করোনার চরম দুঃসময়ে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে জাতির মেরুদন্ড শিক্ষা কার্যক্রম। সেই ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ বছরও খোলার কোন আলামত এখন অবধি অনিশ্চিত। বিপর্যস্ত শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলাবদ্ধ নিয়মিত পাঠদান থেকে শুরু করে মেধা ও মনন যাচাইয়ের পরবর্তী ধাপ পরীক্ষা গ্রহণ করা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতা। গত বছর কোনমতে মাধ্যমিক পরীক্ষা সম্পন্ন করা গেলেও আর কোন উত্তরণ পর্বের মান নির্ণয় অসম্ভবের পর্যায়ে চলে যায়। পরবর্তী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা থেকে শুরু করে শ্রেণী পর্যায়ের কোন পরীক্ষা সংক্রান্ত বিধি অনুসরণ করা যায়নি। অর্থাৎ একটা বছরই শুধু নয়, নতুন শিক্ষাবর্ষও যে কিভাবে কাটবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও তা অজানা। করোনার দাপট যে মাত্রায় দ্রুততার সঙ্গে ছড়াচ্ছে তা প্রথমবারের তুলনায় ভয়াবহ এবং মারাত্মক। চলতি বছরের ৩১ মার্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার কথা থাকলেও তা অনিশ্চয়তার জাঁতাকলে এখন অবরুদ্ধ। ফলে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর বিপাকে পড়া ছাড়াও চলতি বছরের মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা পড়েছে এক অবর্ণনীয় দুর্ভোগে। কারণ, তারা গত বছর মাত্র ৩ মাস ক্লাস করতে পারলেও গত ১ বছর যাবত ঘরে বসে অনলাইনভিত্তিক শ্রেণী পাঠে মনোযোগ দিতে পেরেছে কোনরকমে। প্রযুক্তির বলয়ে নতুন এই শিক্ষা পদ্ধতি কতখানি যৌক্তিক আর সর্বজনীন হয়েছে, তা প্রশ্নবিদ্ধ। অজানা এক পদ্ধতিতে অনভিজ্ঞ এবং প্রশিক্ষণ ছাড়া শিক্ষকরাও হিমশিম খেয়েছেন ছাত্রছাত্রীদের মনোযোগ কাড়তে। সে সব নিয়ে ইতোমধ্যে বহু আলোচনা-পর্যালোচনার অবতারণা ছাড়াও ব্র্যাকের সরাসরি এক জরিপে এর নেতিবাচক প্রভাবও উঠে এসেছে। যেমনÑ শিক্ষা লাভ কতখানি হয়েছে তা বলার চেয়েও শিশু-কিশোরদের তথ্য-প্রযুক্তিতে মারাত্মক আসক্তির ব্যাপারটাও দুঃসহ চিত্রে উঠে এসেছে। সেখান থেকে মুক্তির নিশানা সময়ের অপেক্ষায়। আর এই বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা প্রতিদিন পার করছে এক অসহায় সময়। সারাদেশের ২৩ লাখ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কার্যক্রমের সুনির্দিষ্ট আভাস না পাওয়া পর্যন্ত অন্তহীন দুঃসময় অতিক্রম করছে। সেখানে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের অবস্থা সবচেয়ে করুন। তাদের গবেষণাগারে বিভিন্ন ব্যবহারিক পরীক্ষায় সম্পৃক্ত হতে হয়। সেটা তো কোনভাবেই সম্ভব হয়নি। তার ওপর কোচিং বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরীক্ষা প্রস্তুতির ধাপ অতিক্রম করাও ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও নির্বিকার। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের দিশেহারা হওয়ার সময় এখনও আসেনি। বিদ্যালয় খোলার পরপরই ৬০টি কর্মদিবস তাদের শ্রেণী পাঠ চালু থাকবে। এরপরও ১৫ দিন সময় দেয়া হবে পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য। এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে। তার ওপর ভিত্তি করেই মাধ্যমিকের বোর্ড পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরি করা হবে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও আশ্বস্ত করেন চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়নের ব্যবস্থা নিয়েছি এবং সেগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়েও দেয়া হয়েছে। পরীক্ষা আয়োজনে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলেও করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিই নির্ধারণ করবে পরীক্ষার সময়কাল।