কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট রোধ করতে গত ২৬ এপ্রিল থেকে ১৪ দিনের জন্য সীমান্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। তবে এ কারণে ভারতের বিভিন্ন স্কুলে অধ্যায়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দেশে ফিরতে কোনও সমস্যা হবে না। তাদের দেশে আসার প্রক্রিয়া দ্রুত গতিতে সহজ করা হবে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধের একসপ্তাহ পর এক পর্যালোচনা বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সোমবার (৩ মে) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাষফি বিনতে শামস, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর দফতরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সেবা প্রদানের বিষয়টি সরকারের অগ্রাধিকার এবং এ বিষয়ে আরও কী করণীয় আছে তা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।
এ বিষয়ে মাশফি বিনতে শামস বলেন, ‘প্রায় ১০০টি বাচ্চার (শিক্ষার্থী) অভিভাবকরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ওইসব বাচ্চার অধিকাংশই দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন স্কুলে পড়ছে, ওই স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে বা যাচ্ছে। ফলে আমরা তাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে শিশুদের দেশে প্রবেশের অনুমতি দেবো। কিন্তু তাদেরকে ১৪ দিনের কোয়ারারেন্টিন করতে হবে।’
সীমান্ত বন্ধ ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত বেনাপোল দিয়ে ১২৬০ জনের মতো এবং আগড়তলা দিয়ে প্রায় ৬০ জন দেশে প্রবেশ করেছে বলে তিনি জানান।
বর্তমান পরিস্থিতি কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভারতের যে ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ছে, সেটি যাতে বাংলাদেশে ছড়িয়ে না পড়ে, তার জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমরা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে একটি চিত্র পাবো আশা করছি।’
সীমান্ত বন্ধের মেয়াদ বৃদ্ধি পাবে কিনা জানতে চাইলে মাশফি বিনতে শামস বলেন, ‘বন্ধের মেয়াদ ৯ মে পর্যন্ত আছে। আমাদের পরবর্তী পর্যালোচনা বৈঠক হবে বৃহস্পতিবার (৬ মে) এবং সেখানে বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা হবে।’
তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে অনেক বাংলাদেশি এই কয়েকদিনে প্রবেশ করেছে এবং সীমান্ত সংলগ্ন জেলায় কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা প্রায় শেষ হয়ে আসছে বলে জেলা প্রশাসন থেকে আমাদের জানানো হয়েছে।’
আমাদেরকে এখন কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থার প্রতুলতা ও ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দেশে আসার প্রয়োজনীয়তার মধ্যে একটি ভারসাম্য করতে হচ্ছে বলে তিনি জানান।
আগের সিদ্ধান্ত সবগুলো বলবৎ আছে জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘যেকোনও পরিবর্তন সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, গত ২৬ এপ্রিল থেকে ভারতের সঙ্গে ১৪ দিনের জন্য সীমান্ত বন্ধ করা হলেও সেদেশে অবস্থানরত যেসব বাংলাদেশির ভিসার মেয়াদ ১৫ দিন বা কম রয়েছে, তারা যথাযথ অনুমোদন সাপেক্ষে বেনাপোল, আখাউড়া ও বুড়িমারি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবেন। কিন্তু তাদেরকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। ওই তিন বন্দর দিয়ে বাংলাদেশিদের প্রবেশের জন্য দিল্লি, কলকাতা ও আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশি মিশন থেকে অনুমোদন নিতে হবে এবং প্রবেশের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে করোনা নেগেটিভ টেস্ট রিপোর্ট থাকতে হবে। ওই তিনটি বন্দর ছাড়া অন্য সব বন্দর দিয়ে চলাচল বন্ধ থাকবে।
তবে স্থল সীমান্ত দিয়ে কেউ চলাচল করতে না পারলেও বাণিজ্যিকভাবে আমদানি পণ্য সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করে দেশে ঢোকানো যাবে। এ ক্ষেত্রে যানবাহনের ড্রাইভার ও হেলপারদের করোনা প্রটোকল মেনে চলতে হবে। এছাড়া রেলপথে আমদানি-রফতানি করার জন্য সরকারের তরফে উৎসাহিত করা হয়েছে।