা ও বয়োবৃদ্ধরা ওই সড়কের নাম শুনলেই ভয় পান।
সরেজমিনে দোয়ারাবাজার-লক্ষ্মীপুর সড়ক ঘুরে দেখা গেছে পুরো সড়কটিই মরন ফাঁদ! যেদিকেই তাকাই সেদিকেই বেহাল অবস্থা। সড়কের সুরমা ইউনিয়নের শরীফপুর, শান্তিপুর, গিরিশনগর, মহব্বতপুর, রাবার ড্যাম পর্যন্ত পুরোটাই গর্ত-খানাখন্দ ও কাঁদায় ভরা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় বেরিয়ে আছে রড, ইট-পাথর। যেকোনো সময় মারাত্মক দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। ওই সড়কের নোয়াপাড়া, লক্ষ্মীপুর, লেয়াকতগঞ্জ, পশ্চিম বাংলাবাজার পর্যন্ত পুরো সড়ক কাঁদাজলে ভরা। কোথাও হাঁটু সমান কাদামাটি। বিকল্প রাস্তা না থাকায় কাঁদা মাড়িয়েই পথচারী ও যাত্রীদের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। খানাখন্দ, কাঁদা ও জলাবদ্ধতায় পথিমধ্যে যাত্রীসহ চালকরা ঠেলা-ধাক্কা দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে।
কলেজ শিক্ষার্থী মামুন মিয়া বলেন, “ভংগুর রাস্তার কারণে আমাদের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটছে। কলেজে যেতে শুধু অতিরিক্ত ভাড়াই গুনতে হচ্ছেনা বরং অতিরিক্ত সময়ও ব্যয় হচ্ছে।”
সিএনজি চালক আব্দুল ওদুদ ও স্বপন মিয়া বলেন, “পেটের দায়ে ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাই। মাথার ঘাম পায়ে পেলে সারাদিনে যা পাই তার সিংহভাগই ব্যয় হয় গাড়ির মেরামতকাজে। আমাদের দুর্দশা দেখার কেউ নেই।”
বক্তারপুর গ্রামের মোহাম্মদ ওমর গনি বলেন, ‘বছরের পর বছর উপজেলা সদরে যাতায়াতে আমাদের দুর্ভোগের সীমা নেই। আমরা যেন ছিটমহলের বাসিন্দা।’
টেংরাটিলা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম বীরপ্রতীক বলেন, রাস্তাটির অবস্থা খুবই নাজুক। আমাদেরকে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। রাস্তাটি দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ নিতে আমি ঊর্ধ্বতন প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
শান্তিপুর গ্রামের কৃষক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আব্দুল আওয়াল বলেন, দুর্গম উপজেলা হিসেবে বৃহত্তর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন একটি দুর্গম এলাকা। বন্যা, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে এখানে নিম্নমানের রাস্তা টেকানো সম্ভব নয়। দুর্গম এলাকার যোগাযোগক্ষেত্রে উন্নয়নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ওই রাস্তাটি দ্রুত পুননির্মাণ করা হোক। লক্ষ্মীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমিরুল হক বলেন, ‘ পুরো রাস্তাটি চলাচলের অনুপোযোগী। এলজিইডি অফিসে বারবার ধর্ণা দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ডিও লেটার দিয়ে বারবার তাগিদ স্বত্বেও কোনো উদ্যোগ নেয়নি এলজিইডি। জনস্বার্থে রাস্তাটি দ্রুত মেরামতের দাবি জানাই।
সুরমা ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার মামুনুর রশীদ বলেন, এলজিইডির প্রকৌশলী আমাকে জানান, রাস্তার বেহাল অংশের জরিপকাজ শেষ করে ঢাকায় পাঠিয়েছি, তবে এখনো প্রকল্প পাস হয়নি। মেরামতের নামে এলজিইডি নাটক করছে। চার ইউনিয়নের মানুষ ওই রাস্তা দিয়েই চলাচল করে। সাময়িক চলাচলের স্বার্থে গর্ত ও খানাখন্দ ভরাটের জন্য উপজেলা পরিষদ চাইলে বরাদ্দ দিতে পারে। উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি আমি উত্থাপন করব। এজন্য প্রয়োজনে ইউনিয়নের জনগন নিয়ে আন্দোলনে নামব।
দোয়ারাবাজার উপজেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী দেবতোষ পাল বলেন, দোয়ারাবাজার টু লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত প্রায় ২৬ কিলোমিটার সড়ক এলজিইডির আওতাভুক্ত। ওই সড়কের ভাঙ্গা অংশের সাড়ে ৪ কিলোমিটারের একটা স্লিপ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। খুব শিগগির প্রকল্পটি পাস হবে বলে আশাবাদি। করোনা পরিস্থিতির কারণে দেরি হচ্ছে। তবে প্রকল্পটি পাস হলেই রাস্তার মেরামতকাজ শুরু হবে।