শাহ খুররুম ডিগ্রি কলেজ নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন রাজনীতি। নয় মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। যার ফলে ধ্বংস হচ্ছে ২২শ’ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ। এতে করে ২৮ বছরের পুরাতন এই কলেজটি বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে। সবকছিুর মূলে নতুন গভর্নিং বডির সভাপতি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলকে দায়ি করেছেন এলাকাবাসী। মঙ্গলবার (২৫ মে) এলাকাবাসীর মতবিনিময় সভায় এমন অভিযোগ তুলে দ্রুত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ.কে আব্দুল মোমেন এর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী। সেই সাথে গভর্নিং বডির সভাপতি শফিউল আলম নাদেলকে একমাসের মধ্যে সমস্যা সমাধানের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। অন্যথায় এলাকাবাসী বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবে।
জানা যায় শহরতলীর টুকেরবাজার এলাকায় এলাকায় এলাকাবাসীর উদ্যোগে ৫২ কেদার জায়গার উপর ১৯৯৩ ইংরেজিতে শাহ খুররুম ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২০ সালে সেপ্টেম্বর মাসে ওই কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিও লেটার প্রেরণ করেন সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ডিও লেটারের পর শফিউল আলম নাদেলকে সভাপতি ও শাবির অধ্যাপক হাসান জাকিরুল ইসলামকে বিদ্যুতসাহী সদস্য হিসেবে গভর্নিং বডিতে অনুমোদন দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে ওই কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সিলেটের আওয়ামী রাজনীতি ও আন্দোলন সংগ্রামের অন্যতম মুখ সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক। সেই সময়কালে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন অধ্যাপক কৃষ্ণা ভট্টাচার্য।
কিন্তু নতুন গভর্নিং বডি দায়িত্ব প্রাপ্তির সাড়ে নয় মাসের মাথায় একদিনও কলেজ পরিদর্শন করেননি। উপরন্তু সভা আহবান করেননি ম্যানেজিং কমিটির। এই অবস্থায় বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। উপরন্তু গভর্নিং বডিতে কিছু মুখ অনিয়মতান্ত্রিক হিসেবে যুক্ত হয়েছে-এমন অভিযোগ তুলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি চিঠি প্রেরণ করেন বর্তমান সভাপতি শফিউল আলম নাদেল। এই অবস্থায় এলাকাবাসীর মতবিনিময় সভায় গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে নাদেলের অনুমোদনও প্রশ্নবিদ্ধ বলে মন্তব্য করেন। একটি কুচক্রী মহলের কারণে সাড়ে ৩ বছর থেকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি বলে বক্তারা তাদের বক্তব্যে উল্লেখ্য করেন। এই কুচক্রী মহলের কারণে শাহ খুররুম ডিগ্রি কলেজে অনার্স কোর্স চালু করা সম্ভব হয়নি এবং ডিগ্রিরও সব কোর্স চালু হয়নি।
২৫ মে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সদর উপজেলা সচেতন নাগরিক সমাজের উদ্যোগে সিলেট সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহি শাহ খুররুম ডিগ্রি কলেজ নিয়ে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদের মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেট জেলা কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি অধ্যাপক শফিকুর রহমান।
এডভোকেট নূরে আলম সিরাজী এপিপি’র সঞ্চায়নায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন গোবিন্দগঞ্জ আব্দুল হক স্মৃতি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক।
সভাপতির অধ্যাপক শফিকুর রহমান বলেন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী এরশাদ আমলে মন্ত্রী থাকা অবস্থায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমান সফল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ.কে আব্দুল মোমেন শাহ খুররুম ডিগ্রি কলেজে ভবন দিয়েছেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ৫তলা ভবনসহ কলেজের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। আমরা বিশ্বাস করি বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ.কে আব্দুল মোমেন শাহ খুররুম ডিগ্রি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করবেন। তিনি আরো বলেন, এক মাসের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যদি এই কলেজের সমস্যা সমাধান না করেন তাহলে চক্রান্তকারীরা অত্র এলাকার বাতিঘর ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদের অনুরোধ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে আশু সমাধান হবে এই সমস্যার।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শাহ খুররুম ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য, সাবেক মেম্বার শাহাব উদ্দিন লাল মিয়া, বিশিষ্ট সালিশ ব্যক্তিত্ব ও সাবেক মেম্বার আশরাফ চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, জেলা পরিষদের সদস্য শাহনুর, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আব্দুর রফিক, শাহ খুররম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আব্দুর রকিব, আমির উদ্দিন আহমদ, বিশিষ্ট সালিশ ব্যক্তিত্ব হাজী মইন মিয়া, হাজী নুর মিয়া, নোয়া খুররমখলার তছির আলী, জমসিদ আলী, দর্শার মোজাহিদ আলী, মোগলগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল্ল্যা, বিশিষ্ট সালিশ ব্যক্তিত্ব সাদিপুরের মেম্বার শাহাব উদ্দিন, কান্দিগাঁও ইউপির মেম্বার শাহনুর, মোল্লারগাঁওয়ের বিশিষ্ট সালিশ ব্যক্তিত্ব শাহাবুদ্দিন, যুবনেতা আপ্তাব হোসেন সিরাজী, কলেজের অভিভাবক সদস্য কাছা মিয়া ও মোশাহিদ আলী, সালিশ ব্যক্তিত্ব আশ্রব আলী, শাহপুরের লিলু মিয়া, যুবনেতা আব্দুল মান্নান, কান্দিগাঁওয়ের সাবেক মেম্বার লালা মিয়া, হাটখলার যুবনেতা ফারুক আহমদ, কান্দিগাঁওয়ের আব্দুল মনাফ, ব্যবসায়ী সাজ্জাদুর রহমান, হাটখলার সালিশ ব্যক্তিত্ব জাহান আহমদ, কাজিরগাঁওয়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার আলী, হায়দরপুরের বিশিষ্ট সালিশ ব্যক্তিত্ব হাজী আতাউর রহমান, আনছার উদ্দিন, রাইসুল হক রাসেল, আমিনুর রাশিদ, কুতব উদ্দিন, আলী হোসেন রাজা, দেলোয়ার হোসেন, ফয়সাল আহমদ, আলী বাহার, তাজির আলী, শাওন আহমদ, সালমান আহমদ, ফয়সল আহমদ, নিজাম উদ্দিন, এডভোকেট সুমন আহমদ, আব্দুল জলিল, নুরুল আমিন খুকু, মনির উদ্দিন, গোলাম হোসেন, রাজা মিয়া, মাকসুদ আহমদ লেবু, বাবুল হোসেন, মাহবুব রহমান, লুৎফুর রহমান আজাদ, আলিম উদ্দিন, বাবুল মিয়া, নুর উদ্দিন, মনফর আলী, আব্দুল বাসিত, জিলকদর, রবিউল ইসলাম, আব্দুল মানিক, রাইছুল হক রাসেল প্রমুখ।
শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন কুতুব উদ্দিন। বিজ্ঞপ্তি