ছনি চৌধুরী, হবিগঞ্জ থেকে :
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার মুগকান্দি গ্রামে মসজিদের কমিটি ও ইমাম পরিবর্তন নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে লন্ডন প্রবাসীসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক লোকজন। শনিবার (১২ আগস্ট) ফজরের নামাজের পর এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১০০ রাউন্ড গুলি ও ২৫ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষ এড়াতে এলাকাজুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ইউনিয়নের মুগকান্দি জামে মসজিদের কমিটি গঠন ও ইমাম পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের বিরোধ চলছিল। এক পক্ষ বর্তমান ইমান ফরিদ আখঞ্জির পরিবর্তন চায়। অপর পক্ষ ওই ইমামের পক্ষে অবস্থান নেয়। এ অবস্থায় শুক্রবার জুম্মার নামাজে সাতকাপন ইউপি চেয়ারম্যান মুগকান্দি গ্রামের আবদাল মিয়া আখঞ্জি গ্রাপের সোহেল মিয়ার সাথে একই গ্রামের শফিক মাস্টারের বাকবিতন্ডা হয়। এ বাকবিতন্ডার জের ধরে বাদ জুম্মা উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ওই সংঘর্ষে আহত হন অন্তত ৫০জন। খবর পেয়ে বাহুবল-নবীগঞ্জ সার্কেল সিনিয়র এসএসপি রাসেলুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ সংঘর্ষস্থলে পৌঁছে ১০ রাউন্ড শটগানের গুলি ছুড়ে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রায় দু’ঘণ্টার সংঘর্ষে উভয় পক্ষে অর্ধশতাধিক লোক আহত হন। পরে বাহুবল উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ নেন। তিনি উভয় পক্ষকে শুক্রবার রাতে অফিসে আসার আহবান জানালে লন্ডনি বাড়ীর পক্ষ আসলেও আখঞ্জি বাড়ির পক্ষের লোকজন আসেননি। রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে উভয় পক্ষের আট জনকে আটক করে।শুক্রবারের সংঘর্ষের জের ধরে শনিবার ভোরে ফজরের নামাজের পর উভয় পক্ষ আবারও সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ঘন্টাব্যাপি সংঘর্ষে দুইজন নিহত হন এবং আহত হন শতাধিক লোক। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে উভয় পক্ষকে ছত্র ভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে নিহতরা হলেন পূর্ব মুগকান্দি গ্রামের লন্ডনি বাড়ির ছাবু মিয়ার ছেলে লন্ডন প্রবাসী কবির মিয়া (৪৫) এবং আখঞ্জি বাড়ির পক্ষের মৃত মুসলিম মিয়ার ছেলে মতিন মিয়া (৫০)। অন্যান্য আহতদের মাঝে ফরিদ মিয়া তালুকদারের পুত্র আজাদ (২৬), মৃত আপ্তান মিয়ার পুত্র সুহেল মিয়া (৩০), মৃত আমির হোসেন আখঞ্জীর পুত্র সেলিম আখঞ্জী (৩০), আব্দুল আউয়াল ফটিকের পুত্র মহিবুর রহমান (২৫), মৃত সিকান্দর উল্লার পুত্র সমাই মিয়া (৩৫), মৃত ছন্দু মিয়ার পুত্র রুনু মিয়া (৫০), আব্বাস উদ্দিনের পুত্র সানু মিয়া (৬০), মৃত আমির হোসেনের পুত্র সিজিল মিয়া (২৮), কাছন মিয়ার পুত্র নূর উদ্দিন (১৮), সুলতান মিয়ার পুত্র নূর মিয়া (৬০), আব্দুল সোবহানের পুত্র আরশ মিয়া আখঞ্জী (৫৫), উস্তার মিয়ার পুত্র তোফায়েল (২৫), হাজী ছন্দু মিয়ার পুত্র বাবুল মিয়া (৩৫), সমাই মিয়ার পুত্র রুবেল (১৮), মৃত সিকান্দর উল্লার পুত্র কাছন মিয়া (৫০), আরজ মিয়ার পুত্র সুজন আখঞ্জী (২৭), কাপ্তান মিয়া আখঞ্জীর পুত্র সোহান আখঞ্জী (২২), সুলতান মিয়ার পুত্র জাহাঙ্গীর মিয়া (৬০), সানু মিয়ার পুত্র জাহিদ মিয়া (২৮), মৃত মতির মিয়ার পুত্র মমিন মিয়া (২৭), মৃত আবিদ আলীর পুত্র জুনাব আলী (৫০), রুনু মিয়ার পুত্র রাজিব (১৩) ও রাফিন (১৫), মোজাম্মেল উদ্দিনের পুত্র মোঃ জসিম (৩৮), জাহাঙ্গীর আখঞ্জীর পুত্র মোছাব্বির আখঞ্জী (২০), কুরুশ মিয়ার পুত্র রাজন মিয়া (২২), ফুল মিয়ার পুত্র আনোয়ার মিয়া (৫৫), এএসআই সুহেল শাহ (৩৩), কনস্টেবল জাহিদ খান (২৬) ও আনোয়ার হোসেন (২০) প্রমুখ। বাহুবল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই জানান, মসজিদের ইমাম নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু লোকজন সেই উদ্যোগে সাড়া না দিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পুলিশ প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা যদি বারবার সেখানে না যেতেন তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিত। বাহুবল-নবীগঞ্জ সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রাসেলুর রহমান বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে ১০০ রাউন্ড শটগানের গুলি ও ২৫ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে এখনও মামলা হয়নি। তবে উভয় পক্ষ মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে।