কাজিরবাজার ডেস্ক :
পবিত্র মাহে রমজানের এখন আমরা মাঝামাঝি অবস্থায়। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা করোনাভাইরাসে দিশাহারা দুনিয়াবাসীর পক্ষ থেকে সিয়াম সাধনা কবুল করুন। এ মাস কোরান নাজিলের, কুরআন তিলাওয়াতের কুরআনকে হৃদয়ের সবচেয়ে কাছে অনুভব করার। আজ এখানে পবিত্র কুরআনুল কারীমের মধুময় সূরা ফাতিহা সম্পর্কে কিছু আলোচনা করব যা আমাদের চিন্তা চেতনা ও ইখলাসকে শানিত করবে। একজন মুসলমানের কাছে সূরা ফাতিহা সম্বন্ধে প্রয়োজনীয় ধারণা থাকা উচিত। সূরা ফাতিহা কুরআনের একটি বিশেষ সূরা। প্রথমত এ সূরা দ্বারাই পবিত্র কুরআন আরম্ভ হয়েছে এবং এ সূরা দ্বারাই সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত নামাজ আরম্ভ হয়। অবতরণের দিক দিয়েও ‘পূর্ণাঙ্গ সূরা’ রূপে এটিই প্রথম নাজিল হয়। সূরা ‘ইকরা’ ‘মুযাম্মিল’ ও সূরা মুদ্দাসিরের ক’টি আয়াত অবশ্য সূরা ফাতিহার পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ সুরা হিসেবে এ সুরার অবতরণই সর্বপ্রথম।
শানে নুযুল বা ঐতিহাসিক পটভূমি: আমর বিন শার্জিল (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (স.) হযরত খাদীজা (রাদি:) কে বললেন: ‘আমি একটি আওয়াজ শুনেছিলাম- যা কিনা ‘ইকরা’ বা পড়ো তোমার প্রভুর নামে।’ যখন এ সংবাদ ওয়ারাকা বিন নাওফেলকে জানানো হলো, তিনি পবিত্র আওয়াজটি মনোযোগের সঙ্গে শুনতে পরামর্শ দিলেন। এরপর একদিন জিবরাঈল ফেরেশতা (আ:) এসে বর্ণনা করলেন: বিসমিলাহির রহমানির রহিম, আলহামদু লিলাহি রাব্বিল আ’লামিন… (পূর্ণ সূরা ফাতিহা)’-খাজাঈনুল ইরফান। এভাবেই সূরাটি নাজিল হলো।
সূরা ফাতিহা একটি প্রার্থনামূলক সূরা-যা বান্দাদের শিখিয়ে দেয়া হয়েছে এবং এ’টি কুরআনের সার সংক্ষেপ বিশেষ। এ সূরায় সমগ্র কুরআনের সারমর্ম সংক্ষিপ্তাকারে বলে দেয়া হয়েছে। কুরআনের অবশিষ্ট সূরাগুলো প্রকারান্তরে এ সূরারই বিস্তৃত ব্যাখ্যা। তাই এ সূরাকে উম্মুল কুরআন, উম্মুল কিতাব, কুরআনে আজীমসহ প্রায় বিশটিরও অধিক নামে অভিহিত করা হয়।- (খাজাইন, কুরতুবী)।
হযরত রাসূলে কারীম (স.) ইরশাদ করেছেন: যার হাতে আমার জীবন-মরণ, আমি তার শপথ করে বলছি, সূরা আল ফাতিহার দৃর্লভ মর্যাদাপূর্ণ দৃষ্টান্ত তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল প্রভৃতি অন্য কোন আসমানী কিতাবে তো নেই-ই এমনকি পবিত্র কুরআনেও এর দ্বিতীয় নেই।-(মা’আরিফুল কুরআন)।
বিষয়বস্তু আগেই বলেছি, সূরা ফাতিহা একটি পবিত্র প্রার্থনার সমষ্টি, আল কুরআন এর বাস্তব উত্তর। আলাহর পথে বান্দার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সেতুবন্ধন হলো এ সূরা। বান্দা তার মনিবের শেখানো দোয়ার বদৌলতে মুনাজাত করার সুযোগ পেয়েছে এই সূরার মাধ্যমে। এ যেন সরকারীভাবে দেয়া দরখাস্তের ফরমে দস্তখত করার মতোই সুযোগ।
সূরা ফাতিহার ফজিলত: তাফসীরের বিভিন্ন গ্রন্থসমূহে সূরা ফাতিহার বহুবিধ ফজিলত ও মর্তবার কথা বলা হয়েছে। মাশাইখগণ লিখেছেন, পূর্ণ বিশ্বাস সহকারে সূরা ফাতিহা পাঠ করলে যে কোন রোগ হতে মুক্তি পাওয়া যায়। হাদীসে এ সূরাকে শিফা বা নিরাময় বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে।- (কুরতুবী)। সিহাহ সিত্তায় দেখা যায়, সাহাবাগণ শাপ বিচ্ছুর দংশন করা রোগীর উপর এবং মৃগী ও পাগল রোগীর ওপর সূরা ফাতিহা পড়ে দম করতেন।
বর্ণিত আছে, এ সূরার ৭টি আয়াতের বরকতে মুমিনদের জন্য আলাহ আপন অনুগ্রহে দোজখের ৭টি দরজা বন্ধ করে দেন। শয়নকালে সূরা ফাতিহা, ইখলাস, ফালাক ও না’স তিন তিনবার করে পড়লে সকল প্রকার বিপদাপদ হতে নিরাপদ থাকা যায়। (আগামীকাল সমাপ্য)।