সিয়াম সাধনার মাস

14

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ ১৭ রমজানুল মুবারাক। ভিন্ন একটি প্রেক্ষাপটে আজকের দিবসটি অনেক বেশি স্মরণীয়। আজ বদর দিবস। এক হাজার প্রশিক্ষিত মুশরিক সৈনিকের মোকাবেলায় মাত্র ৩১৩ জন মর্দে মুমিনের বিজয় দান করেছিলেন আল্লাহ এই দিন। আজ আমরা মসজিদ বা সিজদাহ দেয়ার জায়গার মাসলা মাসায়েলগুলো একটু আলোচনা করব। মাহে রমজান আসলে আমাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আলোকিত হয়, আবাদ হয় মসজিদ। আমাদের মাহে রমজানে সিয়াম সাধনার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদ ও সামাজিক বিভিন্ন কাজগুলোর আঞ্জাম দিতে হবে। কারণ এত অখ- ইবাদত ও সেবার মানসিকতা বছরে অন্য সময় আসে না। হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভালবাসতে চায় তার উচিত আমাকে ভালবাসা এবং যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসতে চায় তার উচিত আমার সাহাবাদেরকে ভালবাসা এবং যে ব্যক্তি আমার সাহাবাদেরকে ভালবাসতে চায়, তার জন্য উচিত আমার কুরআনকে ভালবাসা এবং যে আমার কুরআনকে ভালবাসতে চায়, তার উচিত মসজিদকে ভালবাসা, কেননা মসজিদ আল্লাহর ঘর। আল্লাহ তায়ালা তার তাযিম করার হুকুম দিয়েছেন এবং এ কাজে বরকত রেখেছেন, তার বাসিন্দারাও বরকতময়। মসজিদ এবং মসজিদের বাসিন্দাগণ আল্লাহর হিফাজতে থাকে, যতক্ষণ তারা নামাজে মশগুল হয়। আল্লাহ তাদের সমুদয় প্রয়োজনও মিটান। যতক্ষণ তারা মসজিদে অবস্থান করে আল্লাহ তাদের মালামাল আসবাবের হিফাজত করেন (কুরতুবী, মা’আরিফুল কুরআন)।
এ প্রসঙ্গে একটি বিষয় জেনে রাখা দরকার, কেউ যদি কোন জমিন মসজিদের জন্য ওয়াকফ করে দেয়, তখন ওই জমিন তারই মালিকানাধীন থাকবে, যতক্ষণ না সে জমিন রাস্তাসহ তার মালিকানা থেকে পৃথক করে দেয়, সকলের জন্য নামাজ আদায়ের ব্যাপক অনুমতি দেয়। মালিকানা থেকে পৃথক না করা পর্যন্ত তা পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর জন্য মসজিদ হিসেবে গণ্য হয় না। অনুমতির পর একজনও যদি সেখানে নামাজ আদায় করে মালিকের মালিকানা অধিকার চিরতরে শেষ হয়ে যায়, প্রতিষ্ঠিত হয় মসজিদের মর্যাদা। (হিদায়া, ২য় খন্ড)।
কোন মসজিদ সুন্দর করার জন্য উহা ভাঙ্গা জায়িয নয় এবং কোন মসজিদ যদি ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয় তবে ওই মসজিদটি ভেঙ্গে পুনর্নির্মাণ করা জায়িয আছে (আদাবুল মাসাজিদÑমাজমুয়ায়ে ফাতাওয়া)। যদি এলাকায় জনমানবশূন্য হয়ে পড়ার কারণে কোন মসজিদ অবহেলিত হয়ে পড়ে বা ক্রমেই ভঙ্গুর দশায় পৌঁছে যায়, তথাপিও ওই মসজিদ কিয়ামত পর্যন্ত মসজিদই থাকবে, কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে সাব্যস্ত হবে না (শামী, বাহরুর রাইক)। নামাজের মধ্যে সিজদা ব্যতীত গুরুত্বপূর্ণ আরও অনেক বিষয় আছে। যেমন কিরাত, রুকু ইত্যাদি। কিন্তু ‘সিজদা’ শব্দ হতে মসজিদের নামকরণের দ্বারা সিজদার অস্বাভাবিক গুরুত্ব ও মর্যাদা প্রকাশ পেয়েছে। কারণ মানুষের সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন অঙ্গ মাথা মাটিতে ঠেকানোর অর্থ অন্তর হতে অহঙ্কার ও অহমিকা দূর করে আলাহর প্রভুত্বের সম্মুখে চরম বিনয় প্রকাশ করা, সেদিকে লক্ষ্য করেই রাসূলে কারীম (স.) ইরশাদ করেছেন : সিজদা অবস্থায় বান্দা তার প্রভুর সর্বাধিক সান্নিধ্যে যায়। -(মুসলিম, নাসাঈ)। মসজিদ একজন মুসলমানের মনে সর্বদা আল্লাহর সমীপে পরিপূর্ণ আত্মসমর্থনের প্রেরণা সৃষ্টি করে আর এটি প্রত্যেক মুসলমানের চরম ও পরম লক্ষ্য। মসজিদ মুসলমানদের ইবাদত, তালিম, দাওয়াত, প্রচার ও ইশাআতের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। রাসূলুল্লাহ (সা.) মসজিদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার এবং মসজিদে সুগন্ধিযুক্ত দ্রব্যাদি ব্যবহার করার আদেশ প্রদান করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) কখনও কখনও নিজ হাতে মসজিদ পরিষ্কার করতেন। হযরত ইয়াকুব ইবন যায়িদ (রা.) হতে বর্ণিত আছে, নবী করীম (সা.) মসজিদের ধুলাবালি খেজুর বৃক্ষের ডাল দ্বারা পরিষ্কার করতেন। (মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা কলমী, ১ম খ-)। হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : আমার উম্মাতের সব নেক আমল আমার সামনে পেশ করা হয়েছে এমনকি একটা খড়কুটাও যা আল্লাহর কোন বান্দা মসজিদ হতে দূর করেছে, তার সাওয়াবও পেশ করা হয়েছে।’ (আবু দাউদ, তিরমিযী)। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদিগকে মহল্লায় মহল্লায় মসজিদ প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছেন এবং মসজিদগুলোকে ভালভাবে পরিষ্কার রাখার আদেশও দিয়েছেন। (আহমদ)। মসজিদ অপরিষ্কার ও ময়লাযুক্ত রাখা অথবা মসজিদে কোন দুর্গন্ধযুক্ত দ্রব্য ফেলা মাকরূহ।
নিম্নে মসজিদের আদবগুলো উল্লেখ করা হলো :
মসজিদে প্রবেশের পূর্বে পবিত্রতা অর্জন করা। মসজিদে ডান পা আগে দিয়ে প্রবেশ করা এবং এই দু’আ পড়া : আল্লাহুম্মাফ তাহলী আবওয়াবা রাহমাতিকা। মসজিদ হতে বের হওয়ার সময় বাম পা দিয়ে এই দু’আ পড়া : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা। মসজিদে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে বসার আগে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামাজ আদায় করা। তবে নামাজের মাকরূহ ওয়াক্তে না পড়া (যেমন সূর্য উদিত হওয়া, দ্বিপ্রহর ও অস্ত যাওয়ার সময়), মসজিদে বেচা-কেনা না করা। মসজিদে শুধু শুধু ঢাল তলোয়ার বের অথবা অন্য কোন অস্ত্র বের না করা। মসজিদে হারানো বস্তুর ঘোষণা না করা। মসজিদে উচ্চস্বরে কথা না বলা। মসজিদে বসার স্থান নিয়ে কারও সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত না হওয়া। সামনের কাতারে জায়গা না থাকলে অথবা ঢুকে অন্য মুসল্লিদের কষ্ট না দেয়া। মসজিদে ঢুকে কোন নামাজীর সামনে দিয়ে অতিক্রম না করা। মসজিদে থুথু কাশি বা নাকের ময়লা না ফেলা। মসজিদে আঙ্গুল না ফুটানো। মসজিদে শরীরের কোন অঙ্গ দ্বারা খেলাধুলা না করা। মসজিদে পাক পবিত্র থাকা। সঙ্গে করে কোন খুব ছোট শিশু বা পাগলকে না নেয়া। মসজিদে থাকাকালীন আল্লাহর বন্দেগী বা জিকিরে লিপ্ত থাকা। (মা’আরিফুল কুরআন)। তাড়াহুড়ো না করে ধীরস্থিরভাবে মসজিদে যাওয়া।