গোয়াইনঘাটে জনপ্রিয় হচ্ছে কম্বাইন হারভেস্টার

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশে কৃষি জমির পরিমাণ প্রতিনিয়ত কমছে। তবে বাড়ছে খাদ্য উৎপাদন। এর ফলে আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। উচ্চ ফলনশীল বীজ ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণ- এই দুই মিলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় আধুনিক কৃষির পথে আমাদের গোয়াইনঘাট উপজেলা। আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতিতে আসছে স্বয়ংসম্পূর্ণতা। কৃষিতে উৎপাদনই শেষ কথা নয়, ফসল ঘরে না তোলা পর্যন্ত লেগে থাকতে হয়। শ্রমিক সংকটে কৃষি উৎপাদনও কঠিন হয়ে পড়ে। গোয়াইনঘাট উপজেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে, কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। সরকার ভর্তুকির মাধ্যমে উপজেলার ১২ জন কৃষককে দিয়েছে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন। স্বল্প সময়ে কম খরচে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কেটে কৃষকরা হচ্ছেন উপকৃত। উপজেলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন। আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ছোঁয়ায় কৃষকেরা হচ্ছেন স্বয়ংসম্পূর্ণ। সরকারের কৃষি ভর্তুকির সুবিধা পাচ্ছেন উপজেলার কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় ১২টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন উপজেলার ১২ জন কৃষকের মধ্যে বিতরণ করা হয়। প্রতিটি মেশিনের দাম ৩০ লক্ষ টাকা কিন্তু একজন কৃষককে বিনা সুদে দিতে হয় মাত্র ১০ লক্ষ টাকা। বাকী ২০ লক্ষ টাকা সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। তাও আবার মেশিন ক্রয়ের সময় একজন কৃষক ৩/৪ লক্ষ টাকা কোম্পানিকে দিয়ে বাকী টাকা কিস্তিতে সুদবিহীনভাবে পরিশোধ করতে পারেন।
স্বল্প সময়ে কম শ্রমিক ব্যবহার করে একইসঙ্গে ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তাবন্দি করতে ব্যবহার করা হয় কম্বাইন হারভেস্টার। একইভাবে গমও কাটা থেকে শুরু করে বস্তাবন্দি করা যায়। কৃষি শ্রমিক সংকটের কারণে উন্নত প্রযুক্তির এ মেশিনের দিকে ঝুঁকছেন মাঝারি এবং বড় কৃষকরা। ফলে ধান কাটার জন্য শ্রমিক খুঁজতে হবে না। কম খরচ ও কম সময়ে বেশি জমির ধান কাটা যাবে এ মেশিনে। শুধু ধান কাটা নয়, একসাথে মাড়াই, ঝাড়াই ও সংগ্রহ করা যাবে। তাই কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মেশিন। মেশিন দিয়ে একজন শ্রমিক দিনে ১০ থেকে ১২ বিঘা জমির ধান কাটতে পারেন এবং মাড়াই, ছাঁটাই ও বস্তা ভর্তিকরণ করা যায়। পাশাপাশি মেশিনে প্রতি বিঘা ধান কাটতে খরচ হয় ১২ থেকে সর্বোচ্চ ১৫শ’ টাকা। একইভাবে কৃষকের উৎপাদন ব্যয় কমাতেও সক্ষম এই আধুনিক কৃষিযন্ত্র।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার পূর্ব জাফলং, লেঙ্গুড়া, তোয়াকুল,ডৌবাড়ী ও রুস্তমপুর ইউনিয়নসহ ১২ টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন বিভিন্ন স্থানে ধান কাটছে। হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও কালবৈশাখী, প্রচুর বৃষ্টি ও বজ্রপাতের ফলে ধানকাটায় শ্রমিকরা মাঠে যেতে অনেক সময় অনীহা প্রকাশ করে স্বপ্নের ফসল ঘরে তুলতে কৃষকের হিমশিম খেতে হয়। ধান কাটা শ্রমিকের সংকট ও অতিরিক্ত মজুরির কারণে জমি তৈরি থেকে ধান কাটা পর্যন্ত যে খরচ হয় উৎপাদিত ধানে সে খরচ ওঠে না। ফলে কিছু ধান ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যায়। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রয়োজনীয়তা পূরণে সক্ষম হওয়ায় কম্বাইন্ড হারভেস্টার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
কৃষক মো.আজির উদ্দীম ও ময়নুল ইসলাম জানান, আগে ধানের সব কাজ শেষ করতে একর প্রতি ১১-১২ হাজার টাকা খরচ হতো। মেশিন আসার কারণে এখন একর প্রতি ৪-৫ হাজার টাকা খরচ হয়। গ্রামের কৃষিখাতেও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন ধান চাষ করে লাভবান হওয়া যাবে।
কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন ব্যবহারকারী নজরুল ইসলামের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহারে ৬০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত খরচ কমাতে সাহায্য করে। অন্যদিকে সময় বাঁচায় ৭০-৮২ শতাংশ এবং ৭৫ শতাংশ কম শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। প্রতি একর জমির ধান কাটা এবং মাড়াই, পরিষ্কার, এবং প্যাকেটজাত করতে ১২ থেকে ১৪ লিটার তেল বা মাত্র দেড় হাজার টাকা খরচ হয়। যেখানে এলাকাভেদে ম্যানুয়ালি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। বর্তমানে রাইচ ট্রান্সপ্লান্টার, কম্বাইন হারভেস্টারসহ আরো কিছু মেশিনের উপর সরকারি পর্যায় ভর্তুকি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। কেননা চাষাবাদে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার উৎপাদন খরচ কমানো ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুলতান আলী বলেন, উপজেলায় এবার বোরো ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ হাজার ১শ ২৫ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বোরো আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ৭শ ৫০ হেক্টর। গোয়াইনঘাটে বরো ধান কর্তনের অগ্রগতি ৮০%। ১২টি কম্বাইন হারভেস্টার ধান কাটছে পূর্ব জাফলং, লেঙ্গুড়া, তোয়াকুল,ডৌবাড়ী রুস্তমপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন স্থানে। এক ঘন্টায় ১ একর পর্যন্ত ধান কাটতে পারে। এক বিঘা জমির ধান কাটতে লাগে ১৫০০ টাকা। সময় কম লাগে, অর্থের সাশ্রয় হয়, শ্রমিক সংকট দূর হয়, ধানের সংগ্রহজনিত অপচয় কম হয়। আগাম বন্যা থেকে ধান রক্ষা করতে দ্রুত ধান কর্তন করতে ভাল ভূমিকা রাখছে এ মেশিন। তিনি বলেন, মেশিনটির ব্যবহার বাড়ানো গেলে কম খরচে বেশি ফসল উৎপাদন সম্ভব। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের অংশ হিসাবে এ মেশিন কিনতে এখন সরকার থেকে কম্বাইন হারভেস্টারের দামের হাওর এলাকার কৃষকের জন্য ৭০% এবং হাওর এলাকা ছাড়া ৫০% ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার।
এত বড় সুবিধা সরকার দিচ্ছে কৃষকদের জন্য, তাই আমি আশাকরি গোয়াইনঘাটের কৃষকরা কৃষিতে এগিয়ে আসবেন এবং সরকারি এসব সুবিধা গ্রহণ করে কৃষিতে একটি বিপ্লব সৃষ্টি করবেন।