চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হতে হবে – প্রধানমন্ত্রী

9
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ভার্চুয়ালী শুভেচ্ছা বাণী প্রদান করেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশের যুবসমাজকে চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, এজন্য সরকার তরুণদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং জামানতবিহীন ব্যাংক ঋণের সুযোগ দিচ্ছে। তাই চাকরির পেছনে না ছুটে মৎস্য উদ্যোক্তা হোন। এখানে ব্যাপক একটা কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়ে গেছে। এই সুযোগটা আমাদের কাজে লাগাতে হবে।
শনিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ধারণকৃত এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে এসে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করছে। সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে চাই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে আদর্শ ও নীতি নিয়ে এই দেশকে স্বাধীন করেছেন, সেই আদর্শ-নীতি নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে।
যুবসমাজকে মৎস্য উৎপাদনে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মৎস্যজীবী আমাদের এই প্রতিষ্ঠানকে বলব, আপানদের নিজেদেরও সংগঠনকে আরও সুসংগঠিত করা এবং আমাদের যুবসমাজ যাতে আরও এগিয়ে আসে মৎস্য উৎপাদনে মনোযোগী হয়, সেদিকে একটু দৃষ্টি দিতে হবে। এখানে ব্যাপক একটা কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়ে গেছে। কাজেই সেই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে হবে।
এজন্য বিশেষ ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থার পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থাসহ সব ধরনের সুযোগ সরকারের পক্ষ থেকে করে দিয়েছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে আমি স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে চাই। বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এটুকু বলব, যে আদর্শ নিয়ে এবং নীতি নিয়ে তিনি এদেশ স্বাধীন করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শ এবং নীতি নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বিশ^ দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে। স্বাধীনতার ৫০ বছর, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে আমরা এটাই প্রতিজ্ঞা করব, এই দেশক আমরা সবদিক থেকে উন্নত-সমৃদ্ধ করব। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব।
মৎস্যজীবী লীগের সকলস্তরের নেতাকর্মীকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস যেন কারো ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। নিজে সুরক্ষিত থাকতে হবে, অপরকে সুরক্ষিত করতে হবে। সেজন্য আমাদের স্বাস্থ্য নিয়ম, নীতি এবং বিধি আপনারা মেনে চলবেন।
মৎস্যজীবী লীগের ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে এসেছে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে গেছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে। আমরা ১৯৯৬ সালে যখন সরকারে আসি, ১৯৯৮ সালেই দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলি। দ্বিতীয়বার যখন আমরা সরকারে আসি তখনও আমাদের লক্ষ্য পূরণ করি এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। খাদ্যের সঙ্গে পুষ্টিটা যাতে যোগ হয় তার ব্যবস্থা নেই। সেদিকে খেয়াল রেখে আমরা ১৯৯৬ সাল থেকেই সচেষ্ট হই।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে যুবসমাজকে ট্রেনিং দেয়া, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, জলাধারগুলো সংস্কার করা, মাছ উৎপাদন যাতে বৃদ্ধি পায় তার ব্যবস্থা করা, যাতে গবেষণা হয় সেই গবেষণার ব্যবস্থা করা, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করার কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সব থেকে নিরাপদ পুষ্টি কিন্তু মাছই দেয়। একটা মানুষ যদি ৬০ গ্রাম মাছ খেতে পারে, সেটা তার জন্য যথেষ্ট। আমরা সেখানে অন্তত ৬২ গ্রাম পর্যন্ত নিতে পারি বা দিতে পারি, সে সুযোগটাও সৃষ্টি হচ্ছে।
মৎস্য খাতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোন ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শিখে শুধুমাত্র চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেরাই যদি মৎস্য খামার করে, মৎস্য খামার থেকে মাছ উৎপাদন করে এবং সেটা যদি বিক্রি করে তাহলে পয়সা পেতে পারে। পাশাপাশি আমরা সারাদেশে ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে সব থেকে গুরুত্ব দিচ্ছি খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলার। সেখানে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলা যায় এবং সেখানে মৎস্যজাত যেকোন পণ্য, সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করতে পারে, সেই সুযোগটাও সৃষ্টি হচ্ছে।
যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিনা জামানতে ঋণ নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ সৃষ্টির কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাংলাদেশ নদী-নালা, খাল-বিলের দেশ। বাংলাদেশে শত শত নদী রয়েছে। তাছাড়া খালবিল, জলাধারগুলো সংস্কারের কাজ করে যাচ্ছি। সেখানে যাতে আরও বেশি পরিমাণ মাছ উৎপাদন হয়, তার ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিনি বলেন, আমাদের মাছের উৎপাদন যেখানে ২৭ লাখ মেট্রিক টন ছিল, এখন আমরা প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টনের কাছাকাছি উৎপাদন করা শুরু করেছি। আর ইলিশ উৎপাদনে পৃথিবীতে আমরা কিন্তু এখন এক নম্বর দেশ। আমরা ইলিশ উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছি। আর মাছের প্রজননের সময়ে মৎস্যজীবীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দসহ খাদ্য সহায়তা এবং বিনা পয়সার খাদ্য সরবরাহের কথাও তুলে ধরে তিনি বলেন, এভাবে মাছ উৎপাদনে বিশেষ যত্ন নিচ্ছি। যে কারণে খাদ্য নিরাপত্তার পর পুষ্টি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়াতে এখন কিন্তু মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগছে না।
এ সময় সংগঠনকে আরও সুসংগঠিত করা এবং যুবসমাজ যাতে মৎস্য উৎপাদনে উৎসাহিত হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় কর্মসূচী নিতে মৎস্যজীবী লীগের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্য তালিকায় শুধু ভাত নয়, শাকসবজি, মাছ, ফলমূল থাকতে হবে, যাতে পুষ্টিগুণ থাকে।
মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি সায়ীদুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আজগর লস্করের পরিচালনায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রান্তে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় কার্যকরী সদস্য শাহাবুদ্দীন ফরাজী, এ্যাডভোকেট এবিএম রিয়াজুল কবির কাওছারসহ সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ।