ইউএনজিএর প্রেসিডেন্টকে প্রধানমন্ত্রী ॥ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে

9
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাথে গণভবনে বাংলাদেশে সফররত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট HE Mr Volkan Bozkir সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সম্প্রতি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি পরিবর্তনের ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট অনিশ্চয়তার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছেন, কিন্তু এ ব্যাপারে বলার মতো কোন অগ্রগতি হয়নি। আমরা অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি, কিন্তু সাম্প্রতিক যা অগ্রগতি তাতে পরিস্থিতি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার গণভবনে বাংলাদেশে সফররত জাতিসংঘের ৭৫তম সাধারণ অধিবেশনের (ইউএনজিএ) প্রেসিডেন্ট ভলকান বজকির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় ইউএনজিএর সভাপতি বজকির বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নত দেশ হয়ে একটি উদাহরণ সৃষ্টি করে বলেও মন্তব্য করেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। প্রধানমন্ত্রী জাতিগত নিধনের শিকার জোরপূর্বক বিতাড়িত হয়ে এক মিলিয়নের বেশি মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আমরা আলোচনায় ছিলাম। যদিও সেখানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ছিল না। কিন্তু মিয়ানমারের এই পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের অস্থায়ী আবাসনের জন্য ভাসানচরকে প্রস্তুত করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ভাসানচর দ্বীপে এক লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে নেয়া যেতে পারে। এখন পর্যন্ত সেখানে ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় সেখানে যেতে রাজি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাঁরা জাতির পিতার দ্বারা অনুপ্রাণিত, যিনি সবসময় বিপন্ন মানবতার পাশে দাঁড়িয়েছেন।
এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গাকে মানবিক দিক বিবেচনায় আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) প্রেসিডেন্ট ভলকান বজকির। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট ভলকান বজকির রোহিঙ্গা সঙ্কট ছাড়াও আসন্ন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন, জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মহামারীর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ ভাইরাস থেকে দেশের জনগণ ও অর্থনীতিকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। এ প্রসঙ্গে তিনি করোনাভাইরাস থেকে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে এবং এর প্রভাব মোকাবেলা করে অর্থনীতিকে সচল রাখতে প্রণোদনা প্যাকেজ ও সব শ্রেণী-পেশার মানুষের জন্য অন্যান্য অর্থ সুবিধা দেয়ার কথা উল্লেখ করেন।
নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নারীর ক্ষমতায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুই প্রথম সংসদে ১০ শতাংশ নারী কোটা বরাদ্দ করেন। আমরা তাঁর দেখানো পথে রাজনীতি থেকে প্রশাসন সমাজের সব সেক্টরে নারীর ক্ষমতায়ন করছি। জাতীয় সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পীকার এবং সংসদ উপনেতা চারজনই নারী সে কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। সামাজিক সুরক্ষা আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করেন বাংলাদেশ সরকারপ্রধান।
এ বছর সরকারপ্রধানদের সশরীরে উপস্থিতির মাধ্যমে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন করার চিন্তা-ভাবনার কথা জানান জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) প্রেসিডেন্ট ভলকান বজকির। তিনি বলেন, এ বছর জাতিসংঘ অধিবেশনের সময় প্রতিটি দেশ দুজনের একটি প্রতিনিধি উপস্থিত থাকার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে লিঙ্গ বৈষম্য ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করে ভলকান বজকির বলেন, বাংলাদেশ একজন লেডি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অসাধারণ সফলতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ প্রসঙ্গে ইউএনজিএ প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশ সারা বিশ্বের সামনে একটি দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের মানুষ খুব সাহসী এবং তারা এটা এগিয়ে নেবে।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে অটিজম ও নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, এ্যাম্বাসেডর এ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাবিতে পরিবেশবান্ধব টিএসসি ভবন নির্মাণের নির্দেশ ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক ও পরিবেশ-বান্ধব ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবনে টিএসসির স্থাপত্য-সংক্রান্ত ডিজাইন নিয়ে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা শেষে এই নির্দেশ দেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, এ্যাম্বাসেডর এট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, শিক্ষা সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান।